<p>সংগীতের ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সদস্য ড. নাশিদ কামাল। নিজেও গানের আকাশে উজ্জ্বল তারকা। পাশাপাশি শিক্ষকতা ও লেখালেখিতে ছড়িয়েছেন দ্যুতি। বহুগুণে গুণী এই শিল্পীর সঙ্গে কথা বলেছেন কামরুল ইসলাম।</p> <p><strong>কেমন আছেন?</strong><br /> ভালো আছি।</p> <p><strong>কী করছেন ইদানীং?</strong><br /> বিটিভির ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করি। ওটা কিছু দিন ধরে বন্ধ আছে। এখন রেয়াজ করি। আমার মেয়ে আরমীনের (আরমীন মূসা) নানা অনুষ্ঠান থাকে, তাকে সহযোগিতা করি। নিজেও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে, রেডিওতে অনুষ্ঠান করি। লেখালেখিও চলছে। আমার ফুফু ফেরদৌসী রহমান, চাচা মুস্তাফা জামান আব্বাসী দুজনের বয়স ৮০ পার হয়েছে। তাঁদের ছেলে-মেয়েরা বিদেশে থাকে, মাঝেমধ্যে আসে। দেশে থাকার সুবাদে আমিই তাঁদের দেখভাল করি। এভাবেই সময় যাচ্ছে।</p> <p><strong>শেষ কবে গানের অনুষ্ঠান করেছেন?</strong><br /> ৩০ ডিসেম্বর আমার দাদুর (আব্বাসউদ্দীন আহমদ) মৃত্যুবার্ষিকী ছিল, সেদিন চ্যানেল আইতে লাইভ অনুষ্ঠান করেছিলাম। এ ছাড়া ডিসেম্বরে আরো কয়েকটা অনুষ্ঠানে গেয়েছি। বিটিভির প্রথম শিশুশিল্পী আমি। সেটার উদযাপন করা হয়েছিল চ্যানেল আইতে ২৫ ডিসেম্বর, সেখানেও গান করেছি। সামনে ৩১ জানুয়ারি আজাদ রহমান স্মরণে বাংলা খেয়াল উৎসবে গাইব। গৌরব কল্যাণ রাগ পরিবেশন করব। এখন সেটার জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছি।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="বাড়িতে ঢুকে সাইফ আলিকে ৬ বার ছুরিকাঘাত" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/01/16/1737001532-e06d061a77a7bde916b8a91163029d41.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>বাড়িতে ঢুকে সাইফ আলিকে ৬ বার ছুরিকাঘাত</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/entertainment/2025/01/16/1469245" target="_blank"> </a></div> </div> <p><strong>নতুন কোনো গান করছেন?</strong><br /> মৌলিক গান তো করি না। নজরুলসংগীত, লোকগান আর ক্লাসিক্যাল গানই করি। হ্যাঁ, কিছু আধুনিক গান লিখি, সেটা আমার মেয়ের জন্য। এখনো তিন-চারটি গান লেখা আছে, সেগুলো আরমীন করবে। ও আধুনিক গানের শিল্পী।</p> <p><strong>নতুন কী লিখছেন?</strong><br /> এ পর্যন্ত ১৭টি বই লিখেছি। এর মধ্যে সাতটি কবি কাজী নজরুল ইসলামের বইয়ের ইংরেজি অনুবাদ। এখন লিখছি ‘আমার দেখা কলকাতা’। ১৯৭২ সালে প্রথম কলকাতায় গিয়েছিলাম। এরপর থেকে নিয়মিত যাতায়াত। সেখানে আমার দাদা আব্বাসউদ্দীনের এত খ্যাতি, আমি নিজেও বড় হওয়ার পর কলকাতায় অনেক অনুষ্ঠান করেছি। ধীরে ধীরে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ওপর যে প্রভাব ফেলেছে, সেটা নিয়েই লিখছি। এ ছাড়া ইংরেজিতে আত্মজীবনী লেখার কাজও এগিয়ে নিচ্ছি।</p> <p><strong>শিক্ষকতায় এখনো যুক্ত আছেন?