সিরামিকের বাজার ৮ হাজার কোটি টাকা

সজীব আহমেদ
সজীব আহমেদ
শেয়ার
সিরামিকের বাজার ৮ হাজার কোটি টাকা
একটি দোকানে থরে থরে সাজানো সিরামিকের পণ্য। ছবি : লুৎফর রহমান

বাংলাদেশের সিরামিকশিল্পের সামনে বিরাট সম্ভাবনা। দেশে উৎপাদিত সিরামিক এখন চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এতে এটি বৃহৎ শিল্পে রূপ নিয়েছে। দেশে গড়ে উঠেছে ৭০টি প্রতিষ্ঠান।

তাদের বিনিয়োগ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা।

সিরামিক পণ্যের দেশীয় বাজারের আকার আট হাজার কোটি টাকা। বছরে রপ্তানি হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকার বেশি সিরামিক পণ্য। এই খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ জড়িত।

গত ১০ বছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০০ শতাংশ। এখন বছরে প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ হারে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বলছেন, শৌখিনতা ছাড়িয়ে সিরামিক এখন জীবনের অত্যাবশ্যকীয় অনুষঙ্গ। বাংলাদেশে মূলত এখন তিন ধরনের সিরামিক পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে।

টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার। সিরামিক দিয়ে তৈরি হচ্ছে বাড়িঘরে ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন ধরনের টাইলস, স্যানিটারিওয়্যার (বেসিন, কমোড), ফুলের টব, মটকা, কিচেনওয়্যার, টেবিলওয়্যার, ডিনার সেট, টি সেট, কফি মগ, বাটি থেকে শুরু করে গৃহস্থালির বিভিন্ন জিনিস।

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) তথ্য মতে, এক যুগ আগেও বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো বিভিন্ন সিরামিক পণ্য। এখন বাংলাদেশে উৎপাদিত সিরামিক পণ্য দেশের বাজারের প্রায় ৮৫-৯০ শতাংশ চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

দেশে বর্তমানে ৭০টি প্রতিষ্ঠান সিরামিক পণ্য বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করছে।

এর মধ্যে ৩২টি প্রতিষ্ঠান টাইলস উৎপাদন করছে। ২০টি প্রতিষ্ঠান টেবিলওয়্যার (তৈজসপত্র) ও ১৮টি প্রতিষ্ঠান স্যানিটারিওয়্যার উৎপাদন করছে। স্থানীয় বাজারে এখন বছরে আট হাজার কোটি টাকার সিরামিক পণ্য বিক্রি হয়। বছরে এখন রপ্তানিও হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকার বেশি সিরামিক। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৮০০ কোটি টাকা। তবে বর্তমানে গ্যাসসংকটের কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে উৎপাদিত সিরামিক পণ্যের গুণগত মান ভালো হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ইউরোপসহ বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। সরকার সিরামিক পণ্য রপ্তানিতে আরো সুনজর দিলে রপ্তানি বাড়বে। দেশের অর্থনীতিতে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে এই খাত।

এ ব্যাপারে বিসিএমইএর সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০০০ সালের আগে সিরামিকশিল্পে তেমন বিনিয়োগ ছিল না। এই খাতে মূলত ২০০০ সাল থেকে বিনিয়োগ শুরু হলেও ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে ২০০৮ সালের পর। একসময় সিরামিকশিল্পটি আমদানিনির্ভর ছিল, এখন দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ চাহিদা দেশে উৎপাদিত সিরামিকেই পূরণ হচ্ছে। এই খাতে বিনিয়োগ এখন ১৫ হাজার কোটি টাকা। ’

তিনি বলেন, ‘একসময় সিরামিক পণ্য আমদানিতে আমাদের বিপুল পরিমাণ বৈদেশি মুদ্রা ব্যয় হতো। এখন আমরা সিরামিক পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে। ’

রপ্তানির বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘আমাদের উৎপাদিত সিরামিক পণ্য এখন ইউরোপসহ বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। প্রতিবছরই রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে। একসময় সিরামিক পণ্যের মধ্যে শুধু টেবিলওয়্যার রপ্তানি হতো। গত ২০২০ সাল থেকে টেবিলওয়্যারের পাশাপাশি টাইলস ও স্যানিটারিও রপ্তানি হচ্ছে। টেবিলওয়্যার পণ্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ প্রণোদনা সুবিধা দিয়েছে সরকার। ’ সিরামিকের সব পণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ প্রণোদনা সুবিধা দিলে রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে বলেও তিনি জানান।

