<p>ফরিদপুরের ভাঙ্গার মৃৎশিল্প পরিবারগুলো চরম দৈন্যের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। মাটির তৈরি পণ্যের চাহিদা ক্রমে কমে যাওয়ায় তারা বেকার হয়ে পড়েছে। ফলে পৈতৃক পেশার প্রতি তাদের আগ্রহ দিন দিন কমে যাচ্ছে। মাটির তৈরি পণ্যের স্থান দখল করেছে প্লাস্টিক এবং অ্যালুমিনিয়ামের পণ্য। প্লাস্টিকের পণ্য সহজলভ্য হওয়ায় মাটির বাসন-কোসনসহ অন্যান্য পণ্যের চাহিদা কমে গেছে।</p> <p>বর্তমানে তারা শুধু গরুর পানি খাওয়ার বোল, দইয়ের পাতিল, শিশুদের খেলনা এবং পিঠা তৈরির সাজের মতো সীমিত কিছু পণ্যের অর্ডার পাচ্ছে। কিছু পরিবার পূজার সময় দেব-দেবীর মূর্তি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছে। অনেকে আবার পৈতৃক পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছেন।</p> <p>ভাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এখনো ১০০ থেকে ১৫০টি পাল পরিবার পৈতৃক পেশায় নিয়োজিত। ঘারুয়া, মালিগ্রাম, সিঙ্গারিয়া, শরীফাবাদ ও কালামৃধা গ্রামের পাল পরিবারের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। পরিবারের সবাই একসঙ্গে কাজ করেও তারা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অর্থাভাবে তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও কাজ করলেও পৈতৃক পেশাকে এগিয়ে নিতে পারছেন না।</p> <p>একসময় বৈশাখী মেলা, পূজা ও ঈদ উৎসবে মাটির পণ্যের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। শিশুদের জন্য পুতুল, মাটির ব্যাংক, রান্নার খেলনা, হাড়ি-পাতিলসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে তারা ভালো আয় করতেন। কিন্তু প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম এবং স্টিলের পণ্যের সহজলভ্যতায় মাটির পণ্যের চাহিদা তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে। প্লাস্টিকের পণ্য দামে সস্তা এবং বহনে আরামদায়ক হওয়ায় তা বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।</p> <p>পালপাড়াগুলো ঘুরে দেখা গেছে, তারা এখন এঁটেল মাটি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। ঘারুয়া ইউনিয়নের শরীফাবাদ গ্রামের নরেশ পাল বলেন, ‘এক ট্রাক এঁটেল মাটির দাম ২২০০ টাকা, যা দিয়ে ১০০টি পাতিল তৈরি হয়। এতে ১২০০ টাকার লাকড়ি লাগে। এত খরচ করেও যে টাকা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালানো যায় না। প্রয়োজনীয় পুঁজি না থাকায় আমরা পেশা পরিবর্তনের চিন্তা করছি। সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে চাকরি বা অন্য ব্যবসায় যুক্ত করতে চাই।’</p> <p>হামিরদী ইউনিয়নের সিঙ্গারিয়া পালপাড়ায় জালের কাঠি ও দইয়ের পাতিল তৈরির কিছু কাজ চলছে। রঞ্জিত পাল (৭০) জানান, জন্ম থেকেই মাটির পণ্য তৈরি করছি। কিন্তু বর্তমানে মাটির দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং চাহিদা কমে যাওয়ায় পেশায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।</p> <p>একই গ্রামের জোৎস্না রানী পাল বলেন, জালের কাঠির চাহিদা নেই। চায়না জালের আগমনে জালের কাঠি তৈরির দিন শেষ হয়ে গেছে।</p> <p>ঘারুয়া গ্রামের নরেশ পাল আরও বলেন, ‘পৈতৃক পেশা ধরে রাখতে চাইলেও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এটি টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। সন্তানদের এ পেশায় উৎসাহিত করছি না। তবে যতদিন বাঁচব, পেশাকে ধরে রাখার চেষ্টা করব।’</p> <p>মাটির পণ্যের দিন যতই শেষ হয়ে আসুক, পৈতৃক পেশার প্রতি তাদের আবেগ এখনো অটুট। তবে চরম দৈন্যের কারণে নতুন প্রজন্ম এই পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।</p>