ভালো নেই যশোরের মনিরামপুর উপজেলার মৃৎশিল্পীরা। বছরের শীত মেীসুমে মাটির কাজের কিছুটা চাহিদা থাকলেও বছরের অন্য সময় বেকার বসে থাকতে হয় দীর্ঘ সময়। শীতে যশোরের ঐতিহ্য খেজুর গাছের রস ও গুড় সংগ্রহের জন্য মাটির হাড়ি বা কলসের চাহিদা থাকলেও আধুনিকায়ণের যুগে এ শিল্পটি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। অনেকে বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
পালপাড়ার মৃৎশিল্পীদের জীবনকথা
‘এতে সুংসার চলে না, বাপ-দাদার পিশা কোন রহম ধরে রাহিছি’
মোহাম্মাদ বাবুল আকতার, মনিরামপুর (যশোর)

মৃৎশিল্প হলো প্রাচীন শিল্পকলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। মানবসভ্যতার ইতিহাসে আদিকাল থেকে বংশানুক্রমে গড়ে ওঠা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। ক্রমবর্ধমান সভ্যতার ছোঁয়ায় অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে দিনদিন মৃৎশিল্পসামগ্রীর চাহিদা যেভাবে হ্রাস পাচ্ছে, তাতে এই শিল্প বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। এই শিল্প এবং এই শিল্পের কারিগররা এখন অসহায় ও নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
এ শিল্পের প্রধান উপকরণ মাটি হওয়ায় একে মৃৎশিল্প বলা হয়। এ জন্য মাটি দিয়ে তৈরি সব শিল্পকর্মই মৃৎশিল্প। যাদের পেশা মাটি নিয়ে কাজ করা তাদের কুমার আবার অনেককে পাল সম্প্রদায় বলা হয়।
১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত যশোরের মনিরামপুর উপজেলা।
মনিরামপুর উপজেলার কুশারীকোনা গ্রামের মৃৎশিল্পী সুধীর পাল (৫০) জানান, ‘মাটি দিয়ে জিনিসপত্র তৈরির জন্য যে মাটি ব্যবহার করা হয় সেই মাটি পুকুর, ডোবা ও জমিন থেকে নিয়ে আসা হয়। এসব মাটি দিয়ে তৈরি হয় নানা ধরনের মাটির তৈজসপত্র।
উপজেলার ভরতপুর গ্রামের মৃৎশিল্পী বাসন্তী রানী (৫০) বলেন, ‘জমিজমা বলতে বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। সেই বিয়ের ত্রিশ বছর ধরেই মাটির কাজ করেই টানা টানি করে সুংসার করছি। এ পিশা ছাড়ে কি করবো। আমাদের যে আর কোন উপায় নেই।
ওই গ্রামের আরেক মৃৎশিল্পী শিলা রানী বলেন, বছরের শীতকালে খেজুর গাছের রস ধরার জন্য মাটির হাড়ি/পাত্র (স্থানীয় ভাষায় ভাঁড় বলে) চাহিদার কারণে মাটিরকাজে একটু ব্যন্ত সময় যায়, তাছাড়া অন্য সময় মাটির কাজের কোনো চাহিদা নেই।
মধুপুর গ্রামের মৃৎশিল্পী সুকুমার পাল বলেন, 'জমি-জমা করে খাবো তা নেই, বাপ-দাদার পিশা ছাড়তি পারি না। মাটির কাজ করে আটজন মানুষির সংসার চালাতি ম্যালা কষ্ট হয়।'
গাংড়া প্রামের বাসুদেব পাল বলেন, 'আগে মাটির আসবাবপত্র ভালোই চাহিদা ছিল, সংসার ভালোই চলত। কিন্তু এখন চাহিদা কম, বাজারে প্লাস্টিক এসে আমরা মার খাইয়ে গিছি। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।'
মনিরামপু মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক নার্গিস পারভীন বলেন, ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পীরা আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে লালন করে আসছে। বংশ পরম্পরায় তাদের এ পেশাকে আমাদের মূল্যায়ণ করতে হবে। তারা হতদরিদ্র, আবাদী জমি-জমা নেই বললেই চলে। মাটির কাজ করেই তাদের জীবন জীবিকা চলে। শিল্প ও ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে সরকারী ও বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
উপজেলার খানপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে যারা সাহায্যেরে জন্য আসে, আমার ও পরিষদের পক্ষ থেকে সাধ্য মোতাবেক সহযোগিতা করা হয়।
মনিরামপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. রোকনুজ্জামান বলেন, মৃৎশিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট অনগ্রসর মানুষের জন্য অত্র দপ্তর থেকে সহযোগিতার হাত বাড়ানো হবে।
মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না বলেন, বাঙ্গালী সংস্কৃতির ধারক ও বাহক যত ঐতিহ্য আছে তার মধ্যে মৃৎশিল্প একটি। ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে বাঁচাতে সরকার বদ্ধপরিকর। এ বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা করে শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হবে।
সম্পর্কিত খবর