কাঁচামাল আমদানির বিষয়ে বিসিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘সিরামিক পণ্যের শতভাগ কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। মালয়েশিয়া, চীন, ভারত, ব্যাংকক, ইতালি থেকে কাঁচামাল আমদানি করা হয়। সিরামিক পণ্য উৎপাদনে কাঁচামালের মধ্যে উপাদান শুল্ক এখনো ৩০-৩২ শতাংশ। এই উচ্চ শুল্কের কারণে উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। শুল্কহার কমানো হলে আমরা আরো কম দামে বাজারে সিরামিক পণ্য সরবরাহ করতে পারব। ’

বিসিএমইএর সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশে সিরামিকশিল্পের সম্ভাবনা অনেক ভালো। দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ছোট পরিসরে রপ্তানি শুরু হয়েছে। সামনে রপ্তানির পরিমাণ ব্যাপকভাবে বাড়বে। এখন আমরা যদি আমাদের উৎপাদনটি ঠিক রাখতে পারি, তাহলে সামনে আমাদের প্রবৃদ্ধি আরো বাড়বে। গত ১০ বছরেই সিরামিক খাতে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘সিরামিক পণ্যের কাঁচামাল আমাদের আমদানি করে আনতে হয়। কিছু কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক এখনো অনেক বেশি। এগুলোতে যদি শুল্ক কমানো যায়, তাহলে এই খাতটি আরো উন্নতি করবে। ’

দেশে সিরামিকশিল্পের গোড়াপত্তন

১৯৬০ সালে পোরসেলিন আর সিরামিকের বাসনপত্র উৎপাদনকারী তাজমা সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের মাধ্যমে এ দেশে ব্যবসা শুরু হয়। এখন বৃহৎ শিল্পগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। সরাসরি নিয়োজিত কর্মীর পাশাপাশি সংযুক্ত শিল্প মিলিয়ে পাঁচ লাখের ওপর মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্যুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারিওয়্যার ফ্যাক্টরি (বিআইএসএফ) দেশে ১৯৭৭ সালে প্রথম সিরামিক টাইলস ও স্যানিটারি পণ্য বানানো শুরু করে।

বেসরকারিভাবে ১৯৯৩ সালে মধুমতি সিরামিক প্রথম এ খাতে বিনিয়োগ করে। এরপর তাইওয়ানের বিনিয়োগে ফু-ওয়াং সিরামিক, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগে আরএকে সিরামিকস, চায়না-বাংলা সিরামিকসহ (সিবিসি) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান টাইলস উৎপাদন শুরু করে।

ছোট থেকে দ্রুত বৃহৎ শিল্প

দেশে আবাসনশিল্পের বিকাশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বড় হচ্ছে সিরামিকের বাজার। সাশ্রয়ী মূল্য ও টেকসই হওয়ায় নির্মাণ, গৃহস্থালি এবং শোভাবর্ধক কাজে সিরামিকসের পণ্যসামগ্রীর ব্যবহার বহুগুণ বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে এ খাতে বিনিয়োগ বেড়ে এখন ১৫ হাজার কোটি টাকা। এই শিল্পে এখন দেশের শীর্ষস্থানীয় গ্রুপগুলো বিনিয়োগ করছে। সম্ভাবনাময় এ খাত উদ্যোক্তাদের মধ্যে আশার আলো জাগিয়েছে, যার ফলে ছোট এই খাতটি দ্রুত সময়ের মধ্যে বৃহৎ একটি শিল্পে পরিণত হচ্ছে।

সিরামিকশিল্পে নেতৃত্বে যারা

বিসিএমইএর তথ্য মতে, দেশে সিরামিক খাতে শীর্ষে রয়েছে আকিজ সিরামিক, আরকে সিরামিক, গ্রেটওয়াল সিরামিক, সিবিসি, এক্স, শেলটেক, ডিবিএল, স্টার ও ফার সিরামিক। বর্তমানে সিরামিকশিল্পে মার্কেট শেয়ারের দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে আকিজ সিরামিক। দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে আরকে। তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে এক্স সিরামিক।

