<p>মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মনু নদীতে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী “হাট বাওয়া” উৎসব শেষ হয়েছে। সোমবার শুরু হওয়া এই উৎসব শেষ হয় বুধবার বিকেলে। এ উৎসবে পেশাদার জেলেদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশার সহস্রাধিক সৌখিন মৎস্য শিকারী অংশ নেন। ছোট-বড় দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ শিকারিদের জালে ধরা পড়ে। তবে স্থানীয়দের মতে, আগের বছরের তুলনায় এবার মাছ কম ধরা পড়েছে। নদীতে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে উজানে ভারতীয় অংশে বিষ প্রয়োগের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন তারা।</p> <p>জেলার কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর—এই তিন উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা মনু নদীর কুলাউড়া অংশে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এখানে শত শত পেশাদার ও সৌখিন মৎস্য শিকারী এবং উৎসুক দর্শনার্থীরা সমবেত হন। প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসে মনু নদীর পানি কমে এলে কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর, টিলাগাঁও, পৃথিমপাশা ও শরীফপুর ইউনিয়নের সহস্রাধিক মানুষ একত্রে মাছ ধরতে নদীতে নামেন। শিকারিরা আগেভাগেই জাল ও নৌকা প্রস্তুত করে রাখেন। কেউ নৌকায়, কেউ কলাগাছের ভেলায় চড়ে, আবার কেউ নদীর চরের শুকনো জায়গায় দাঁড়িয়ে ঝাকি জাল দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করেন।</p> <p>গত সোমবার সকাল দশটায় হাজিপুর ইউনিয়নের মনু-কটারকোনা রেল ও সড়ক সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে উৎসবের যাত্রা শুরু হয়। কটারকোনা, মাহতাবপুর, টিলাগাঁওয়ের লালবাগ, গাজীপুর, পৃথিমপাশার ছৈদল বাজার ঢহর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে শিকারিরা মাছ ধরেন। বুধবার দুপুরে পৃথিমপাশার বেলরতল এলাকায় শত শত সৌখিন ও পেশাদার শিকারী মাছ ধরতে নামেন। তাদের জালে ধরা পড়ে দেশীয় রুই, বাউশ, আইড়, চিতল, বাচা মাছসহ নানা প্রজাতির মাছ।</p> <p>হাজিপুরের মাদানগরের পেশাদার শিকারী সফাত মিয়ার জালে ধরা পড়ে ৬ কেজি ওজনের একটি বাউশ এবং ৪ কেজি ওজনের বোয়াল মাছ। আরেক শিকারী আব্দুর রহমানের জালে ধরা পড়ে ৩ কেজি ওজনের কালিবাউশ। কালা মিয়ার জালে ধরা পড়ে ৩ কেজি ওজনের বাউশ, ২ কেজি ওজনের চিতল ও দেড় কেজি ওজনের মৃগেল মাছ।</p> <p>পৃথিমপাশার বাসিন্দা সৈয়দ আশফাক তানভীর ও ফয়জুল হক লিটন জানান, শতাধিক বছর ধরে এ উৎসব চলে আসছে। প্রতি বছর শীত মৌসুমে স্থানীয় জেলেদের পাশাপাশি নানা পেশার সৌখিন মানুষ এই উৎসবে অংশ নেন। মনু নদীর কুলাউড়া অংশের ১০-১৫টি ঢহরে “হাট বাওয়া” উৎসব হয়। এটি এখন গ্রামীণ ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।</p> <p>কুলাউড়ার সিনিয়র সাংবাদিক মো. মছব্বির আলী বলেন, এই উৎসবে যারা নেমেছেন, তারা বেশিরভাগই পেশাদার নন। শখের বশে সবাই মাছ ধরতে আসেন। আমিও শখ করে জাল নিয়ে পৃথিমপাশার বেলরতল ঢহরে মাছ ধরতে নেমেছিলাম, কিন্তু কোনো মাছ ধরতে পারিনি।</p> <p>বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন নদীগুলোর মধ্যে মনু একটি। প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসে এ নদীতে এভাবে মাছ ধরা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এটি মাছ ধরা উৎসব হলেও এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত “হাট বাওয়া” নামে। তবে এর নামকরণের সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। স্থানীয়দের মতে, বহু বছর ধরে চলে আসা এই উৎসব গ্রামীণ জনপদের ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।</p>