<p>নিয়মিত ছাত্রীদের সঙ্গে অশুভ ও অশালীন আচরণ করায় বিক্ষোভের মুখে অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ী ইউনিয়নের খালবলা বাজার বালিকা বিদ্যালয়ে। গতকাল রবিবার বিকেলে স্কুল পরিচালনা পর্ষদ ও শিক্ষকদের সর্বসম্মতিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।</p> <p>অভিযুক্ত খালবলা বাজার বালিকা বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক নূর মোহাম্মদ নিয়মিতই শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেই ছাত্রীদের সঙ্গে অশুভ ও অশালীন আচরণ করতেন। এর আগেও তার এই আচরণের প্রতিবাদ করেও কাজ হয়নি। শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে, ক্লাস বর্জন করে এক দফা দাবিতে অনড় থাকে। অবশেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনার সত্যতা পেলে তাৎক্ষণিক জরুরি সভা ডেকে পরিচালনা পর্ষদ ও শিক্ষকদের সর্বসম্মতিতে অভিযুক্ত শিক্ষককে তার অপরাধের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করে।</p> <p>ছাত্রীরা জানায়, ইংরেজি শিক্ষক নূর মোহাম্মদ দীর্ঘদিন ধরে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে প্রাইভেট পড়ানোর কথা বলে ছাত্রীদের অনৈতিক প্রস্তাব ছাড়াও শ্রেণিকক্ষে পছন্দের ছাত্রীদের কাছে গিয়ে শরীরে হাত দিতেন তিনি। প্রতিবাদ করলে পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকিসহ প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করতেন তিনি। স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় এত দিন কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেনি। </p> <p>এর মধ্যে গত বুধবার নবম শ্রেণিতে প্রবেশ করে ছাত্রীদের দাঁড়াতে বলেন তিনি। এ সময় ছাত্রীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তুদের মধ্যে কার কার বাবা বিএনপি ও আওয়ামী লীগ করে। এই কথা শুনে হাবিবা আক্তার নামের এক ছাত্রী বলে ওঠে, ‘স্যার এখানে এসব কথা না বলে ক্লাস নেন’। এমন কথায় শিক্ষক নুর মোহাম্মদ ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘বুঝতে পারছি, তর বাপরে কইছ দুইডা পাও কাইট্ট্যা লটকাইয়া তইয়াম’” </p> <p>এ ধরনের কথায় ছাত্রীরা ভীত হয়ে পড়ে। পরে তাৎক্ষণিক ক্লাস বর্জন করে বের হয়ে যায় ছাত্রীরা। নবম শ্রেণির ছাত্রী মোছা. তৈয়বা খানম জানায়, ওই দিন বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করলেও স্থানীয় লোকজন বিচারের আশ্বাস দিলে তারা সবাই বাড়িতে চলে যায়। পরদিন বৃহস্পতিবার ওই শিক্ষক বিদ্যালয়ে এসে প্রতিবাদী ছাত্রীদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিলে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। এ অবস্থায় গতকাল রবিবার ফের ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বিদ্যালয়ের প্রায় ৪০০ ছাত্রী। সকাল ১১টার পর থেকে ক্লাস বর্জন করে ওই শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে অনড় থাকে।</p> <p>খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদ্যালয়ে গিয়ে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ ও সব শিক্ষকের মতামত নিয়ে  বিকেলে সর্বসম্মতিতে অভিযুক্ত শিক্ষক নুর মোহাম্মদকে সাময়িক বরখাস্ত করে।</p> <p>ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার বলেন, ‘বিদ্যালয়ে না এলে পুরো ঘটনা জানতে পারতাম না। এখনো এমন শিক্ষক রয়েছেন তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। ছাত্রীরা বলেছে, শ্রেণিকক্ষে ওই শিক্ষক তাদের শরীরেও হাত দিতেন। যা শুনে আমি হতবাক হয়ে পড়েছি। এ অবস্থায় তাকে (অভিযুক্ত শিক্ষক) এখন সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একটি তদন্ত টিম গঠন করে বিদ্যালয়ে গিয়ে গণশুনানি শেষে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’</p> <p>এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘একজন শিক্ষকের কারণে বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হতে চলছিল। গত বুধবার নূর মোহাম্মদ শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় ছাত্রীদের উদ্দেশে অশালীন কথাবার্তা বলেছেন। সেই থেকে ঘটনার সূত্রপাত। ওই শিক্ষকের প্রভাবের কারণে তিনি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছিলেন না। তিনি কিছুদিন আগে এক দলের প্রভাব দেখিয়েছেন। এখন অন্য দলের প্রভাব দেখাচ্ছিলেন।’</p> <p>মো. রফিকুল ইসলাম নামের একজন অভিভাবক বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক থাকার কথা বাবা-সন্তানের মতো। কিন্তু শিক্ষক যদি সন্তানসম ছাত্রীদের উদ্দেশে অশালীন ভাষা ব্যবহার করেন তাহলে বলতে হবে তিনি নৈতিকতাবোধ হারিয়েছেন।’</p>