পণ্যভেদে বাজার অংশীদারির শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বিচার করলে টেবিলওয়্যারে শীর্ষ অবস্থানে আছে বেক্সিমকো গ্রুপের শাইনপুকুর সিরামিকস। এরপর মুন্নু সিরামিকস, ফার সিরামিকসসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য বাজার অংশীদারি রয়েছে।

সিরামিকশিল্পের চ্যালেঞ্জ

সিরামিক খাতে বর্তমানে ৭০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫টির বেশি বৃহৎ কারখানা  চার-পাঁচ মাস ধরে গ্যাসসংকটে ভুগছে। টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার কারখানাগুলোতে দৈনিক আট থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত প্রয়োজনীয় গ্যাসের চাপ থাকছে না। ফলে কারখানাভেদে উৎপাদন ৪০-৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে, যার কারণে কম্পানিগুলো লোকসান গুনছে।

এই বিষয়ে বিসিএমইএর সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘সিরামিক পণ্য উৎপাদনের প্রধান জ্বালানি হলো গ্যাস। সম্প্রতি গ্যাসসংকটের কারণে আমাদের কারখানার উৎপাদন প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে সম্ভাবনাময় এই খাত একসময় হুমকির মুখে পড়ে যাবে। তাই এই খাতের কারখানাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ ও স্থানীয় বাজার দখলে কাঁচামাল ও উপকরণের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক কমানো যেতে পারে। বিদেশ থেকে তৈরি সিরামিক পণ্যের আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো ও সিরামিকের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমাতে হবে। এ ছাড়া এই শিল্পে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি করলে এই শিল্পের আরো প্রসার হতো বলেও তিনি জানান।

স্যানিটারিতে পিছিয়ে দেশীয় ব্র্যান্ড

সম্প্রতি রাজধানীর সিরামিকের সবচেয়ে বড় বাজার বাংলামোটর ঘুরে দেখা গেছে, দেশে উৎপাদিত সিরামিক পণ্যের পাশাপাশি আমদানি করা বিদেশি ব্র্যান্ডের সিরামিক পণ্য বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন দেশীয় ব্র্যান্ডের টাইলসের মান ভালো হওয়ায় ৮৫ শতাংশের বেশি ক্রেতা এখন দেশীয় ব্র্যান্ডের টাইলস কিনছেন। তবে স্যানিটারি পণ্যগুলোর মধ্যে এখনো চায়না ব্র্যান্ডের দিকেই নজর বেশি ক্রেতাদের।

রাজধানীর বাংলামোটরের নিউ আরকে টাইলস অ্যান্ড স্যানিটারির দোকানের সেলস এক্সকিউটিভ ইমন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিদেশি-দেশি কম্পানির টাইলসের মধ্যে মানের দিক দিয়ে এখন প্রায় সব একই। তবে বিদেশি ব্র্যান্ড থেকে দেশীয় ব্র্যান্ডের দামও কিছুটা কম। এতে দেশীয় ব্র্যান্ডের টাইলস বেশি বিক্রি হচ্ছে। আগে ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মতো বিদেশি ব্র্যান্ডের টাইলস বিক্রি হলেও চলমান ডলার পরিস্থিতির কারণে বিদেশি টাইলস আমদানি হচ্ছে না, এতে একতরফাভাবে দেশীয় টাইলস বিক্রি হচ্ছে। ’

তিনি বলেন, ‘দেশীয় কম্পানিগুলো উন্নত মানের স্যানিটারি পণ্য উৎপাদন করলেও, ক্রেতাদের পছন্দ চায়না ব্র্যান্ডের স্যানিটারিতেই। ফলে স্যানিটারি পণ্যগুলো এখনো চায়না ব্র্যান্ডের দখলে আছে। ’ 

বাংলামোটরের নিউ আরকে টাইলস অ্যান্ড স্যানিটারি দোকানে কিনতে আসা গ্রিন রোডের এক ব্যবসায়ী সৈয়দ মামুন রেজা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নতুন বাড়ি করেছি। এখন ফ্লোরের জন্য টাইলস পছন্দ করতে এসেছি। আগের বাসায় দেশি ব্র্যান্ডের টাইলস ব্যবহার করেছি, মান খারাপ না, তাই নতুন বাসায়ও দেশি ব্র্যান্ডের টাইলস কিনব। ’

