<p>বাংলাদেশ পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) পদে চাকরি ফিরে পেতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মামুনুর রশীদ মামুনের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচির পালন করছে।</p> <p>গত দুই দিন ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা অভিযোগে চাকরি হারানো ৩২১ জন পুলিশ এসআই। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতা মামুনুর রশীদ মামুন।</p> <p>জানা গেছে, মামুনুর রশীদ মামুন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ছাত্রলীগের সহসম্পাদক এবং পরবর্তী কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তৃতীয় কমিটিতে সভাপতির পদ প্রত্যাশা করলেও তা না পেয়ে লভিং করে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য পদ পান।</p> <p>বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের মতে, মামুন ছাত্রলীগের পরিচয় ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, মাদক সেবন এবং শিক্ষার্থীদের মারধরের মতো নানা অপকর্মে জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে প্রক্টর অফিসে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হলে সিট বাণিজ্য এবং মাদক সেবনের ঘটনা।</p> <p>দিনাজপুরের বাসিন্দা মামুন সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আবু হুসাইন বিপুর সঙ্গেও তার সখ্যতা ছিল।</p> <p>বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম জানান, ‘মামুন খুব প্রভাবশালী ছিলেন। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস করত না। তিনি ক্ষমতার প্রদর্শন করতে নিয়মিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে ছবি পোস্ট করতেন।’</p> <p>অভিযোগ রয়েছে, মামুনুর রশীদ মামুন অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পুলিশের এসআই পদে নিয়োগ পান। এ নিয়োগে খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সুপারিশ ছিল বলে জানা যায়।</p> <p>চাকরি থেকে বাদ পড়ার পর এসআইদের আন্দোলনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্ব নিয়ে ছাত্র-জনতার মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার মামুনের একটি ভিডিও বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হলে বিতর্ক আরো তীব্র হয়।</p> <p>বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক এস এম আশিকুর রহমান বলেছেন, পুলিশ প্রশাসনে যে অধিকাংশ নিয়োগ ছাত্রলীগ কোটায় হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাদের মধ্য থেকে একদল ছিল, যারা পুলিশের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করছিল এবং তাদের মধ্যে কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত যথাযথ এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে আমরা মনে করি।</p> <p>প্রশাসনে স্বৈরাচারের দোসরদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের নেতৃত্বে অনশন বা অন্য কোনো অজুহাতে প্রশাসনে তাদের পুনর্বহালের যে অপচেষ্টা চলছে, তা রুখে দিতে হবে। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, স্বৈরাচারের দোসরদের প্রশাসনে কোনো স্থান নেই। তাদের অপতৎপরতা রুখতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত। প্রয়োজনে আবার রাজপথে নামব, কিন্তু কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।</p> <p>রংপুর মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকার বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা পালানোর পরও আওয়ামী লীগের দোসরদের উত্থান হয়েছে। তাদের শৃঙ্খলা আইন ভঙ্গ করার কারণসহ ও সুনির্দিষ্ট যৌক্তিক কারণে অনেককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। যৌক্তিক আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে কিছু অযৌক্তিক মানুষ ষড়যন্ত্র করছে। তাদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে যদি নিষিদ্ধ সংগঠনের তথ্য পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হক।’</p> <p>তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামুনুর রশীদ মামুনকে একাধিক বার কল দিলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।</p>