<p>বৃহত্তর নোয়াখালীর সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)। উপকূলীয় কৃষির উন্নয়ন ও গবেষণার পাশাপাশি মানসম্মত গ্র্যাজুয়েট তৈরি করে দেশের কৃষিতে অবদান রাখার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কৃষি বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালে। শুরুতে বিভাগটির নাম ছিল কোস্টাল এগ্রিকালচার। পরে শিক্ষার্থীদের চাকরিতে আবেদনের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বিভাগটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় এগ্রিকালচার। বিভাগটির শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর চালু করার বিষয়ে বারবার  কর্তৃপক্ষকে অবগত করলেও চালু হয়নি স্নাতকোত্তর প্রগ্রাম। এরই মধ্যে এ বিভাগের চারটি ব্যাচ স্নাতক সম্পন্ন করেছে। আর স্নাতক সম্পন্ন করার পর তাঁদের আশ্রয় হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোথাও। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে তাঁদের মুখোমুখি হতে হয় নানা সমস্যার।  </p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নোবিপ্রবি থেতে স্নাতক শেষ করার পর কিছু শিক্ষার্থীর অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হওয়ার আগ্রহ থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীর আগ্রহ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েই স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার। নোবিপ্রবিতে স্নাতকোত্তর চালু না থাকায় চার বছরের স্নাতক সম্পন্ন করে নতুন ঠিকানা খুঁজতে হয় শিক্ষার্থীদের। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করা, থাকার জায়গা ঠিক করাসহ নানা জটিলতায় ভুগতে হয় তাদের। এমনও আছে, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আবাসিক হলে আটজনের রুমে থাকতে হয়। আটটজনের রুমে সিট পাওয়াটাও খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। নেতাদের পেছনে ঘুরে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সিট ম্যানেজ করতে হয়। আবাসিক হলে আটজনের রুমে থেকে চাকরি পড়াশোনা কিংবা গবেষণা করা কতটা কষ্টের তা বলাই বাহুল্য। নতুন জায়গায় গিয়ে টিউশনি কিংবা পার্টটাইম কোনো চাকরি ম্যানেজ করাটাও খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। অন্য বিশ্ববিদ্যালয় হতে আসায় তেমন মূল্যায়ন পান না বলেও জানান শিক্ষার্থীরা। নানা বৈষম্যের শিকার হতে হয় তাদের। এছাড়া বিশেষ করে জানুয়ারি সেশনে স্টুডেন্টরা ভর্তি হওয়ার জন্য সুপারভাইজার হিসেবে শিক্ষক পান না। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই সময়টা তাদের নিজেদের ছাত্রদের ভর্তি করান। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, নোবিপ্রবি হতে স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের ৬ মাস পরের সেশনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। </p> <p>সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে নোবিপ্রবিতে কৃষি বিভাগের সাথে চালু হওয়া সবকটি বিভাগে স্নাতকোত্তর প্রগ্রাম চালু হলেও কৃষি বিভাগে এখনো চালু হয়নি স্নাতকোত্তর কার্যক্রম। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান কৃষিকে ফ্যাকাল্টি করার পাশাপাশি স্নাতকোত্তর চালুর বিষয়ে বারবার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন আর হয়নি। বিভাগ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে স্নাতকোত্তর চালু হতে দেরি হচ্ছে বলে জানায় একটি সূত্র। এদিকে কৃষি বিভাগে স্নাতকোত্তর চালু হলে ভর্তি হবেন এমন আশায় অনেক আগে স্নাতক সম্পন্ন করা কয়েকজন শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তরে কোথাও ভর্তি হননি বলেও জানা যায়। </p> <p>বাকৃবিতে স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত নোবিপ্রবির কৃষি বিভাগের তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী রায়হান সজীব নাহিদ বলেন, 'আমার ইচ্ছা ছিল মাতৃ প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতকোত্তর করার। কৃষি বিভাগে মাস্টার্স চালু না হওয়ার কারণে সেটি আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আমাদের বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের বিদায়ী অনুষ্ঠানে আমি তৎকালীন উপাচার্য অহিদুজ্জামান স্যারকে সবিনয় অনুরোধ করছিলাম যাতে আমাদের মাস্টার্স চালু করে আমাদেরকে এখানেই উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া হয়। তিনি আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন অচিরেই মাস্টার্স প্রগ্রাম চালুর ব্যাপারে। কিন্তু চালু হয়নি, আমাদের বিদায় অনুষ্ঠানে আমি আবারও আক্ষেপ নিয়ে এই বিষয়টি উত্থাপন করি। বলেছিলাম মাস্টার্সের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়ায় আজ চলে যেতে হচ্ছে কিন্তু একটিই অনুরোধ যাতে পরবর্তী ব্যাচের এই কষ্ট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যেতে না হয়। জানি না কোন অদৃশ্য কারণে মাস্টার্স চালু সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, কৃষি বিভাগের প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি নিজ বিভাগে মাস্টার্স চালু হওয়া এবং কৃষি ফ্যাকাল্টি করা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে সবিনয় নিবেদন নোবিপ্রবির কৃষি বিভাগকে অচিরেই ফ্যাকাল্টি এবং মাস্টার্স কোর্স চালুর মাধ্যমে অপার সম্ভাবনাময় দক্ষিণাঞ্চলের কৃষির উন্নয়নে অবদানের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।'<br />  <br /> নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি বিভাগের সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন, নোবিপ্রবিতে কৃষি বিভাগে স্নাতকোত্তর চালু না হওয়ার পেছনের কারণ জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ সবসময় কালক্ষেপণমূলক উত্তর দেন। এই যেমন হবে, হচ্ছে, বোর্ডে কথা হয়েছে আবার মাঝে মাঝে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে প্রতিনিধি পর্যবেক্ষণে এসেছেন ইত্যাদি। আমি আশা করি কর্তৃপক্ষ কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা চিন্তা করে স্নাতকোত্তর চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অনতিবিলম্বে গ্রহণ করবে।</p> <p>কৃষি বিভাগে স্নাতকোত্তর চালু না হওয়ায় গবেষণা করার মতো স্টুডেন্ট পাচ্ছেন না বলে জানান বিভাগটির সহকারী অধ্যাপক ড. মেহেদী হাসান রুবেল। তিনি বলেন, আমি চাই স্নাতকোত্তর ডিগ্রী দ্রুত চালু হোক। একজন শিক্ষকের মূল কাজ হচ্ছে গবেষণা এবং প্রজেক্ট হান্টিং করা। আমি কয়েকটা প্রজেক্ট লিখেছি এবং সাবমিট করেছি।  যদি আমার প্রজেক্ট পাই তাহলে আমি কাদের দিয়ে কাজ করাব? গবেষণা সাধারণত মাস্টার্স স্টুডেন্টদের দিয়ে করতে হয়। তাই আমি মনে করি আমার একটা প্রজেক্ট এর সাথে সাথে  মাস্টার্সের স্টুডেন্ট থাকাও জরুরি।</p> <p>কৃষি বিভাগে স্নাতকোত্তর কবে নাগাদ চালু হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে বিভাগটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. গাজী মোহাম্মদ মহসীন কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে পরিকল্পনা নিয়েছি। ভিসি স্যার এবং অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের অনুমতি নিয়ে করোনাভাইরাস শেষে বিশ্ববিদ্যালয় খুললে তিন বা চার সাবজেক্টে স্নাতকোত্তর চালু করতে পারবো আশা করি। চারটা সাবজেক্ট আমরা প্রস্তাব করতে চাই। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে আমাদের দেরি হচ্ছে। কভিড শেষ হোক, বিশ্ববিদ্যালয় খুলুক। ফ্যাকাল্টির ব্যাপারে তিনি বলেন, ফ্যাকাল্টি ইউজিসি আর উপাচার্য মহোদয়ের ব্যাপার। ফ্যাকাল্টিটা আমাদের প্রপোজ করা আছে ইউজিসিতে। </p> <p>এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, কৃষি তো একক বিষয় না। ছোট একটি ইউনিভার্সিটি। কৃষি ফ্যাকাল্টি করতে গেলে জমি লাগবে ২০ একর। তারপর ফার্ম মেকানিক্স, ফার্ম অপারেশন এসবও তো আছে। ফার্মেই লাগবে ১০ একর। কৃষি মানেই তো জমি। জমি কম আমাদের। ফ্যাকাল্টি চাইলেই তো আর হবে না। আমি অযথা আশ্বাস দিতে পারবো না। সিরিয়ালি চাইতে হবে। শুধু বেঞ্চ আর টেবিল দিয়ে তো হবে না। প্র্যাকটিক্যাল ফিল্ড লাগবে।  স্নাতকোত্তর চালুর ব্যাপারে তিনি বলেন, বিভাগ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে আসুক আমার কাছে। আলোচনা করে কিছু একটা তো করতে হবে।</p>