মাদারীপুরের রাজৈরে মানবপাচার মামলার আসামি পারভীন বেগম (৪৭) নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার (৬ এপ্রিল) রাতে অভিযান চালিয়ে পারভীনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রতিশোধ এবং মামলাটি ধামাচাপা দিতে সাক্ষীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন পারভীন।
পারভীন শাখারপাড় গ্রামের রেজাউল মোল্লার স্ত্রী।
তার বিরুদ্ধে একাধিক মানবপাচারের মামলা রয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবার, স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, শাখারপাড় গ্রামের শাহ আলম মোল্লার ছেলে নূর আলম মোল্লাকে ১৫ লাখ টাকা চুক্তিতে ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখান পারভীন ও তার স্বামী রেজাউল মোল্লা। গত বছরের ১৫ জানুয়ারি তাদের ছেলে সাকিব মোল্লার মাধ্যমে নূরকে লিবিয়ার ত্রিপলিতে নিয়ে যায়। সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করে ধাপে ধাপে ১৭ লাখ আট হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে পারভীন ও তার চক্রের লোকজন।
এরপর আরো মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা চালালে বাংলাদেশ দূতাবাসের সাহায্যে মাফিয়াদের কাছ থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
আরো পড়ুন
বিয়ের ১৫ বছর পর ৪ সন্তান প্রসব
তারা আরো জানায়, ১৭ জুলাই নূরকে আহত অবস্থায় দেশে পাঠান দূতাবাসের কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় ছেলের চিকিৎসা শেষে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি মাদারীপুর বিজ্ঞ মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে একটি মামলা করেন ভুক্তভোগীর মা রাশিদা বেগম।
তারা জানায়, এ মামলায় পারভীনকে প্রধান করে তার স্বামী, ছেলে ও আরেক মানবপাচারকারী শাহীন মিয়াকে আসামি করা হয়।
খবর জানতে পেরে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান পারভীন ও রেজাউল। এর প্রতিশোধ এবং মামলাটি ধামাচাপা দিতে ২০ মার্চ মানবপাচার মামলার ৩ ও ৪ নম্বর সাক্ষী বখতিয়ার মোল্লা ও শাহ জালাল মোল্লাসহ চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার আবেদন করেন পারভীন।
এর আগে অপর এক ভুক্তভোগী গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় গ্রামের আলী শেখের স্ত্রী আচমিনা আক্তার (২৭) বাদী হয়ে মাদারীপুর আদালতে গত বছরের ১১ অক্টোবর একই অভিযোগে পারভীনসহ চারজনকে আসামি করে মানবপাচার মামলা করেন। তার বোন-জামাই সাইদুর ও চাচা সবুজকে ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ার মাফিয়া ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করে কয়েক ধাপে ৫৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে পারভীন চক্র।
আরো পড়ুন
সালমান বাটের আহ্বান : কঠিন সময়ে বাবর-রিজওয়ানের পাশে দাঁড়ান
এই দুই মামলার আসামিদের মধ্যে চানপট্টি গ্রামের সুমন খালাসী (৩০) লিবিয়া, শাহীন মিয়া লিবিয়া, সাকিব মোল্লা ইতালি এবং রেজাউল মোল্লা, খালেদা আক্তার খাফিজা (২০) ও উর্মি বেগম (২৫) বাংলাদেশে পলাতক রয়েছে।
ভুক্তভোগী নূরের বোন ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘১৫ লাখ টাকায় আমার ভাইকে ইতালি নেওয়ার কথা বলেছিলেন পারভীন। কিন্তু তার ছেলের মাধ্যমে লিবিয়ায় নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়ে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে ১৭ লাখ আট হাজার মুক্তিপণ নিয়েছে। তারপরও আমার ভাইকে মুক্তি দেননি তারা। একপর্যায়ে লিবিয়ার ত্রিপলিতে থাকা আমাদের পরিচিত লোকের মাধ্যমে দূতাবাসে খবর পাঠাই। পরে তারা পারভীনের মাফিয়াদের কাছ থেকে উদ্ধার করে ভাইকে দেশে পাঠিয়েছে। তারা এত নির্যাতন করেছে যে আমার ভাই এখন পর্যন্ত ঠিকমতো হাঁটতে পারে না।'
আরো পড়ুন
হামে দ্বিতীয় মার্কিন শিশুর মৃত্যু, আক্রান্ত ৬৫০
পারভীনসহ সব দালালদের শাস্তি চেয়ে তিনি আরো বলেন, ‘এ বিষয়ে মামলা করার আগে দালালরা আমাদের অনেক হুমকি দিয়েছে। কারণ এলাকায় তারা অনেক প্রভাবশালী। মামলা ফেরাতে না পেরে প্রতিশোধ নিতে আমাদের মামলার দুই সাক্ষীসহ চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দিয়েছে তারা।'
মানবপাচার মামলার এক সাক্ষী শাহ জালাল মোল্লা বলেন, 'দালালকে আমি নিজের হাতে টাকা দিয়েছি। তাই আমি রাজ সাক্ষী। এ ছাড়া বখতিয়ার মোল্লাও দালালকে টাকা তার মাধ্যমে টাকা দিয়েছে। আমাদের দুইজনের মাধ্যমে টাকা দেওয়া হয়েছে তাই আমরা সাক্ষী হয়েছি।'
আরো পড়ুন
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায় এনার্জি ড্রিংকস, বলছে গবেষণা
তিনি আরো বলেন, এই মামলা ধামাচাপা দিতে আমাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন পারভীন। কোর্ট থেকে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ পারভীন তার পরিবারসহ পলাতক ছিলেন, বাড়ি থাকতেন না।
রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ খান জানান, মানবপাচারের অভিযোগে পারভীনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মানবপাচার মামলা রয়েছে।
আরো পড়ুন
জাপানে সমুদ্রে মেডিক্যাল হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, নিহত ৩