<p>খুব ঠান্ডা মাথায় রিকশাচালক মো. দুলালকে খুন করেছিল ঘাতক শরীফ মাঝি। প্রথমে মাথার পেছনে ইটের আঘাত, পরে অচেতন হয়ে পড়লে উপর্যুপরি আরো কয়েকটি আঘাত। এতে মূহূর্তের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মো. দুলাল। তারপর তার রিকশা চালিয়ে নিজ বাড়িতে চলে যায় ঘাতক। এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ১১টায় চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনাল থেকে একশ বিশ টাকা ভাড়ায় চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনাল থেকে চালক মো. দুলালকে নিয়ে হরিণা ফেরিঘাটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে শরীফ মাঝি। পথিমধ্যে রঘুনাথপুর এলাকার সড়কে নিয়ে গভীর রাতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় চালক মো. দুলালকে।</p> <p>এই ঘটনার ২ সপ্তাহ পর গত বুধবার রাতে চাঁদপুর সদরের ইচুলি এলাকার একটি বেকারি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ঘাতক শরীফ মাঝিকে। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সেখানে কাজে যোগ দিয়েছিল সে। রিকশাচালক মো. দুলাল হত্যাকাণ্ড সর্ম্পকে বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদীপ্ত রায় জানান, একাধিক পেশা পরিবর্তনকারী এই শরীফ মাঝি শুধু মাত্র রিকশাটি ছিনিয়ে নিতে যাত্রীবেশে চালক মো. দুলালের সঙ্গী হয়েছিল।</p> <p>তিনি আরো জানান, হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে নিজ বাড়িতে চলে যায় ঘাতক শরীফ মাঝি (২৮)। হাত মুখ ধুয়ে রাতের খাবার খেয়ে নেয় সে। পরে ছিনিয়ে নেওয়া রিকশার বিভিন্ন অংশ খুলে পাশের পুকুরে ফেলে দেয়। তাছাড়া রিকশার ৪টি ব্যাটারি একজনের কাছে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিল। পুলিশের প্রাথমিক বিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দিয়েছে ঘাতক শরীফ মাঝি। </p> <p>এদিকে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতের পর স্বামী মো. দুলালকে খুঁজে না পেয়ে ভেঙে পড়েন নিহতের স্ত্রী কোহিনুর বেগম। ভোর রাত পর্যন্ত খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু পরের দিন সকালে স্বামীর মৃত্যুর ঘটনা জানতে পারেন। এরইমধ্যে সদর মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ময়না তদন্তের জন্য নিহতের মরদেহ নিয়ে আসে থানায়। সেখানে সন্তানদের নিয়ে ছুটে যান কোহিনুর বেগম। এই ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে থানায় মামলা করেন। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় পুরানবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক রাজিব শর্মাকে। একপর্যায়ে ঘাতককে ধরতে মাঠে নেমে পড়েন পুলিশের এই কর্মকর্তা। টানা ১৩ দিনের চেষ্টায় অবশেষে সদর উপজেলার ইচুলি এলাকার একটি বেকারি থেকে ধরা পড়ে ঘাতক শরীফ মাঝি।  </p> <p>বৃহস্পতিবার সকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদীপ্ত রায়, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াসির আরাফাত, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মুহসীন আলম- গ্রেপ্তার হওয়া আসামি শরীফ মাঝিকে নিয়ে তার গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ গোবিন্দিয়া এলাকায় ছুটে যান। এসময় তার বাড়ির পুকুর থেকে নিহত মো. দুলালের ছিনিয়ে রিকশার বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড। নিরীহ একজন চালককে শুধুমাত্র তার রিকশাটি ছিনিয়ে নিতেই ঘাতক শরীফ মাঝি এমন কান্ড করে। তাই মূল ঘটনা নিশ্চিত হতে এবং জড়িতকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করতে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের নির্দেশনা ছিল। সেই নির্দেশনার প্রেক্ষিতে আমরা সফল হয়েছি।   </p> <p>অন্যদিকে, দুপুরে চাঁদপুরের আদালতে হাজির করা হয় ঘাতক শরীফ মাঝিকে। এসময় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক প্রদান করে সে। পরে আদালতের বিচারকের নির্দেশে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাকে। নিহত রিকশাচালক মো. দুলালের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশনের জাহানপুর গ্রামে। তিনি স্ত্রী এবং ৫ সন্তান নিয়ে চাঁদপুর শহরে বসবাস করতেন।</p>