তিনি বলেন, ‘স্যানিটারির ক্ষেত্রে চায়নার কিছু ব্র্যান্ড আমার পছন্দ। তাই চায়না কম্পানিগুলোর স্যানিটারি পণ্য কেনার ইচ্ছা। ’

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

বিবিসি
বিবিসি
শেয়ার
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
সংগৃহীত ছবি

বিশ্বব্যাপী মার্কিন পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার প্রথম দিনে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

বুধবার ব্রেন্টের অপরিশোধিত তেলের দাম কমে ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে, যা করোনাকালে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর সর্বনিম্ন।

বিশ্লেষক অ্যাশলে কেলি বলছেন, হোয়াইট হাউস চায় তেলের দাম আরো কমে যাক। কারণ এটাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভজনক হবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ব্যাংকের টাকা লোপাট করে কেউ পালাতে পারবে না : গভর্নর

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ব্যাংকের টাকা লোপাট করে কেউ পালাতে পারবে না : গভর্নর
সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘ব্যাংকের টাকা লোপাট করে কাউকে পালিয়ে যেতে দেওয়া হবে না।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে, যাতে কেউ লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করতে না পারে। অনিয়ম, কেলেঙ্কারি ও সুশাসনের ব্যর্থতার কারণে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্য প্রয়োজন সংস্কার।’

বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর বিআইবিএম কার্যালয়ে দশম বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

গভর্নর বলেন, সংস্কারের জন্য গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর টাস্কফোর্স গঠন, নতুন আইন প্রবর্তন ও ব্যাংক কম্পানি আইনের মতো বিদ্যমান আইন সংশোধনসহ ব্যাংকিং খাতের একগুচ্ছ সংস্কারের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলস্বরূপ লুটপাট করা কিছু ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও কোমর ভেঙে আছে বেশ কিছু ব্যাংকের।
 
আর সব ব্যাংকের অবস্থা খারাপ নয়, তবে যেগুলো খারাপ সেগুলোর অবস্থা খুব খারাপ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংকের টাকা লোপাট করে আর কাউকে পালিয়ে যেতে দেওয়া হবে না এবং ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আরো বলেন, ‘গ্রাহকের স্বার্থে ব্যাংকের বোর্ডে হস্তক্ষেপ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরো একটি ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দেওয়া হবে।

এ সময় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘ব্যাংকের প্রকৃত মালিক গ্রাহকরাই। তাই তাদের আস্থার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। না হলে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে না এই খাত।’

মন্তব্য

বসুন্ধরা গ্রুপে বিনিয়োগে আগ্রহী ফিনল্যান্ড

অনলাইন প্রতিবেদক
অনলাইন প্রতিবেদক
শেয়ার
বসুন্ধরা গ্রুপে বিনিয়োগে আগ্রহী ফিনল্যান্ড
ছবি: কালের কণ্ঠ

ফিনল্যান্ডের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে, বিশেষ করে বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, স্বাস্থ্য ও টেকসই উন্নয়ন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আজ বুধবার (৯ এপ্রিল) বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল হেডকোয়ার্টারে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত কিমো লাহদেভির্তা এ আগ্রহের কথা জানান।

তিনি বলেন, “বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে ইতোমধ্যেই কিছু ফিনিশ কোম্পানির সহযোগিতামূলক ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে, আমরা সেটি আরো সম্প্রসারিত করতে আগ্রহী।”

রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিজনেস ফিনল্যান্ড-এর প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন প্রযুক্তি ও শিল্প খাতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।

বসুন্ধরা গ্রুপের সেক্টর-সি-এর চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) শাহেদ জাহিদ প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন কুলব্রুক প্রজেক্ট ডিরেক্টর শ্রীনিবাসন শ্রীরামুলু, এলেম্যাটিক-এর সন্দীপ কুমার, কোনক্রেইনস-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর রতন বিশ্বাস, মিরাসিস -এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর অরিন্দম দাস সরকার, রাউটা ডিজিটাল-এর সিইও কুমার অভিজিৎ, ওয়ার্টসিলা বাংলাদেশের সাইফুল ইসলাম, ওয়্যারপাস-এর মারুতি মাল্লেপল্লি এবং ফিনল্যান্ড দূতাবাস ও বিজনেস ফিনল্যান্ড-এর অন্যান্য প্রতিনিধিরা।

