<p>৭১-এর লড়াকু যোদ্ধা সিরাজ হোসেন তালুকদার। সহযোদ্ধাদের নিয়ে বীরত্বের সঙ্গে শত্রু বাহিনীর মোকাবেলা করেছেন তিনি। পাকিস্তানি এবং এ দেশে তাদের দোসরদের পরাজিত করে জয় ছিনিয়ে এনেছিলেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধার মতো আরো অনেকেই।  </p> <p>সিরাজ তালুকদার বলেন, ‘কেবল আর্থিক সহায়তা কিংবা ব্যক্তি স্বার্থের জন্য যুদ্ধ করিনি। আমাদের যুদ্ধ ছিল শোষণের বিরুদ্ধে। ৭১-এর যুদ্ধ ছিল ন্যায্যতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য। যে কারণে ২৪-এ আরেক সংগ্রাম করতে হয়েছে ছাত্র জনতাকে। তবে ৭১ চেতনা আর ২৪-এর আন্দোলন এক না। তার একটি ছিল মানচিত্র রক্ষার। আর অন্যটি আমাদের সমতার।’ </p> <p>আর যেন নতুন করে বৈষম্য তৈরি না হয় সেই জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, একাত্তরেও বৈষম্যের শিকার হয়েছিল বাঙালি। সেই বৈষম্য ৫৩ বছরেরও দূর হয়নি। যে কারণে আজও প্রজন্মকে বৈষম্য দূর করতে লড়তে হচ্ছে। </p> <p>চাঁদপুর সদরের নুরুল্লাহপুর গ্রামে তার বাড়ি। ১৯৭১ এ চাঁদপুর টেকনিক্যাল স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন সিরাজ হোসেন তালুকদার। ওই বছরই তার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। </p> <p>মে মাসের মাঝামাঝিতে প্রশিক্ষণের জন্য চলে যান ভারতের ত্রিপুরায়। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে আরো কয়েকজন সহযোদ্ধা নিয়ে ফিরে আসেন চাঁদপুরে। সদর উপজেলার বাবুরহাট থেকে শুরু করে মতলব বাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথ শত্রু মুক্ত করতে অস্ত্র নিয়ে অপেক্ষায় থাকতেন তিনি। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারের মুখোমুখি হন তিনি ও তার সতীর্থরা। এর সঙ্গে থাকা বাশার, নজরুল, হানিফ আরো কয়েকজন। বীরদর্পে লড়েছেন তারা। সহযোদ্ধাদের কয়েকজন আহত হলেও পিছু হটেননি কখনো। শেষ পর্যন্ত ৮ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্থাৎ চাঁদপুর শত্রু মুক্ত হয়।</p> <p>৫৩ বছর আগের সেই আনন্দ আর উচ্ছ্বাস আজও ভুলে যাননি বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ হোসেন তালুকদার। পেশায় ব্যবসায়ী তিনি। স্ত্রী, চার ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে বেশ স্বচ্ছতার সঙ্গে জীবনযাপন করছেন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও অতীতের বীরত্ব গাঁথা বিস্মৃত হয়নি বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজের।</p> <p>মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন সিরাজ হোসেন তালুকদারসহ আরো তিন শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা প্রদান করে। </p> <p>চাঁদপুর ক্লাবে এই আয়োজন সম্পর্কে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন বলেন, ১৯৭১ সালে যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজকের এই বাংলাদেশ। তারা যতোদিন বেঁচে থাকবেন। ততোদিন পর্যন্তই নয়, এই দেশ, এই মানচিত্র যতোদিন থাকবে জাতি ততোদিন এসব বীরদের সম্মান ও স্মরণ করবে। অনুষ্ঠানে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিবসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। </p>