কুমিল্লায় অবাধে মাটি কেটে ক্ষত-বিক্ষত করা হচ্ছে একসময়ের খরস্রোতা গোমতী নদী ও চর। শীত আসার পর পরই দুপাশের বাঁধ কেটে ওঠানামা করছে শত শত ট্রাক্টর। রাতদিন মাটিবাহী ট্রাক্টর চলাচলে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন নদীর দু-পারের বাসিন্দারা। ধুলায় বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ।
কুমিল্লায় অবাধে মাটি কেটে ক্ষত-বিক্ষত করা হচ্ছে একসময়ের খরস্রোতা গোমতী নদী ও চর। শীত আসার পর পরই দুপাশের বাঁধ কেটে ওঠানামা করছে শত শত ট্রাক্টর। রাতদিন মাটিবাহী ট্রাক্টর চলাচলে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন নদীর দু-পারের বাসিন্দারা। ধুলায় বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ।
এদিকে গোমতী চরের মাটি কাটার প্রতিরোধে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন ভুক্তভোগী শত শত ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক। তারা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপিও প্রদান করেছেন।
জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসূত্রে জানা গেছে, গোমতীর উৎপত্তিস্থল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উদয়পুরে। এই নদীটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার কটকবাজার এলাকা দিয়ে। পরে জেলার আদর্শ সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, তিতাস ও দাউদকান্দি উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় গিয়ে মিশেছে। বাংলাদেশ অংশে এ নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ কিলোমিটার।
গত বুধবার (২২ জানুয়ারি) রাত ৮টার পর দেবিদ্বার উপজেলার অংশের খলিলপুর, বিনাইপাড়, চরবাকর, বড় আলমপুর, চান্দপুর, লক্ষীপুর, কালিকাপুর-নয়াপাড়া এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শত শত ট্রাক্টর ছুটছে নদীর চরের দিকে, নদীর দুপাশে লাগামহীনভাবে কেটে নেওয়া হচ্ছে কৃষি জমির মাটি। রাতে ট্রাক্টরের শব্দ আর ধুলোয় অতিষ্ঠ গোমতীর পাড়ের মানুষ। তবে এসব এলাকায় দিনের বেলায় কাউকে মাটি কাটতে দেখা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার আদর্শ সদর, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, তিতাস অংশে অর্ধশতাধিক সিন্ডিকেট চক্র চরের সহজ-সরল কৃষকদের ফাঁদে ফেলে মাটি বিক্রি করতে বাধ্য করছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার টিক্কাচর, ছত্রখীল, পালপাড়া, দুর্গাপুর, আমতলী, কাচিয়াতলী, বুড়িচং এর বাবুবাজার, বাজেবাহেরচর, পূর্বহুরাসহ আশপাশের এলাকায় দেখা গেছে একই চিত্র। এসব এলাকায় বর্তমানে ফসল উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
জানা গেছে, এই চক্রের মূলহোতাদের মধ্যে রয়েছেন- দেবিদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম, কালিকাপুর-নয়াপাড়া এলাকার শিষন মিয়া ও দুলাল মিয়া। তারা রাতের আঁধারে মাটি কেটে ছুগুরা গ্রামের লিমা ব্রিকস ও কালিকাপুরের এমএমবি ব্রিকসে নিয়ে যান। একটি চক্র রাতে রাস্তায় বসে ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযানের পাহারা দেন বলেও জানা গেছে। কুমিল্লা আর্দশ সদর এলাকা, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে একই চিত্র। এসব উপজেলার প্রায় শতাধিক ইটভাটায় গোমতীর চরের মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে।
দেবিদ্বার উপজেলার বড়আলমপুর গ্রামের (অব.) সার্জেন্ট নাছির বলেন, ‘এক সময়ে এই চরে বিঘার পর বিঘায় চাষবাস হতো। বর্তমানে ফসল শূন্যে পুরো চর খাঁ খাঁ করছে। কয়েকদিন পর পর অভিযানে দু-একজন শ্রমিক আটক হলেও যারা মূল হোতা তারা ধরে পড়ে না। তারা ধরাছোঁয়ার বাহিরে থেকে এসব পরিচালনা করে।’
