কুমিল্লার মুরাদনগরে সিএনজিচালিত আটরিকশায় থেকে চাঁদা না পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদেরকে মারধর এবং থানায় হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পৃথকভাবে দুটি মামলা হয়েছে। এই ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারা হলেন- বিএনপি কর্মী উপজেলার বাখর নগরপাড় গ্রামের মৃত রুশন আলীর ছেলে কালাম (৪৮), রহিমপুর গ্রামের মাহাবুব হোসেনের ছেলে মো. হোসেন (২২), নবীপুর গ্রামের মৃত জানু মিয়ার ছেলে মো. ওয়াহাব আলী (৫৫), মুরাদনগর উত্তর পাড়ার আবুল হাশেমের ছেলে আবুল হাসান জুয়েল (৪২), পরমতলা গ্রামের মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে মহসিন সরকার (৩৮) ও রহিমপুর গ্রামের মৃত আবদুল খালেকের ছেলে মো. জসীম উদ্দিন (৫৮)।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুরাদনগর উপজেলার আহ্বায়ক উবায়দুল সিদ্দিকী বলেন, গতকাল সোমবার (২৪ মার্চ) ইফতারের আগে তিনিসহ তিনজন একটি অটোরিকশায় আকবপুর গ্রামে যাচ্ছিলেন।
অটোরিকশাচালক মুরাদনগর হয়ে সরাসরি নবীনগর রাস্তায় না গিয়ে কোম্পানীগঞ্জ হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কারণ জানতে চাইলে চালক বলেন, ‘ওই দিক দিয়ে গেলে ৫০ টাকা জিপি (চাঁদা) দিতে হবে।’ তখন তিনি চালককে সোজা পথে যেতে বলেন। কিন্তু নবীনগর সড়কের মুখেই চালককে চাঁদা দেওয়ার টোকেন আছে কি না জিজ্ঞেস করা হয়। চালক টোকেন নেই জানালে কয়েকজন তাকে মারধর শুরু করেন। যাত্রীরা নেমে মারধরের কারণ ও চাঁদাকে তুলতে বলেছে জানতে চাইলে তারা হামলা করেন। চিৎকার শুনে লোকজন এগিয়ে এসে তাদের রক্ষা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে আবুল কালামকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর হামলার ঘটনায় অভিযোগ করতে তারা থানায় যান।
আরো পড়ুন
টমেটো ভর্তা আর ভাত দিয়েই ইফতার-সেহেরি, কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন বিধবা সালেহা
পুলিশ ও ভুক্তভোগীরা জানান, সোমবার উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ সিএনজি স্ট্যান্ডে চাঁদা না দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন উপজেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলকারীরা। এ সময় আন্দোলনকারীদের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। পরে রাত ৮টায় হামলায় শিকার নেতাকর্মীরা মুরাদনগর থানায় অভিযোগ করতে গেলে যুবদল নেতা মাসুদ রানা ওরফে গুছা মাসুদের নেতৃত্বে ৭০/৮০ জনের একটি দল পূনরায় থানার ভেতরেই আরেক দফা হামলা করে। এ সময় থানা কম্পাউনডারের দরজা-জানালার গ্লাস ভাঙ্গাসহ ও হাজত খানার কেচি গেইট ভেঙে আটক এক আসামিকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
হামলাকারীদের বাধা দিলে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে তাদেরকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান। এ ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ সুপারসহ অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
এ ঘটনায় সোমবার রাত ৮ টার দিকে উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা বাঙ্গরা বাজার থানা এলকার আকুবপুর গ্রামের মৃত আবুল কালামের ছেলে প্রবাসী আবুল ফয়সাল (৩৫) বাদী হয়ে এজাহার নামীয় ৩০ জনসহ অজ্ঞাত আরো ৭০/৮০ জনকে আসামী করে চাঁদাবাজি ও হামলার অভিযোগে মামলা করেন। একইভাবে সরকারি কাজে বাধা ও থানায় হামলা করার অভিযোগে বিএনপির উপজেলা শাখার সভাপতি মহি উদ্দীন অঞ্জনসহ ৩১জন বিএনপি নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত আরো ৭০/৮০ জনকে আসামি করে এসআই আক্কাস আলী বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেছেন।
এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মহিউদ্দীন অঞ্জন বলেন, থানার ভেতরের ঘটনার সময় আমি তখন সেনাবাহিনীর সাথেই উপস্থিত ছিলাম। তখন আমাদেরকে বলা হয়েছিল মামলা হবে না, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর জানতে পারলাম এ ঘটনায় পুলিশ আমাকেই অভিযুক্ত করে মামলা করেছে। আমিও এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার দাবি করছি।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, চাঁদা দাবির অভিযোগে এক যুবককে আটকের পর বিএনপি নেতারা তাদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এমনকি প্রতিবাদী বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা মামলা করতে চাইলে তাতেও তারা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় তারা থানায়ও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। পরে এ ঘটনায় মামলা করা হলে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকিদের গ্রেপ্তারের পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।