তিস্তার বাংলাদেশ অংশের ১১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বন্যা খাড়ায় ভাঙনে দিশেহারা মানুষজন আসছেন তিস্তা নিয়ে করণীয় শীর্ষক ‘গণ শুনানিতে’। কেউ আসছেন নদী পথে, কেউ আসছেন সড়ক পথে, কেউ কেউ আসছেন রেলপথে। তাদের হাতে নানা স্লোগানের প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট থেকে এসেছেন গোলাম মোস্তফা।
তার হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা- ‘উত্তরবঙ্গকে মরুভূমি বানানোর চক্রান্ত রুখে দাও’। তিনি বলেন, ‘বন্যায় পানিতে ভেসে যায় আমাদের এলাকা। আবার বন্যা মৌসুমেই বড় বড় চর জেগে ওঠে। আর খড়া মৌসুমে মরুভূমি হয়। পানির জন্য হাহাকার পড়ে এই অঞ্চল। আমরা আমাদের অঞ্চলকে মরুভূমি হতে দেবো না।’
জানা গেছে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আগ্রহ থাকলেও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তিস্তার পানির হিস্যা দিতে নারাজ। নানামুখী সংকটের আশঙ্কায় এখন তিস্তা পারের মানুষ ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ বাস্তবায়নে ভারত ও চীনের আগ্রহ প্রকাশের পাশাপাশি দুই পরাশক্তির টানাপোড়েনে বহু আকাঙ্ক্ষিত এই প্রকল্প যেন ভেস্তে না যায়-সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন তিস্তা পারের মানুষ।
আরো পড়ুন
শিক্ষকদের জন্য আগামী বাজেটে কিছু করার চেষ্টা করছি : অর্থ উপদেষ্টা
নদী অধিকার কর্মীরা বলছেন, চীন-ভারতের টানাপোড়েনে এই প্রকল্প ঝুলে গেলে তৈরি হবে নানা সংকট।
কাউনিয়ার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তিস্তা নিয়ে টানাটানি দেখতে চাই না। ভারত না চীনকে অর্থ দেওয়া হবে তা নদীপারের মানুষ বোঝে না। রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলার কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ খেলার অধিকার রাখে না।
দেশে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে কিন্তু রংপুর অঞ্চল কোনো প্রকল্পই পাচ্ছে না, এই বৈষম্য দূর করতে হবে।’
জানা গেছে, তিস্তা মহাপরিকল্পনার বিষয়টি নিয়ে ২০১৮ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পাওয়ার চায়না যৌথ সমীক্ষা শেষ করে। এরপরই এ প্রকল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে চীন। তবে একই প্রকল্পে ভারতের কারিগরি দল পাঠানো ও নতুন করে সমীক্ষার প্রস্তাব, বিনিয়োগ এবং একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সরাসরি বিরোধিতা নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন।
আরো পড়ুন
ছত্তিশগড়ে নিরাপত্তাবাহিনীর দুই সদস্যসহ ৩৩ মাওবাদী নিহত
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ও নদী গবেষক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘যে দেশ তিস্তার পানি শোষণ করছে দীর্ঘ সময়, তিস্তাকে মেরে ফেলার সব আয়োজন করেছে—তাদের এমন প্রস্তাব শুধু সময়ক্ষেপণ। ২০১৪ সালের পর একতরফা পানি প্রত্যাহার করছে ভারত। যেখানে শুধু সই করলেই তিস্তা চুক্তি হয়ে যায়, সেখানে নতুন করে তিস্তা প্রকল্পে সমীক্ষা করতে কারিগরি টিম পাঠানো এই প্রকল্পকে বিলম্বিত করবে।’
আজ রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে তিস্তা নিয়ে করণীয় শীর্ষক গণ শুনানিতে এই অঞ্চলের মানুষের সরাসরি কথা শুনবেন সরকারের দুই উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও হাসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া