আদর্শ সদর উপজেলার টিক্কারচর এলাকার কৃষক মো. সিরাজুল ইসলাম ও আবু হানিফ, দেবিদ্বারের চরবাকর গ্রামের মনু মিয়া, খলিলপুর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন ও শরিফুল ইসলাম জানান, রাতে মাটি কাটা শুরু হয়, চলে ভোর পর্যন্ত। এই চরে সবজি ফলিয়ে রুটি রুজি করতেন এই এলাকার কৃষকরা, আজ তারা পথে বসেছে। জোর করে মাটি কেটে নিচ্ছে, বাঁধা দিলে মারধর করে। আগে আওয়ামী লীগের লোকেরা কাটত এখন বিএনপির লোকেরা কাটে। গেল বন্যায় পানি উঠে চরের ভেতরে বাড়িঘর ডুবে যায়, তখন নিরুপায়ে হয়ে বাঁধের ওপর আশ্রয় নেন তারা।
কয়েকমাস আগের বন্যায় গোমতী বেড়িবাঁধের অনেক স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। সহস্রাধিক মানুষ বস্তায় মাটি ভরে রাত-দিন বেড়িবাঁধের ভাঙনস্থানে সংস্কার করেছেন। পরে ২২ আগস্ট রাত ১০টার দিকে বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ভাঙন দেখা দেয়। এতে কুমিল্লার ৩টি উপজেলা প্লাবিত হয়। এত কিছুর পরও মাটি সিন্ডিকেটকে থামানো যাচ্ছে না। তারা শীত এলেই মাটি কাটা শুরু করে।
এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাটি সিন্ডিকের মূলহোতা জাফরগঞ্জের সিরাজুল ইসলামের মুঠো ফোনে কল করা হলে তিনি এই প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর- এখন ঘুমাচ্ছেন বলে লাইন কেটে দেন। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা শাখার সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভূমিখেকোরা এখন অভিনব কায়দায় রাতে মাটি কাটছে , রাতে তো আর ম্যাজিস্ট্রেট যান না। এটি যদি জেলা প্রশাসন বন্ধ না করতে পারে তাহলে কুমিল্লার ভবিষ্যৎ খুব খারাপ পর্যায়ে পৌঁছবে। কুমিল্লার টিক্কারচর একটি ফসলি আবাদ ভূমি এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখানে নানা সবজি চাষ হত এখন আর কিছুই হচ্ছে না। এভাবে নদী যে যে এলাকায় দিয়ে গেছে সে সে এলাকায় মাটি কাটছে, এখন মূল নদী কোনটা বা কোন দিকের স্রোত কোন দিকে যাচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে না।’
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নদী হচ্ছে সরকারি সম্পত্তি, নদী থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন এটি জেলা প্রশাসক বা স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারেন এটি তাদের এখতিয়ার। আমাদের হলো গোমতীর বেড়িবাঁধ রক্ষার দায়িত্ব। যদি কেউ বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত করে আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করি। এখনো অনেক মামলা চলমান রয়েছে।’
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো.আমিরুল কায়ছার বলেন, ‘গোমতী চরের মাটি কাটার বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।’
সম্পর্কিত খবর
ঠাকুরগাঁও জেলা কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ করাতে দুই কারারক্ষীর ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে জেলা কারাগারের সহকারী প্রধান কারারক্ষী আমিনুল ও কারারক্ষী রহিমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বুধবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুষ লেনদেনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে কারা কর্তৃপক্ষ এ ব্যবস্থা নেয়।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, কারারক্ষী রহিম এক বন্দির স্বজনের সঙ্গে কথা বলছেন। সেখানে স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে টাকা লাগবে এমন দরদাম করছেন।