আসন্ন ঈদুল ফিতরে ছুটি নিয়ে বাড়ি এসে আদরের দুই মেয়ে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উৎযাপন করার কথা দিয়েছিলেন বিজিবিতে কর্মরত মো. বেলাল হাসান। ছাত্র জীবন থেকেই কর্তব্য পালনে অটুট বেলাল চাকুরি থেকে ছুটি নেওয়ার আগেই জীবন থেকে ছুটি নিলেন।
বিজিবি সদস্য মো. বেলাল হাসান (৩১) কর্তব্যরত অবস্থায় কক্সজারের টেকনাফে মৃত্যুবরণ করেছেন। রবিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ গোলারচর এলাকায় বঙ্গোপসাগর থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।
ছাত্র জীবন থেকে মানবিক ও সামজিক কাজে সবার আগে থাকা বেলাল হাসানের এমন করুণ মৃত্যুর সংবাদে আশপাশের কয়েক গ্রাম জুড়ে নেমেছে শোকের ছায়া। আর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। পুত্র শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা নাছিমা আক্তার। অতি শোকে পাথর হওয়া স্ত্রী দুই কন্যা সন্তান নিয়ে বাড়িতে আসা লোকজনের দিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন।
নিহত বিজিবি সদস্য মোহাম্মদ বেলাল হাসান কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার ১৯ নং দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে। বেলালের দেড় বছরের আনহা বিন হাসান ও আট বছর বয়সের আন নাফি নামের দুটি কন্যা সন্তার রয়েছে।
গতকাল সোমবার সকালে নিহতের বাড়িতে গিয়ে চোখে পড়ে মায়ের কোলে ১৮ মাসের অবুঝ শিশু আনহা বিন হাসান। পিতার আদর সোহাগ বোঝার বয়স হয়নি তার এখনও।
বাবা শব্দের সঙ্গে পরিচিত হবার আগেই পিতাকে হারিয়ে ফেলে পরিবারের অন্যসব সদস্যের মতেই মা রোকসানা খানমের কোলে বসে কান্না করছে সে।
বাড়ির উঠোনে নিহতের মা উপস্থিত লোকজনের কাছে ছেলের স্মৃতি চারণ করে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বাবা বজলুর রহমান তিনিও যেন বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। তাদেরকে দেখতে আসা লোকজনের মুখেও নেই শান্তনার ভাষা। কারো কারো চোখ বেয়ে পড়ছে পানি, কেওবা করছেন স্মৃতিচারণ।
বেলা এগারোটায় জানাযা শেষে কাজিয়াতল গ্রামের কবরস্তানে তাকে দফন করা হয়।
নিহতের ভাই নাজমুল হাসান বলেন, 'শনিবার বিকেলে বিজিবি থেকে আমাদের বাড়িতে দুজন লোক আসে। এসে বলে আমার ভাই বেলাল হাসান শুক্রবার রাতে কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা উদ্ধার করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। তাকে এখনো পাওয়া যায় নি।'
তিনি আরো বলেন, 'রবিবার দুপুরে আমরা কুমিল্লা বিজিবি ক্যাম্পে যাওয়ার পরপর সেখানে খবর আসে যে, রাখাইন এলাকায় আমার ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে। প্রশ্ন হলো যে, আমার ভাই শুক্রবার নিখোঁজ হয়েছেন। আমাদের জানানো হয়েছে শনিবার বিকেলে। এর কারণ কি? এর পিছনে কোনো রহস্য আছে কি না এটা খতিয়ে দেখা দরকার।'
নিহতের বাবা বজলুর রহমান বলেন, 'আমার ছেলের মৃত্যুটা রহস্যজনক মনে হচ্ছে। মনে হয় কিছু গোপন করা হয়েছে।'
নিহতের স্ত্রী রোকসানা খনম বলেন, 'কথা ছিল ২৫ তারিখে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসবেন। বাড়িতে ঈদ করবেন। এখন আমাকে অথৈ সাগরে ভাসিয়ে সে চিরকালের জন্য ছুটি নিয়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। দুটি অবুঝ শিশু সন্তান নিয়ে আমি এখন কোথায় দাঁড়াব!'
জানা যায়, শুক্রবার গভীর রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্রে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাডুবি হয়। এ ঘটনায় নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করে বিজিবি। ওই সময় বিজিবির সদস্যসহ আরো বেশ কিছু রোহিঙ্গা নিখোঁজ হন।
পরে রবিবার দুপুরে কক্সবাজারের টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ গোলারচর এলাকায় বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ হওয়া বিজিবি সিপাহি মো. বিল্লাল হাসানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, সরকারি ভাবে কোনো নির্দেশনা আসলে আমরা তার পরিবারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।