<p>সত্তর বছর বয়সী রোকেয়া বেগম। স্বামী আব্দুর রাজ্জাক মারা গেছেন ১৬ বছর আগে। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে থাকতেন। মেয়ে পছন্দ করে ছেলেকে বিয়েও দিয়েছিলেন তিনি। তবে ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার পর বেশিদিন একসঙ্গে থাকতে পারেননি রোকেয়া বেগম। তাকে ফেলে চলে গেছেন ছেলে ও বউমা। জীবন সায়াহ্নে শেফালীর আশ্রয় এখন বৃদ্ধাশ্রম।</p> <p>পরিবারের ভরসার স্থল ছেড়ে রোকেয়ার মতো অনেক মাকে আশ্রয় নিতে হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে। বেঁচে থাকার জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণ হলেও সন্তানদের স্নেহ-ভালোবাসা ভুলতে পারছেন না মায়েরা। সন্তানেরা ছেড়ে গেলেও সব সময় তাদের মঙ্গল কামনা করেন অবহেলিত এই মায়েরা।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="নির্বাচনের আগে শর্ত দিলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/17/1731843518-d6d55a82f7452d28747769bddd786a39.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>নির্বাচনের আগে শর্ত দিলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/11/17/1447663" target="_blank"> </a></div> </div> <p>রোকেয়া বেগম বলেন, ‘কুষ্টিয়ায় তাদের বাড়ি রয়েছে। সেখানে ছেলে ও তার বউকে নিয়ে একসঙ্গেই বসবাস করতেন। একদিন হঠাৎ ছেলে বলে তার এখানে থাকতে ভালো লাগছে না। কয়েকদিন পারে জানতে পারি ছেলে তার শ্বশুরবাড়ি যশোরে বসবাস করতে চায়। পরে ছেলে তার বউকে নিয়ে যশোরে চলে যায়। আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। বাড়িতে দীর্ঘদিন যাবৎ আমি একা বসবাস করতে থাকলাম। সেসময় অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। তখন স্থানীয় এক ব্যক্তির সহযোগিতায় হরিণাকুণ্ডুর এই বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিই।’</p> <p>কান্নাজড়িত কণ্ঠে রোকেয়া বেগম বলেন, ‘মায়ের সাথে থাকলে ওর কি এমন অসুবিধা হতো আমি বুঝতে পারিনা। তারপরেও আমি দোয়া করি ওরা সুখে থাকুক।’</p> <p>রোকেয়ার মতো আরো অন্তত ২০ জন মায়ের জায়গা হয়েছে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার জোড়াপুকুরিয়া বৃদ্ধাশ্রমে।</p> <p>বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা ইসমত আরা জানান, ২০০৬ সালে ছেলে ও তার বউদের অত্যাচার সইতে না পেরে প্রতিবেশী এক নারী বিষপান করেছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ওই নারী বেঁচে গেলেও তার বাড়িতে জায়গা দেয়নি সন্তানেরা। অসহায় ওই নারীকে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেন ইসমত আরা। এরপর তিনি বৃদ্ধাশ্রম তৈরির পরিকল্পনা করেন। তারপর ২০০৯ সালে ৩ শতক জমিতে বৃদ্ধাশ্রম চালু করেন তিনি।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="১৬ বছর শিকলে বাঁধা রতনের জীবন, চিকিৎসার আকুতি পরিবারের" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/17/1731842096-8816971b0b486411c15dfd044906456c.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>১৬ বছর শিকলে বাঁধা রতনের জীবন, চিকিৎসার আকুতি পরিবারের</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/11/17/1447660" target="_blank"> </a></div> </div> <p>ইসমত আরা আরো বলেন, ‘বৃদ্ধাশ্রমে এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলেছে সন্তাদের কাছে আশ্রয় না পাওয়া ২১ জন মায়ের। নিজের সব সুখ বিলিয়ে দিয়ে সন্তানের মঙ্গল নিশ্চিত করতেন এই মায়েরা। সন্তারেরা সেই মায়েদেরই জীবন থেকে মুছে ফেলেছেন। অথচ সন্তানদের মঙ্গল কামনায় দিন-রাত প্রার্থনা করেন এখানকার মায়েরা।’</p> <p>শুরু থেকেই ওই বৃদ্ধাশ্রমে আছেন ফরিদপুরের রাশিদা বেগম। স্বামী মারা যাওয়ার পর ছেলেরা তাকে আর বাড়িতে থাকতে দেয়নি। পরে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পর ভাইয়েরা তাকে ভরণপোষণ দেয়নি। কোথাও থাকার জায়গা না পেয়ে তিনিও আশ্রয় নিয়েছেন জোড়াপুকুরিয়া বৃদ্ধাশ্রমে।</p> <p>রাশিদা বলেন, ‘অনেক দিন ধরে এখানে থাকছি। খাওয়া-দাওয়ার কোনো অসুবিধা হয় না। অবসরে কাথা সেলাইসহ গল্প গুজব করে দিন চলে যায়। মাঝে মাঝে ছেলেদের কথা মনে পড়ে। মনে পড়লেও তো তারা আমার সঙ্গে যোগযোগ রাখে না। তাই এখানে যারা আছে তাদের আপন করে নিয়েছি।’</p> <p>ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘ওই বৃদ্ধাশ্রমের কথা শুনেছি। একদিন সময় করে গিয়ে ওখানকার মায়েদের গল্প শুনবো।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘মা-বাবারা বৃদ্ধাশ্রমে থাকুক এটা কারো কাম্য নয়। এ নিয়ে জনসচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি।’</p>