সকাল ৯টার আগেই জনসমুদ্রে পরিণত হয় শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান।
আরো পড়ুন
খুলনায় ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা
মুসল্লিদের চলাচলের সুবিধা করে দিতে সকাল থেকে শহরের সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে ভোর থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে শোলাকিয়ায়। সকাল ছয়টার পর থেকে মুসল্লিদের ঢল নামে ঈদগাহ মাঠে। চারদিক থেকে আসা জনস্রোতের গন্তব্যো ছিল এই শোলাকিয়া মাঠ।
জামাত শুরুর ঘণ্টাখানিক আগেই কানায় কানায় ভরে যায় ঈদগাহ। পাশের সড়ক, ফাঁকা জায়গা, নদীর পাড় ও আশপাশের বাসাবাড়ির ছাদে উঠে জামাতে শরিক হতে দেখা যায় অনেককে। এবারও নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সাজানো হয় পুরো আয়োজন। পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, প্রায় এক হাজার ২০০ পুলিশ, শতাধিক র্যাব সদস্য, আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও আনসার সদস্যের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় কঠোর নিরাপত্তাবলয়। এবার প্রথমবারের মতো সেনাসদস্যারা নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যুক্ত হয়। তারা স্ট্রাইকিংফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।
আরো পড়ুন
আমরা পৃথিবীর সব মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করব : সারজিস
নজরদারিতে আকাশে ছিল শক্তিশালী ক্যামেরাযুক্ত পুলিশের ড্রোন ক্যামেরা। মাঠ ও শহরসহ প্রবেশ পথগুলো সিসি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। মাঠে স্থাপিত ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার থেকে দূরবীন নিয়ে নিরপত্তার দায়িত্ব পালন করে র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। শোলাকিয়া মাঠ ও শহরের যত অলিগলি আছে, সবখানে বসানো হয় নিরাপত্তা চৌকি। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করেন। ঈদগাহ এলাকায় তিনটি অ্যাম্বুলেন্সসহ বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল টিম এবং অগ্নিনির্বাপণ দলও মোতায়েন ছিল। স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে ছিল স্কাউট সদস্যরা।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেছেন, উৎসবমুখর, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ ঈদ জামাত আয়োজন করতেই নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এবার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি মুসল্লি জামাতে অংশ নিয়েছে।
গত ৩০ বছর ধরে শোলাকিয়ায় ঈদের নামাজ আদায় করছেন গাজীপুরের আব্দুল খালেক (৬৫)। তিনি জামাতের একদিন আগে ভাতিজাকে নিয়ে কিশোরগঞ্জে চলে আসেন। গতবার নিজের ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন। এবার ভাতিজা নিয়ে এলেন। তিনি বলেন, ‘যতদিন বেঁচে আছি এভাবে সক্ষম সব আত্মীয়স্বজনকে শোলাকিয়ায় নিয়ে আসব। এখানে নামাজ আদায় করলে মনে শান্তি পাই। তাই বারবার আসি। শোলাকিয়ায় আসাটাই আমার ঈদ।’
আরো পড়ুন
পুতিনের ওপর ‘বিরক্ত’ ট্রাম্প, শুল্ক আরোপের হুমকি
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের সিদলা থেকে সাইকেল চালিয়ে এসেছেন আবু তালেবে (৫০)। এবারেরই প্রথম এলেন। এ মাঠের ঐতিহ্যল ও সুনামের কথা তিনি অনেকে শুনেছেন। আশা ছিল আসবেন, কিন্তু আসতে পারেননি। তিনি বলেন, গত বছরও আমার বাবা ঈদে নামাজ পড়তে এসেছিলেন। তিনি মারা গেছেন সম্প্রতি। তাই বাবার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে এসেছি। এত মানুষের সঙ্গে নামাজ আদায় করে ভালো লেগেছে। আগামীতে ছোটভাইকে নিয়ে আসব।
ময়মনসিংহের নান্দাইলের মুসল্লির বাসিন্দা আরাফাত মিয়া (৩২) তিন বছর ধরে ঈদে শোলাকিয়ায় আসেন। তিনি বলেন, এবার নিয়ত করেছিলাম। হেঁটে শোলাকিয়ায় গিয়ে নামাজ আদায় করব। ফজরের নামাজ পড়েই রওয়া হয়েছি। জামাতের আগে পৌঁছে গেছি।
তিনি আরো বলেন, বড় জামাতে নামাজে অংশ নিলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। এ কারণে নিজে থেকে কষ্ট করে এসে ঈদ জামাতে অংশ নিয়েছি।
দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী এবারও শোলাকিয়ার ঈদ জামাত শুরুর পাঁচ মিনিট আগে শটগানে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি ও এক মিনিটি আগে একটি গুলির আওয়াজ করা হয়। এটি নামাজ শুরু করার সংকেত বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন
পুতিনের ওপর ‘বিরক্ত’ ট্রাম্প, শুল্ক আরোপের হুমকি
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফোজিয়া খান বলেন, এবার পাঁচ লক্ষাধিক মুসল্লি শোলাকিয়ায় নামাজ আদায় করেছেন বলে আমাদের ধারণা। এবারের জামাতের ব্যবস্থাপনা ছিল খুবই ভালো। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে মুসল্লিদের।
ঈদের দিন শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে দুটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করে। একটি ট্রেন ভৈরব থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে আসে এবং সকাল ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছায়। অন্যটি ময়মনসিংহ থেকে সকাল পৌনে ৬টায় ছেড়ে আসে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছায়। নামাজ শেষে জামাতে আসা যাত্রীদের নিয়ে আবার গন্তব্যে ফিরে যায় ট্রেন দুটি।
আরো পড়ুন
খুলনায় ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা
কিশোরগঞ্জ শহর থেকে পূর্ব দিকে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত শোলাকিয়া মাঠ। এর আয়তন ৭ একর। প্রায় ২০০ বছর ধরে এই মাঠে বিশাল ঈদের নামাজের জামাত হয়ে আসছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, শোলাকিয়ার সাহেববাড়ির সুফি সৈয়দ আহম্মদ ১৮২৮ সালে তার নিজ জমিতে ঈদের জামাতের আয়োজন করেন। ঈদের প্রথম জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। পরে উচ্চারণ বিবর্তনে সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া এবং সেখান থেকে শোলাকিয়া শব্দটি প্রচলিত হয়েছে।