</strong><br /> না। গত বছর ৬৫ বছর বয়স হলো। তখন অবসর নিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সূচনা। এরপর বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করেছি। আওয়ামী লীগের আমলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ট্রাস্টি বোর্ডে অনেক অনিয়ম ছিল। সেগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারিনি। এ কারণে ছেড়ে দিয়েছি। ইচ্ছা ছিল আমরণ শিক্ষকতা করব। শিক্ষকতা আমার খুব ভালো লাগত। এ জন্য আফসোস হয়।</p> <p><strong>সংগীতের ঐতিহ্যবাহী পরিবার আপনাদের। আপনার কন্যাও এর ধারাবাহিকতা অটুট রাখছেন। পরিবারের আগামীটা কেমন দেখেন?</strong><br /> আমি লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেও বাংলাদেশে থেকেছি, এটা কাকতালীয় নয়। দেশে থেকেছি, যাতে আমার মেয়েরা গান শিখতে পারে, পরিবারের আবহটা বুঝতে পারে। নিজের সব মেধা আমি বাংলাদেশকে দিয়েছি। আরমীন যেহেতু গান শেখায়, ওর ‘ঘাসফড়িং’ কয়্যারে অনেকেই গান শেখে। আমি মনে করি, আমাদের পরিবার থেকে এই দেশকে সাংস্কৃতিকভাবে অনেক এগিয়ে নিতে পারছি, আগামীতেও পারব।</p> <p><strong>দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। সেখানে এ প্রজন্মের আধুনিক ছেলে-মেয়েদের পাঠদান করেছেন। তাঁদের মধ্যে নজরুলসংগীত কিংবা লোকসংগীত নিয়ে কেমন আগ্রহ দেখেছেন?</strong><br /> আমি যদিও সাংস্কৃতিক বিষয়ে পড়াইনি। তবে বিভিন্ন সময়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতাম। তখন দেখেছি, ছেলে-মেয়েদের অনেক আগ্রহ। যেমন লুইপা, ইউসুফসহ অনেক তরুণ শিল্পী আমার ছাত্র ছিল। এ ছাড়া বাসায়ও আমি গান শিখিয়েছি। ছাত্র-ছাত্রীরা নজরুলগীতি, পল্লীগীতি শিখতে চায়। তাদের নির্দেশনা দেওয়ার মতো ভালো শিক্ষক থাকলে আরো সুন্দরভাবে এগোতে পারবে। ১৯৮৩ সাল থেকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছি। এতগুলো বছর যে দেশকে দিলাম, এর স্বীকৃতি হলো শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা। আমাকে দেখে কেউ বই লেখা শুরু করেছে, কেউ গানে আগ্রহী হয়েছে, কেউ পড়াশোনায় ভালো করার উৎসাহ পেয়েছে। ওদের এসব কথাই আমার প্রাপ্তি। </p> <p><strong>এই সময়ে যাঁরা গান করছেন, তাঁদের জন্য আপনার দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে যদি একটি পরামর্শ দিতে চান, সেটা কী?</strong><br /> গান শেখা এবং শেখানোর ধারাটা অব্যাহত রাখতে হবে। এতে যেমন নতুন প্রজন্ম তৈরি হবে, আবার নিজের উপার্জনও থাকবে। শুধু গানের ওপর নির্ভরশীল হলে জীবিকা নির্বাহ করা মুশকিল। আমার যেমন আয়ের উৎস ছিল শিক্ষকতা, ফলে অনুষ্ঠান বন্ধ হলেও সমস্যায় পড়তে হয়নি। তা ছাড়া গান শেখানোর মাধ্যমে নিজের মেধা আরো শাণিত হয়। যেহেতু আমাদের স্টেজ শো, টিভি শো পর্যাপ্ত নয়। যা হয়, সেখানেও বিখ্যাত বা জনপ্রিয়দের ডাকা হয়। ফলে যারা গান জানে, তারা শেখানোর কাজটা করতে পারে। এতে করে নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা দিকভ্রান্ত না হয়ে সঠিক পথে এগোতে পারবে।</p>