<p>নৌকা প্রতীকে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নবীদুল ইসলাম। এরপর নির্বাচনে প্রভাব খাটিয়ে ইউপি সদস্যদের ভোটে জেতানোর আশ্বাস দিয়ে ৪ সদস্য প্রার্থীর কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়েছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনে হেরে এসব পরাজিত প্রার্থীরা ওই চেয়ারম্যান এবং তার ২ সহযোগীর বিরুদ্ধে থানায় পৃথক ৪টি প্রতারণা মামলা দায়ের করেছেন।</p> <p>আসামিরা হলেন সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিনা ভোটে পুনরায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান নবীদুল ইসলাম, তার ভাগ্নে মুলিবাড়ির শাহ আলীর ছেলে স্বাধীন ও সহযোগী মুলিবাড়ির মৃত শাহজাহান আলীর ছেলে পথিক।</p> <p>বাদীরা হলেন সয়দাবাদ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও একই ওয়ার্ডের সদস্য পদপ্রার্থী (মোরগ প্রতীক) ফরিদুল ইসলাম, ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও একই ওয়ার্ডের সদস্য পদপ্রার্থী (ফুটবল) রফিকুল ইসলাম, ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও একই ওয়ার্ডের সদস্য পদপ্রার্থী (তালা প্রতীক) মফিজ মোল্লা এবং ৪, ৫, ৬ নম্বর সংরক্ষিত নারী সদস্য পদপ্রার্থী পিয়ারা বেগমের (হেলিকপ্টার প্রতীক) স্বামী গোলাম নবী।</p> <p>বাদীরা মামলার এজাহারে উল্লেখ্য করেছেন, নির্বাচনে প্রভাব খাটিয়ে জেতানোর আশ্বাস দেয়ায় তারা চেয়ারম্যান নবীদুল ইসলামকে উৎকোচ হিসাবে টাকাগুলো দিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকেই নির্বাচনে জেতাতে পারেননি বা কোনো সহযোগিতাও করেননি চেয়ারম্যান নবীদুল। পরাজিত হওয়ার পর ওই উৎকোচ দেয়া টাকা ফেরত চাওয়ায় চেয়ারম্যান তাদের মারপিট ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। এ অবস্থায় মিথ্যা প্রলোভনে টাকা আত্মসাৎ করায় তারা প্রতারণার মামলা দায়ের করেছেন বলে এজাহারগুলোতে উল্লেখ্য করা হয়েছে। টাকা লেনদেনের সময়ে উপস্থিত থাকা ব্যক্তিদের মামলাগুলোতে সাক্ষী হিসেবে দেখানো হয়েছে।</p> <p>বাদীদের মধ্যে ফরিদুল ইসলাম ৮ নভেম্বর বিকেলে ইউপি চেয়ারম্যান নবীদুল ইসলামকে ৭ লাখ টাকা দিয়েছেন। এ কাজে চেয়ারম্যানের ভাগ্নে স্বাধীন তাকে উৎসাহ জুগিয়েছেন। রফিকুল ইসলাম ৮ নভেম্বর সকালে চেয়ারম্যান নবীদুল ইসলামকে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন। মফিজ মোল্লা ৯ নভেম্বর রাতে চেয়ারম্যান নবীদুল ইসলামকে ৫ লাখ টাকা দেন। কিন্তু টাকার বিশেষ প্রয়োজন হওয়ায় তিনি ৯০ হাজার টাকা ফেরত নিয়েছেন। আর গোলাম নবী ৯ নভেম্বর রাতে চেয়ারম্যান নবীদুল ইসলামের সহযোগী পথিকের কাছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেন। যা চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করেছে পথিক।</p> <p>এ বিষয়ে সদর থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, গত রবিবার রাতে বাদীরা পৃথক ৪টি লিখিত এজাহার থানায় জমা দিয়েছেন। তদন্তের পর ঘটনার সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।</p> <p>ওসি আরও বলেন, ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ এনে কয়েকজনের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানও থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। সেটিও তদন্ত করে দেখা হবে।</p> <p>এ বিষয়ে সয়দাবাদ ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নবীদুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগকারী পরাজিত সদস্য প্রার্থীরা সবাই আওয়ামী লীগ নেতা। তারা ভোটের দিন কেন্দ্রে প্রভাব খাটিয়ে ব্যালট কেটে ভোটে জয়ী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। এ বিষয়ে আমাকে প্রস্তাব দিলেও তা প্রত্যাখান করেছি। সুষ্ঠ নির্বাচন হওয়ায় তারা হেরে গিয়ে উল্টো আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।      </p> <p>দ্বিতীয় ধাপে ১১ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সয়দাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নবীদুল ইসলাম বিনা ভোটে পুনরায় চেয়ারম্যান ও তার বড় ভাই আব্দুল মোমিন পুনরায় সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় শুধু বাকি পদগুলোতে এ ইউপিতে ভোট হয়।</p> <p>গত ১ নভেম্বর কালের কণ্ঠের অনলাইন সংস্করণে এই চেয়ারম্যানকে নিয়ে 'বিনা ভোটে জিতে বেপরোয়া ইউপি চেয়ারম্যান' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, সিরাজগঞ্জ সদরের সয়দাবাদে নৌকা প্রতীকে বিনা ভোটে জিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ওই ইউপি চেয়ারম্যান। ইউনিয়ন পরিষদকে নিজের কব্জায় রাখতে তার পছন্দের আরো সদস্যদের বিজয়ী করতে তিনি মরিয়া। ইতিমধ্যে তার বড় ভাইকে বিনা ভোটে বানিয়েছেন ইউপি সদস্য। আর এ মিশন বাস্তবায়নে যাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন তাদেরই প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছেন হুমকি-ধামকি। এ অবস্থায় এক ইউপি সদস্য প্রার্থীর স্ত্রী তার স্বামী-সন্তানের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। </p>