অন্তর্বর্তী সরকারের দুই ‘ছাত্র উপদেষ্টা’ মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করেছে গণ অধিকার পরিষদ। তারা পদত্যাগ না করলে গণ-অভ্যুত্থানের সব শক্তিকে নিয়ে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন দলটির নেতারা।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
আরো পড়ুন
মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধানের মন্তব্য গুরুতর : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও এই গণ-অভ্যুত্থানের অর্জন। আমরা শুরু থেকে এই সরকারকে একতরফাভাবে সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু সরকার সবার সঙ্গে ইনসাফ না করে বরং গণ-অভ্যুত্থানের একটি গোষ্ঠী বা পক্ষের সরকার হতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছে। যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৩ জন ছাত্র উপদেষ্টা ছিলেন, তাদের একজন পদত্যাগ করে একটি দলের প্রধান হয়েছেন, সে ক্ষেত্রে বাকিরাও সরকারে থাকার নৈতিকতা হারিয়েছেনে। আর দল গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় কি পদত্যাগকৃত উপদেষ্টা সম্পৃক্ত ছিলেন না? অবশ্যই ছিলেন। আর ৩ জন ছাত্র উপদেষ্টার একই নেক্সাস। সুতরাং আমরা সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে বাকি ২ জন ছাত্র উপদেষ্টারও পদত্যাগ দাবি করছি। এ ছাড়া ছাত্ররা যেহেতু দল গঠন করেছে। এ ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী বা সমন্বয়কের কোনো অস্তিত্ব বিদ্যমান নেই বলে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে সরকারের সবে সেক্টর ও দপ্তর থেকে ছাত্র প্রতিনিধিদের পদত্যাগ করা অতীব জরুরি।’
আরো পড়ুন
আইনজীবী হতে চান আঁখি আলমগীর!
তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসায় আউটসোর্সিং নিয়োগ নিয়ে গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশিত করা হয়েছে। এটা স্থায়ী নিয়োগের প্রাথমিক ধাপ।
২০২৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যম প্রকাশিত হয়, প্রায় দুই হাজার পাঁচ শ আউটসোর্সিং কর্মী ঢাকা ওয়াসায় বিভিন্ন বিভাগ ও পদে কর্মরত আছেন। ওয়াসা তাদের চাকরির সুরক্ষায় বয়স শিথিল করে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের জন্য অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগে।
এ ক্ষেত্রে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ হলেও পরবর্তীতে স্থায়ী করার সুযোগ আছে। সুতরাং এই নিয়োগ অনৈতিক নিয়োগ। এই নিয়োগের তদন্তসহ সরকারের সকল দপ্তরে নিয়োগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের দাবি করছি।’
রাশেদ খান বলেন,‘ আমরা মনে করি, রাষ্ট্র সংস্কার করতে হলে সবার আগে উপদেষ্টা পরিষদের পুনর্গঠন করতে হবে। এই লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদের পুনর্গঠন জরুরি। যেহেতু এই উপদেষ্টা পরিষদে বিতর্কিত ব্যক্তিরা রয়েছেন। হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হওয়া জরুরি। গণ অধিকার পরিষদ গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও রোডম্যাপ দাবি করছে। আমরা মনে করি, প্রধান উপদেষ্টার গতকালের বক্তব্য অনুযায়ী ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার জরুরি। এ জন্য দরকার জাতীয় ঐকমত্য। কিন্তু উপদেষ্টাদের বক্তব্যে জাতীয় ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি, ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ ও সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন ‘গভীর উদ্বিগ্ন’ বলে দিল্লিতে একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন মার্কিন ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড। আমরা এই বক্তব্যোর তীব্র নিন্দা জানাই। বাংলাদেশে কোনো ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ নেই, সংখ্যালঘুদের ওপরে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটেনি। বরং ইতোপূর্বে ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করছে, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা দিতে পারছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান, উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান প্রমুখ।