কুমিল্লার চান্দিনায় চার দিনের ব্যবধানে চার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ সব ঘটনায় চান্দিনা থানায় পৃথক চারটি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই মামলার চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
চার ঘটনার মধ্যে এনজিওর পুরুষ কর্মীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নারী কর্মীকে নগ্ন করে যৌন নির্যাতন, ১১ বছরের ভাতিজিকে ধর্ষণ, ইটভাটায় ১৪ বছরের কিশোরীকে ধর্ষণ এবং এসএসসি পরীক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ।
আসামিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে না পারাকে প্রশাসনের ব্যর্থতা বলেও মনে করছে এলাকাবাসী। ধর্ষকদের দ্রুত গ্রেপ্তারে পৃথক পৃথক বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয় শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।
১৯ মার্চ (বুধবার) সন্ধ্যায় চান্দিনায় সর্বশেষ ঘটনা ঘটে। বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় এসএসসির এক পরীক্ষার্থী।
এই ঘটনায় শুক্রবার সকালে দুজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরো চারজনকে আসামি করে চান্দিনা থানায় মামলা করা হয়। এই ঘটনায় দুজনকে আটক করে পুলিশে দেয় এলাকাবাসী।
আটকরা হলেন কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার জোয়াগ ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের মো. বিল্লালের ছেলে মো. সোয়েব এবং নলুয়া গ্রামে প্রভাত চন্দ্র সরকারের ছেলে রতন চন্দ্র সরকার।
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলে, ‘বন্ধুর দেখা করে বুধবার সন্ধ্যার পর অটোরিকশাযোগে বাড়ি ফিরছিলাম।
পথে ৫-৬ জন যুবক আমার অটোরিকশাটি থামায়। অটোরিকশাচালক ও আমাকে চর থাপ্পড় দিয়ে টেনেহিঁচড়ে একটি স্যালো মেশিনের ঘরে নিয়ে যায় তারা। চালককের হাত-পা বেঁধে আমাকে ধর্ষণ করে পাঁচজন।’
ওই পরীক্ষার্থী আরো বলে, ‘তারা আমাদের সেখানে ফেলে চলে যায়। অনেকক্ষণ পর আমি জ্ঞান ফিরে পেয়ে অটোরিকশাচালকের হাত-পায়ের বাঁধ খুলে দিই।
ওই অটোরিকশাচালক আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দেন। পরদিন সন্ধ্যায় আমি ওই অটোরিকশা নিয়ে আবারও বাজারে গিয়ে দুই ধর্ষককে চিনতে পারি। তাৎক্ষণিক ঘটনাটি বাজারে উপস্থিত মানুষকে অবহিত করলে তাদের আটক করে।’
১৯ মার্চ চান্দিনার একটি ইটভাটায় ঘরে ১৪ বছরের কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে মো. তুহিন (২০) নামের এক শ্রমিকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে শনিবার সকালে তুহিন ও তার দুই সহযোগীকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তুহিনের দুই সহযোগীকে আটক করে পুলিশ
আটকরা হলেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মধ্যকুমরপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মোতালেবের ছেলে আকুল মিয়া (২০), চর বড়াইবাড়ি গ্রামের ছমির আলীর ছেলে আক্রামুল হক আপেল (১৯)। তারা উভয়ই ইটভাটার শ্রমিক।
বুধবার চান্দিনায় ১১ বছরের ভাতিজিকে ধর্ষণের অভিযোগে আবু সাঈদের (২১) বিরুদ্ধে মামলা করে ভুক্তভোগী শিশুর মা।
সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চান্দিনা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড তুলাতলী এলাকায় একটি এনজিওর পুরুষ কর্মীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নারী কর্মীকে যৌন নির্যাতন করে এবং মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে অর্থ আদায়ের ঘটনা ঘটে।
চান্দিনার ছয়ঘড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আলী হোসেন বলেন, ‘চান্দিনাতে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা এর আগে দেখিনি বা শুনিনি। আমরা যারা অভিভাবক আছি এসব ঘটনা শুনলে সন্তানদের ঘর থেকে বের হতে দিতে পারি না।’
চান্দিনার ছাত্রসংগঠনের নেত্রী মিলি আক্তার জানান, তুলাতলী গ্রামে এনজিওকর্মীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনার পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি। ধর্ষকদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে না পারলে নারীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।
চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ উল ইসলাম বলেন, ‘এসব ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি ২০ মার্চ চান্দিনা থানায় যোগদান করেছি। একটি ঘটনায় দুইজনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
সহকারী পুলিশ সুপার (দাউদকান্দি সার্কেল) মো. ফয়সাল তানভীর বলেন, ‘ধর্ষণের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটে সেই লক্ষ্যে প্রশাসনের পাশাপাশি সামাজিক জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত।’