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা সাময়িক বরখাস্তের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ওই ভিডিওটি নজরে আসার পর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় লেগুনার সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে আব্দুর রাজ্জাক (৪৫) নামে এক নিহত হয়েছেন। নিহত আব্দুর রাজ্জাক দামুড়হুদা উপজেলার হাতিভাঙ্গা গ্রামের মৃত আলী বক্সের ছেলে। তিনি পেশায় ছানা ব্যবসায়ী। মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা মহাসড়কে দামুড়হুদা হাসিনা মার্কেটের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাজ্জাক রাত ৮টার দিকে চুয়াডাঙ্গা থেকে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে চুয়াডাঙ্গা-দামুড়হুদা মহাসড়কের হাসিনা মার্কেটের সামনে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা যাত্রীবাহী লেগুনার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সড়কে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন রাজ্জাক। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. তাসনিম আফরিন জ্যোতি বলেন, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবীর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন বলে শুনেছি। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি।
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফরিদপুর চরভদ্রাসনের পদ্মা নদীর অভয়াশ্রমে জাটকা ইলিশ ধরার দায়ে ৫ জেলেকে ১৫ দিন করে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন চরভদ্রাসন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিশাত ফারাবী।
কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জেলেরা হলেন মো. জহির মিয়া, মো. নুরুল ইসলাম, মো. বেনু হোসেন, রুহুল আমিন, এবাদত আলী। এদের বাড়ি দোহার ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায়।
জাটকা রক্ষার যৌথ অভিযানে অংশ নেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সরকার, জেলা মৎস্য দপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদ, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাঈম হোসেন বিপ্লব, ক্ষেত্র সহকারী মুহাম্মদ শামিম আরেফিন, ক্ষেত্র সহকারী (ইলিশ প্রকল্প) মো. নাহিদুজ্জামান নাহিদ, উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সার্টিফিকেট পেশকার রাসেল মুন্সীসহ চরভদ্রাসন থানা পুলিশ সদস্যরা।
বিষয়টি কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করে চরভদ্রাসন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাঈম হোসেন বিপ্লব বলেন, দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার পদ্মা নদীর চর ঝাউকান্দা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান থেকে এসব জেলেদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের হেফাজতে থাকা ২ হাজার মিটার নিষিদ্ধ কোনা জাল, ৫০০ মিটার নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, ১০ কেজি জাটকা ও একটি মাছ ধরার নৌকা জব্দ করা হয়। টাকার অঙ্কে যা প্রায় ১০ লাখ টাকার সমপরিমাণ।
তিনি আরও বলেন, জব্দকৃত নৌকা উপজেলা প্রশাসনের হেফাজতে রয়েছে এবং জাটকাগুলো স্থানীয় বোডিং মাদরাসা ও এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে। জব্দকৃত কোনা ও কারেন্ট জাল আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়েছে।
নেত্রকোনার মদনে ৬০০ পিস ইয়াবাসহ জাহান মিয়া (২৭) ও লিজন মিয়া (২৩) নামের দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। বুধবার রাত আনুমানিক ২ টার দিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে তাদের নিজ বাড়ি থেকে আটক করেন।
আটক জাহান মিয়া ও লিজন মিয়া উপজেলার নায়েকপুর ইউনিয়নের আলমশ্রী গ্রামের মৃত ইনচান মিয়ার ছেলে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জাহান মিয়া ও লিজন মিয়া সম্পর্কে আপন দুই ভাই।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নেত্রকোনা কার্যালয়ের ইন্সপেক্টর আল আমিন জানান, বুধবার রাতে জাহান ও রিজন নামের দুই সহোদর ভাইকে আটক করা হয়েছে। তাদের বসতঘর থেকে ইয়াবা, টাকা ও মোবাইল ফোনসহ তাদের ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র জব্দ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হবে।