মুরাদনগর
কথা রাখতে পারলেন না বিজিবি সদস্য বেলাল, বাড়িতে শোকের মাতম
মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

আসন্ন ঈদুল ফিতরে ছুটি নিয়ে বাড়ি এসে আদরের দুই মেয়ে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উৎযাপন করার কথা দিয়েছিলেন বিজিবিতে কর্মরত মো. বেলাল হাসান। ছাত্র জীবন থেকেই কর্তব্য পালনে অটুট বেলাল চাকুরি থেকে ছুটি নেওয়ার আগেই জীবন থেকে ছুটি নিলেন।
বিজিবি সদস্য মো. বেলাল হাসান (৩১) কর্তব্যরত অবস্থায় কক্সজারের টেকনাফে মৃত্যুবরণ করেছেন। রবিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ গোলারচর এলাকায় বঙ্গোপসাগর থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।
ছাত্র জীবন থেকে মানবিক ও সামজিক কাজে সবার আগে থাকা বেলাল হাসানের এমন করুণ মৃত্যুর সংবাদে আশপাশের কয়েক গ্রাম জুড়ে নেমেছে শোকের ছায়া। আর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। পুত্র শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা নাছিমা আক্তার। অতি শোকে পাথর হওয়া স্ত্রী দুই কন্যা সন্তান নিয়ে বাড়িতে আসা লোকজনের দিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন।
নিহত বিজিবি সদস্য মোহাম্মদ বেলাল হাসান কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার ১৯ নং দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে। বেলালের দেড় বছরের আনহা বিন হাসান ও আট বছর বয়সের আন নাফি নামের দুটি কন্যা সন্তার রয়েছে।
গতকাল সোমবার সকালে নিহতের বাড়িতে গিয়ে চোখে পড়ে মায়ের কোলে ১৮ মাসের অবুঝ শিশু আনহা বিন হাসান। পিতার আদর সোহাগ বোঝার বয়স হয়নি তার এখনও।
বাড়ির উঠোনে নিহতের মা উপস্থিত লোকজনের কাছে ছেলের স্মৃতি চারণ করে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বাবা বজলুর রহমান তিনিও যেন বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। তাদেরকে দেখতে আসা লোকজনের মুখেও নেই শান্তনার ভাষা। কারো কারো চোখ বেয়ে পড়ছে পানি, কেওবা করছেন স্মৃতিচারণ।
নিহতের ভাই নাজমুল হাসান বলেন, 'শনিবার বিকেলে বিজিবি থেকে আমাদের বাড়িতে দুজন লোক আসে। এসে বলে আমার ভাই বেলাল হাসান শুক্রবার রাতে কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা উদ্ধার করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। তাকে এখনো পাওয়া যায় নি।'
তিনি আরো বলেন, 'রবিবার দুপুরে আমরা কুমিল্লা বিজিবি ক্যাম্পে যাওয়ার পরপর সেখানে খবর আসে যে, রাখাইন এলাকায় আমার ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে। প্রশ্ন হলো যে, আমার ভাই শুক্রবার নিখোঁজ হয়েছেন। আমাদের জানানো হয়েছে শনিবার বিকেলে। এর কারণ কি? এর পিছনে কোনো রহস্য আছে কি না এটা খতিয়ে দেখা দরকার।'
নিহতের বাবা বজলুর রহমান বলেন, 'আমার ছেলের মৃত্যুটা রহস্যজনক মনে হচ্ছে। মনে হয় কিছু গোপন করা হয়েছে।'
নিহতের স্ত্রী রোকসানা খনম বলেন, 'কথা ছিল ২৫ তারিখে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসবেন। বাড়িতে ঈদ করবেন। এখন আমাকে অথৈ সাগরে ভাসিয়ে সে চিরকালের জন্য ছুটি নিয়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। দুটি অবুঝ শিশু সন্তান নিয়ে আমি এখন কোথায় দাঁড়াব!'
জানা যায়, শুক্রবার গভীর রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্রে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাডুবি হয়। এ ঘটনায় নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করে বিজিবি। ওই সময় বিজিবির সদস্যসহ আরো বেশ কিছু রোহিঙ্গা নিখোঁজ হন।
পরে রবিবার দুপুরে কক্সবাজারের টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ গোলারচর এলাকায় বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ হওয়া বিজিবি সিপাহি মো. বিল্লাল হাসানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, সরকারি ভাবে কোনো নির্দেশনা আসলে আমরা তার পরিবারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।