মিডিয়ার সঙ্গে আলাপকালে রাষ্ট্রদূত জানান, প্রতিনিধি দল আগের দিন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেছে। আজ আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছি।

আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল প্রযুক্তি, টেকসই নির্মাণ, প্রকৌশল, স্বাস্থ্য খাত এবং টেকসই উন্নয়ন।

বিনিয়োগ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখনই কিছু নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।”

বৈঠক শেষে বসুন্ধরা গ্রুপের সিওও শাহেদ জাহিদ জানান, ফিনল্যান্ডের প্রতিনিধি দল সিমেন্ট, পেপার এবং প্রি-কাস্ট বিল্ডিংসহ বেশ কিছু খাতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে। সিমেন্ট খাতে ফসিল ফুয়েলের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি প্রক্রিয়া চালুর বিষয়ে প্রযুক্তি স্থানান্তরের প্রস্তাব তারা দিয়েছেন, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।

তিনি আরো বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশে স্বল্পসুদে অর্থায়নের অভাব রয়েছে। ১৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা দাঁড় করানো কঠিন। ফিনল্যান্ড সরকার দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ কাঠামোর মাধ্যমে এ বিষয়ে সহায়তা করতে পারে। প্রতিনিধি দলটি আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে, তারা স্বল্প সুদে ঋণ ও যৌথ বিনিয়োগের সুযোগ অনুসন্ধান করবে। 

সভায় বসুন্ধরা গ্রুপের সিনিয়র ডিএমডি মোস্তাফিজুর রহমান, ডিএমডি কে এম জাহিদ উদ্দিনসহ গ্রুপের অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

 

মন্তব্য

জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমবে, মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে ১০.২ শতাংশে : এডিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমবে, মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে ১০.২ শতাংশে : এডিবি
ছবি: কালের কণ্ঠ

চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৯ শতাংশে নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তবে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বাড়বে ৫.১ শতাংশে। বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এডিবির ঢাকা অফিসে প্রকাশিত ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) এপ্রিল ২০২৫’ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি বাড়লেও রাজনৈতিক উত্তরণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি, শিল্প খাতে অস্থিরতা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা প্রবৃদ্ধির গতি কমিয়েছে।

২০২৪ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৪.২ শতাংশ।

বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জেয়ং বলেন, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি সহনশীল রয়েছে। এই সহনশীলতা আরও শক্তিশালী করা সম্ভব কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে।

তিনি আরো বলেন, তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, আর্থিক খাতের সুশাসন এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদার করা যেতে পারে।

এডিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতি ২০২৪ অর্থবছরের ৯.৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৫ অর্থবছরে ১০.২ শতাংশে পৌঁছাবে। পাইকারি বাজারে প্রতিযোগিতার অভাব, বাজার সংক্রান্ত তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। তবে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি হিসাবের ঘাটতি জিডিপির ১.৪ শতাংশ থেকে কমে ০.৯ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এডিবি বলছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে ভোগ ও বিনিয়োগে কিছুটা গতি আসবে।

তবে সংকোচনমূলক আর্থিক ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার কারণে এ গতি সীমিত থাকবে। বিশ্ববাজারে শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাবও বাংলাদেশের রপ্তানি ও প্রবৃদ্ধিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। সরবরাহপক্ষে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, আর্থিক খাতের ঝুঁকি এবং ক্রয়ক্ষমতার হ্রাসের কারণে সেবাখাতের প্রবৃদ্ধি মন্থর হবে। বারবার বন্যার কারণে কৃষি খাতেও প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেতে পারে। তবে রপ্তানি খাতের সহায়তায় শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি সামান্য বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রতিবেদনটি ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক ঘোষণার আগে তৈরি হওয়ায় সেসব শুল্কের প্রভাব এতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তবে এডিও এপ্রিল ২০২৫-এ নতুন শুল্ক নীতির ফলে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রবৃদ্ধিতে সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলাদা বিশ্লেষণ রয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বর্তমানে ৬৯টি সদস্য দেশের মালিকানাধীন। প্রতিষ্ঠানটি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই এবং সহনশীল প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।


 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