<p>প্রিয়তমা দেখতে গিয়েছিলাম পরিবার নিয়ে। হলে ছবি দেখলাম অনেক দিন পর। বিশেষ করে ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই আলোচনায় রয়েছে সিনেমাটি। গিন্নিকে অন্য একটি ছবি দেখার কথা বললে সে এক বাক্যে বলে দিল প্রিয়তমা দেখবে। আমি আর না করলাম না। রাজি হয়ে গেলাম। বিশেষ করে অনেক দিন পর শাকিব খানের মুভি দেখব, তাই আগ্রহটা ছিল।</p> <p>শাকিব অভিনীত ও হিমেল আশরাফ পরিচালিত 'প্রিয়তমা' সিনেমাটা প্রথম দিকে সত্যি বলতে ভালো লাগেনি। কেমন যেন তামিল মুভির মতো এলাকার মাস্তানদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, লড়াই দিয়ে শুরু। আমি অ্যাকশন মুভি কম দেখি বলে এমনটা মনে হতে পারে।</p> <p>ছবিটা শুরু হওয়ার মিনিট বিশেক পরে পাশে বসে থাকা গিন্নি ও শ্যালিকাকে জিজ্ঞেস করলাম, ফিলিংস কেমন? দুজনই এক বাক্যে বলে দিল, বিউটিফুল। আমার বিমর্ষ মুখ দেখে তারা হতাশ। বলল, এত দারুণ একটা সিনেমা তোমার ভালো লাগছে না? আসলেই প্রথম দিকে আমার ভালো লাগছিল না। যার ছাপ ফুটে উঠেছিল আমার অবয়বে।</p> <p>সিনেমায় শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন ওপার বাংলার অভিনেত্রী ইধিকা পাল। আমি নিজেও যে পাল বংশের লোক। মূলত ইধিকা পাল বা সিনেমায় ইতি নামের মেয়েটির সৌন্দর্যে আমি মুগ্ধ। তার আধো আধো ভাঙা ইংরেজি শুনে হেসে খুন। কেবল আমি না, পুরো হলজুড়েই হাসির রোল। আর ইতির ভাই যে অভিনয়টা করেছেন, এককথায় অসাধারণ। তার ভূমিকাটা শেষে গিয়ে হয়ে উঠেছিল আরো জোরালো ও গুরুত্বপূর্ণ। মূলত ছবির ক্লাইমেক্সটা ছিল ওখানেই। হঠাৎ করে কাহিনি ঘুরিয়ে দিয়েছেন তিনি।</p> <p>এই ছবিতে ভয়ংকর মাদকের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। কক্সবাজার এলাকা ঘিরে মাদক ব্যবসা, তাদের গডফাদারদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন পরিচালক হিমেল আশরাফ। শহীদুজ্জামান সেলিম ও লুৎফর রহমান জর্জের অভিনয়টা কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এই দুজনের দ্বন্দ্ব শুরু হয় শাকিব খানের পরিবারকে কেন্দ্র করে। তারা হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকেও অভিনয় করেছিলেন।</p> <p>শাকিব খানের কক্সবাজার থেকে চলে আসা ও ইতির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা- এমন ঘটনা সিনেমায় অনেক দেখেছি। তাই ঘটনাটা যে মনে দাগ কেটেছে তা বলব না। দাগ কেটেছে শাকিব খানের শক্ত মনোবল, ইতিকে হারিয়ে তার অসংলগ্ন কথাবার্তা। বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া। ‘বেইমান’ ইতিকে মনের চিলেকোঠায় জায়গা দিয়েও বিয়ের সিদ্ধান্ত, বিয়ের কেনাকাটা করতে তাকেই ডেকে পাঠানোতে বেশ নাটকীয়তা ছিল। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি আমার জন্য আরো বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। ইতির মাথায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে, বাঁচবে আর তিন মাস। শাকিব খানের বিয়ের সিদ্ধান্ত বদল, ইতিকে বিয়ের সিদ্ধান্ত। কী নাটকীয়তা! শেষে ইতির মৃত্যুদৃশ্যটা কষ্ট লেগেছে। তবে এমন দৃশ্যের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম। সেই ছেলেবেলায় দেখা ‘তেরে নাম’, পরে ‘মনপুরা’তে এ দৃশ্য দেখেছি।</p> <p>ছবির একদম শেষে শাকিব খানের যে অবয়ব দেখলাম, এককথায় অনবদ্য। একদম চেনা যাচ্ছিল না। কলেজে পড়ার সময় আমাদের বাংলা স্যারের বলা হোসেন ভাইয়ের স্ত্রীর কবর জড়িয়ে বেঁচে থাকা, নকশি কাঁথার মাঠের রূপাইর কথা মনে পড়ে গেল আমার। আমার শ্বাস সত্যি বন্ধ হয়ে আসছিল। আমার কষ্ট হচ্ছিল খুব। আমার কষ্ট দেখে ওরা দুজনও কষ্ট পেল।</p> <p>বাইরে বেরিয়ে ওদের বললাম, অসাধারণ এক মুভি দেখলাম। দারুণ। গিন্নি বলল, ছবিটা আমায় আবার দেখাবে? আমি বললাম, অবশ্যই। শ্যালিকাও মাথা নেড়ে সায় দিল। আমার মনে হয় এখানেই ছবিটার সার্থকতা। </p>