ভূরুঙ্গামারী সীমান্তে বিপুল ইয়াবাসহ কারবারি আটক
ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী সীমান্তে ১৯২৫ পিচ ইয়াবা ও নগদ টাকাসহ সামিউল (৪০) নামের এক মাদক কারবারিকে আটক করেছে বিজিবি। গতকাল রবিবার (২৩ মার্চ) রাত ৯টার দিকে উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের দিয়াডাঙ্গা সীমান্তে তাকে আটক করা হয়। তিনি ওই ইউনিয়নের বাঁশজানী গ্রামের খয়বার আলীর ছেলে।
বিজিবি সূত্র জানায়, রবিবার রাত ৯টার দিকে কুড়িগ্রাম ব্যাটালিয়ন (২২ বিজিবি) এর অধীনস্থ দিয়াডাংগা বিওপি’র দায়িত্বর্পূর্ণ সীমান্ত মেইন পিলার নম্বর-৯৭৯ দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য পাচারের গোপন সংবাদ পায় বিজিবির টহল দল।
পরে মোটরসাইকেল আরোহীকে এবং মোটরসাইকেলটি তল্লাশি করে মোটরসাইকেলে থাকা শপিং ব্যাগ থেকে ১,৯২৫ পিস ভারতীয় ইয়াবা ট্যাবলেট, ৩ লক্ষ ২৪ হাজার ৫০ টাকা একটি ১০০ সিসি ডিসকভার মোটরসাইকেল ও একটি বাটন মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। আটককৃত ব্যক্তিকে মাদকদ্রব্য পাচারের দায়ে মামলার মাধ্যমে ভূরঙ্গামারী থানায় হস্তান্তর করা হয়।
কুড়িগ্রাম ব্যাটালিয়নের (২২ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মাহবুব-উল-হক, পিএসসি বলেন, ‘মাদকদ্রব্য পাচার রোধে সীমান্তে বিজিবির অভিযান চলমান রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

গোপালগঞ্জে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুল ছাত্রের মৃত্যু
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

গোপালগঞ্জে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার খাদে পড়ে স্কুল ছাত্র রনি শেখের (১৪) মৃত্যু হয়েছে। এ সময় মোটরসাইকেলে থাকা নিহতের চাচাতো ভাই জিমি শেখ আহত হয়েছে। আজ সোমবার (২৪ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মাঝিগাতী ডালনিয়া সড়কের বাঘাজুড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রনি শেখ ডালনিয়া গ্রামের ওলি শেখের ছেলে।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় মাঝিগাতী হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র রনি চাচাতো ভাই জিমি শেখকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। মোটরসাইকেলটি বাঘাজুড়ি গ্রাম এলাকায় পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে দু’জনেই মারাত্মক আহত হয়।
পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মুমতাহিনা মৌরী রনি শেখকে মৃত ঘোষণা করেন।

ভুট্টাক্ষেতে কাঁদছিল নবজাতক, উদ্ধার করল এলাকাবাসী
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের পূর্ব মহেশখালী গ্রামে একটি ভুট্টাক্ষেত থেকে এক নবজাতক কন্যাশিশু উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা, ভূমিষ্ঠ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই শিশুটিকে ফেলে যাওয়া হয়।
আজ সোমবার (২৪ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পাশের মরিচক্ষেতে কাজ করা এক নারী শিশুটির কান্নার শব্দ শুনে এগিয়ে যান। পরে তিনি ভুট্টাক্ষেতে নবজাতকটিকে দেখতে পান।
স্থানীয়দের ধারণা, কেউ শিশুটিকে ফেলে গেছে অথবা পারিবারিক কোনো সমস্যার কারণে পরিত্যক্ত করা হয়েছে। তবে কে বা কারা শিশুটিকে ফেলে গেছে, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
উদ্ধার হওয়া নবজাতকটিকে আপাতত ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
খবর পেয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাইরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করেন। তিনি বলেন, ‘শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ আছে।