শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের তেতুলিয়া এলাকায় ডাকাতি করে পালানোর সময় গণপিটুনিতে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় দুটি মামলা করেছে পুলিশ। পালং মডেল থানায় গতকাল শনিবার রাতে অস্ত্র আইনে ও ডাকাতির প্রস্তুতির ঘটনায় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা দুটি দায়ের করেন।
মামলায় গণপিটুনিতে আহত পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং আরো ৮-১০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে, তিনি হলেন এবাদুল বেপারী, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কানারগাঁও এলাকার বাসিন্দা।
আরো পড়ুন
রংপুর মেডিক্যালে ইনডোর-আউটডোর সেবা বন্ধ, দুর্ভোগে রোগীরা
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একদল সংঘবদ্ধ ডাকাত মাদারীপুরের কালকিনির রাজারচর এলাকায় কীর্তিনাশা নদীতে বাল্কহেডে ডাকাতির চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাদের ধাওয়া দেয়। তখন ডাকাতরা ফাঁকা গুলি ছোড়ে গুলিতে বাল্ক হেডের শ্রমিক পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার মাসুম মিয়া (৩০) ও পিরোজপুরের কালিকাঠীর আলামিন ফকির (১৯) গুলিবিদ্ধ হয়। পরে ডাকাতরা পালিয়ে শরীয়তপুরের আঙ্গারিয়ার ভাসানচর এলাকায় ঢুকে পড়ে।
এরই মধ্যে ডাকাতির খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা সতর্ক হয়ে যান।
আরো পড়ুন
রাউজানের বাজারে আগুন লেগে ২ দোকান ভস্মীভূত
ওইখানেও বাল্কহেডের শ্রমিকরা বাধা প্রদান করে। পরে ডাকাতরা আবার কীর্তিনাশা নদী দিয়ে পালানোর সময় রাজগঞ্জ এলাকা দিয়ে নদীপথে বের হওয়ার চেষ্টা করে। তবে স্থানীয়রা বাল্কহেড দিয়ে ডোমসার এলাকার তেতুলিয়া গ্রামের নদীপথ আটকে দেয়।
বাধা পেয়ে ডাকাতরা স্পিডবোট তীরে রেখে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয় জনতা তাদের ধাওয়া করে। এ সময় ডাকাতরা হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটায় এবং এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এ সময় ডাকাতদের গুলিতে বাল্ক হেডের শ্রমিক ডোমসার মোল্লা কান্দি এলাকার তোতা মিয়া (৩৫) ও স্থানীয় ১জন আহত হন।
আরো পড়ুন
নির্বাচন দিতে দেরি হলে ষড়যন্ত্র বাড়বে : সালাহউদ্দিন
পরে স্থানীয় জনতা তাদের ঘেরাও করে সাতজনকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। পিটুনিতে ঘটনাস্থলেই দুইজনের মৃত্যু হয় এবং শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজনের মৃত্যু হয়।
আহত পাঁচজনকে বর্তমানে পুলিশ পাহারায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
মামলার আসামিরা হলেন, মুন্সিগঞ্জের কালিয়ারচরের রিপন (৪০), বাংলাবাজার এলাকার রাকিব গাজী (৩০), শরীয়তপুরের জাজিরার কুন্ডেরচরের আনোয়ার দেওয়ান (৫০), নাড়িয়ার নশাশন মাঝিকান্দি এলাকার সাঈদ (২৫) ও মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকার সজীব (৩০)।
তাদের মধ্যে চারজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র, একটি কার্তুজ ও একটি স্পিডবোট উদ্ধার করেছে।
আরো পড়ুন
পবিত্র রমজান মাস যেভাবে কাটাবেন
এ ব্যাপারে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আর এম ও) ডা. মিতু আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল থেকে ফিরিয়ে আনা চারজনকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে তাদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ডাকাতি ও গণপিটুনির ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। যেহেতু তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, তাই হত্যা মামলার প্রস্তুতিও চলছে। নিহতদের মরদেহ আইনগত প্রক্রিয়া শেষে হস্তান্তর করা হবে।