<p style="text-align:justify">মো. আবুল হাসেম শিকদার (৫০)। তার বাবা ছিলেন কৃষক। মাত্র একযুগ আগেও মাঠে ছিল না তাদের তেমন জমি-জমা। জরাজীর্ণ ঘরে করতেন বসবাস। শুধু নিজের পরিবার নয়, শ্বশুর বাড়ির পরিবারেও ছিল না তেমন কোনো সম্পদ। অথচ হাসেম ডিসি অফিসে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী চাকরি পেয়ে নিজের ও শ্বশুর বাড়ির পরিবারের ভাগ্য বদলে ফেলেছেন। </p> <p style="text-align:justify">ফরিদপুর ডিসি অফিসে (ভূমি অধিগ্রহণ শাখায়) ট্রেসার হিসেবে নিযোগ পাওয়ার পর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি। এখন হাসেমের নিজের ও শ্বশুর বাড়ির এলাকার মাঠে ফসলি জমির অভাব নেই। </p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"> <p style="text-align:justify"><strong>আরো পড়ুন</strong></p> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3" style="text-align:justify"><img alt="ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা মামলার আসামি কনস্টেবল সুজন" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/01/12/1736663111-df7084a6b83e4594afb89677cc19fe8e.jfif" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p style="text-align:justify">ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা মামলার আসামি কনস্টেবল সুজন</p> </div> </div> </div> <p style="text-align:justify"><a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/Court/2025/01/12/1467759" target="_blank"> </a></p> </div> </div> <p style="text-align:justify">ঢাকা ও ফরিদপুর শহরেও একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে। নিজের ও স্ত্রী-সন্তানদের রয়েছে একাধিক গাড়ি ও আইফোন। যেন ডিসি অফিসের এক চাকরিতেই আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন হাসেম। অনিয়মের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রয়েছে। দুদুকেও অভিযোগ রয়েছে। এর আগে দুর্নীতির দায়ে তাকে বরখাস্তও করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">আবুল হাসেম ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের জীবন শিকদারের ছেলে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট হাসেম। হাসেম বর্তমানে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ শাখার অধিনে আলফাডাঙ্গা উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে কর্মরত আছেন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"> <p style="text-align:justify"><strong>আরো পড়ুন</strong></p> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3" style="text-align:justify"><img alt="৩ দফা দাবিতে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের মানববন্ধন" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/01/12/1736662488-ec44744ab36e8094482d9fd6d0f703b8.jpeg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p style="text-align:justify">৩ দফা দাবিতে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের মানববন্ধন</p> </div> </div> </div> <p style="text-align:justify"><a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2025/01/12/1467756" target="_blank"> </a></p> </div> </div> <p style="text-align:justify">শনিবার (১১ জানুয়ারি) আবুল হাসেমের প্রতিবেশী আব্দুল ওহাব কালের কণ্ঠকে বলেন, হাসেমরা পাঁচ ভাই। এর মধ্যে তিন ভাই অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এক ভাই একটি মিলে চাকরি করেন। আর হাসেম ডিসি অফিসে কর্মচারী হিসেবে চাকরি করছেন। তাদের বাবার যে সম্পত্তি ছিল, তা ভাগ করে মাত্র ২৫ শতাংশ করে জমি একেক ভাই ভাগে পেয়েছেন। </p> <p style="text-align:justify">তারা বসবাস করতেন জরাজীর্ণ ঘরে। কিন্তু হাসেমের এখন বাড়ি-গাড়ি ও সম্পত্তির অভাব নেই। নিজ এলাকায় প্রায় দুই কোটি টাকার বন্ধকী জমি রেখেছেন। স্থানীয় নকুলহাটি বাজারে ২টি দোকান ও ২৪ শতাংশ জমি রয়েছে তার। এ ছাড়া শ্বশুর বাড়িও অন্তত দুই কোটি টাকার সম্পত্তি কিনেছেন হাসেম। এত টাকা কোথায় পেল জানি না।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"> <p style="text-align:justify"><strong>আরো পড়ুন</strong></p> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3" style="text-align:justify"><img alt="বিবিএস-এর ১৮ কোটির ৫ জরিপে ভ্রমণ ব্যয় ৯ কোটি!" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/01/12/1736661669-97f744e8e0c0798c483a7ec0078aae9a.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p style="text-align:justify">বিবিএস-এর ১৮ কোটির ৫ জরিপে ভ্রমণ ব্যয় ৯ কোটি!</p> </div> </div> </div> <p style="text-align:justify"><a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2025/01/12/1467752" target="_blank"> </a></p> </div> </div> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, আমাদের এলাকার অনেককে সরকারি জমি দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছে বলে জেনেছি। হাসেম এলাকায় আসলে নিজের দামি গাড়ি নিয়ে আসে। তার স্ত্রীরও গাড়ি রয়েছে। অন্যদিকে অন্তত ১০টি সিএনজি গাড়ি রয়েছে তার। এসব সিএনজি ভাড়া দেওয়া রয়েছে। পরিবারের নারী সদস্যদেরও অন্তত কোটি টাকা স্বর্ণাংলকার রয়েছে। </p> <p style="text-align:justify">হাসেমের দুই ছেলে। এক ছেলে দিল্লিতে লেখাপড়া করে। আরেক ছেলে ফরিদপুরের লক্ষীপুরে আলিশান বাড়ি ভাড়া করে থাকেন। ছেলেদের হাতে সব সময় থাকে নিউ মডেলের আইফোন।  </p> <p style="text-align:justify">সালথার রামকান্তপুর গ্রামের নাসির তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, সালথা বাইপাস সড়কে আমার শ্বশুরের ১ শতাংশ জমি ছিল। ওই জমি অধিগ্রহণের ৩৩ লাখ টাকা পান আমার শ্বশুর। কিন্তু ডিসি অফিসের হাসেম সেই সময় আমার শ্বশুর কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে রেখে দেন। এখন ওই টাকা চাইলে হাসেম বলেন, টাকা স্যার নিয়ে গেছে। আমি কোথা থেকে দেব।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"> <p style="text-align:justify"><strong>আরো পড়ুন</strong></p> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3" style="text-align:justify"><img alt="চাঁদপুরে আবারও শ্রেষ্ঠ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহআলম" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/01/12/1736660432-c82d87b4c0e747bf261e43176ce5ea00.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p style="text-align:justify">চাঁদপুরে আবারও শ্রেষ্ঠ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহআলম</p> </div> </div> </div> <p style="text-align:justify"><a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2025/01/12/1467751" target="_blank"> </a></p> </div> </div> <p style="text-align:justify">হাসেমের শ্বশুর বাড়ি বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর এলাকায়। তাঁর শ্বশুরের নাম আনো মাতুব্বর। জানা গেছে, হাসেম তার শ্বশুরের নামে অন্তত ১০ বিঘা জমি কিনেছেন দাদপুর মাঠে। যদিও হাসেমের শ্বশুর দাবি করে বলেন, আমার জামাই আমার এলাকায় কোনো জমি কিনেননি। বিগত ৮-৯ বছরে আমি নিজেই ৮ বিঘা জমি ক্রয় করেছি। যার মূল্য কোটি টাকারও বেশি।</p> <p style="text-align:justify">অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফরিদপুর শহরের তেতুলতলা মোড় এলাকায় নির্মাণাধীন দুটি বহুতল ভবনে কোটি টাকার দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে হাসেমের। ওই ফ্ল্যাট দুটির মাঝে ফাঁকা জায়গায় দুটি দাগের ৩৫ শতাংশ ও ১৪ শতাংশ জমিতেও শেয়ার রয়েছে তাঁর। ওই এলাকার প্রতি শতাংশ জায়গার মূল্য ৩০ লাখ টাকার বেশি। ঢাকায়ও দুটি বহুতল ভবনে তার শেয়ার রয়েছে বলে জানা গেছে। ওই ভবন দুটি কাজ চলমান রয়েছে। সাভারেও জমি রয়েছে তার। আলফাডাঙ্গায় জায়গা ক্রয় করে ফ্ল্যাট তুলে ভাড়া দিয়েছেন। ফরিদপুর নিউ মার্কেটে তিনটি দোকানও রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রাজস্ব শাখায় ট্রেসার পদে যোগদান করেন হাসেম। তখন তার বেতন স্কেল ছিল ১৭ তম গ্রেডে। বর্তমানে তার বেতন ১৩ তম গ্রেডে। ট্রেসার হিসেবে দীর্ঘদিন ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কর্মরত থাকাকালে ফরিদপুর-ভাঙ্গা মহাসড়কের চারলেন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের সময় ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন হাসেম।</p> <p style="text-align:justify">ফরিদপুর শহরের বাইপাস সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য অধিগ্রহণের খবরে সদরের গোয়ালচামটের খোদাবক্স এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার মঞ্জুর আলী গংয়ের জমি হাসেম ৭টি দলিলের মাধ্যমে নিজ আত্মীয়-স্বজনদের নামে ক্রয় করেন। পরবর্তীতে তা অধিগ্রহণ হয়। এসব দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয় প্রমাণিত হওয়ায় গত বছরের ২ নভেম্বর সাময়িকভাবে বরখাস্তের আদেশ করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক। বর্তমানেও ওই আদেশ জারি রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">তবে এসব দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে মো. আবুল হাসেম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জমি-জমা নিয়ে ঝামেলার কারণে আমার বিরুদ্ধে এক মুক্তিযোদ্ধা বিভাগীয় কমিশানারের কার্যালয়ে, দুদুকে ও ডিসি অফিসে অভিযোগ দিয়েছেন। এসব অভিযোগের তদন্ত রির্পোট চলে গেছে। এতে আমার কিছুই হবে না। আমি চাকরির পাশাপাশি জমির ব্যবসা করে সম্পদের মালিক হয়েছি, দুর্নীতি-অনিয়ম করে নয়। আমি একটি জমি ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যস্থতা করে ৪২ লাখ টাকা পেয়েছিলাম।'</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"> <p style="text-align:justify"><strong>আরো পড়ুন</strong></p> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3" style="text-align:justify"><img alt="নগরকান্দায় বাস-ট্রাক সংঘর্ষে প্রাণ গেল দুইজনের" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/01/12/1736660030-6ab58e0d6b4c6363bea7280ced3898dc.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p style="text-align:justify">নগরকান্দায় বাস-ট্রাক সংঘর্ষে প্রাণ গেল দুইজনের</p> </div> </div> </div> <p style="text-align:justify"><a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2025/01/12/1467750" target="_blank"> </a></p> </div> </div> <p style="text-align:justify">আজ রবিবার (১২ জানুয়ারি) বেলা ১১ টার দিকে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'হাসেমের বিষয়ে দুদুকে মামলা চলছে। আমরাও তদন্ত করছি। হাসেম কোন অফিসে চাকরি করে, এটা কোনো বিষয় না। দুর্নীতিবাজ যত বড়ই হোক, একবিন্দু ছাড় দেওয়া হবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স।'</p>