<p>কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পরকীয়া প্রেমের জেরে স্বামী রেলকর্মী মাহবুবুর রহমানকে হত্যার দায়ে স্ত্রী ও প্রেমিককে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছেন কিশোরগঞ্জের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক। </p> <p>আজ বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রোকসানা আক্তার (৩৩) ও আসিফ আহম্মেদের (২৬)  উপস্থিতিতে আদালতের বিচারক শামীম হাসনাত পারভিন এ রায় দেন। রায়ে দুজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশও দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রোকসানা জেলার চণ্ডিবের উত্তরপাড়া গ্রামের মো. শহিদ মিয়ার মেয়ে। আর আসিফ আহমেদ একই গ্রামের বাবুল আহম্মেদের ছেলে।</p> <p>মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, বিয়ের পর মাহবুবুর রহমান তার স্ত্রী রোকসানা নিয়ে জেলার ভৈরবের চণ্ডিবের উত্তরপাড়ায় নিজস্ব বাসার দ্বিতীয় তলায় বসবাস করতেন। তাদের তিনটি শিশু সন্তান। এরমধ্যে দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে। মাহবুব রেলের কর্মচারী ছিলেন। তার কর্মস্থল ছিল ঢাকার কমলাপুর। সাপ্তাহিক ছুটিতে তিনি বাড়িতে যেতেন। এর মধ্যে রোকসানা একই গ্রামের আসিফ আহম্মেদের সঙ্গে অনৈতিক পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি নিয়ে স্বামীর সঙ্গে কয়েকবার ঝগড়াবিবাদ হয়। ঝামেলা চরমে পৌঁছালে স্ত্রী রোকসানা ও প্রেমিক আসিফ মাহবুবকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। মাহবুব ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ছুটিতে বাড়ি আসেন মাহবুব। ওইদিন রাতে রোকসানা তার স্বামীকে পায়েসের সঙ্গে সবগুলো ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে খাওয়ান। ওষুধের প্রভাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই অচেতন হয়ে পড়েন মাহবুব।</p> <p>রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রাখাল চন্দ্র দে জানান, ৩০টি ঘুমের ট্যাবলেট রোকসানাকে সরবরাহ করেন প্রেমিক আসিফ। প্রথমে বালিশ চাপা দিয়ে মাহবুবকে দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন দুজন। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ধরালো ছুরি দিয়ে মাহবুবের বুকে পরপর পাঁচটি আঘাত করলে কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান তিনি। এর পর আসিফ পালিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর স্ত্রী রোকসানার চিৎকার ও কান্নায় আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। তাদের বলা হয় ঘরে ডাকাত ঢুকেছিল। ডাকাতরা তারা স্বামীকে হত্যা করে ঘরের টাকাপয়সা নিয়ে পালিয়ে গেছে। ধস্তাধস্তিতে রোকসানাও আহত হয়েছিল। পরে তাকে ভৈরব হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।</p> <p>এ ঘটনায় নিহতের ভাই হাবিবুর রহমান অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে পরেরদিন  ২৮ নভেম্বর ভৈরব থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ প্রথমে নিহতের স্ত্রীকে সন্দেহ করে। তার অসংলগ্ন কথাবার্তায় সন্দেহ আরো দৃঢ় হয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে এক পর্যায়ে পুলিশ রোকসানা ও তার প্রেমিক আসিফকে গ্রেপ্তার করে। জেরার মুখে তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন।</p> <p>এরপর তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দেন। তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ৩০ জুন তদন্ত কর্মকর্তা ভৈরব থানার ওসি মো. শাহিন তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। </p>