<p>বাড়িতে মা-মেয়ে মিলে একে অন্যের চুলে তেল দেওয়ার দৃশ্য বেশ পরিচিত। চুলের যত্নে তেলের বিকল্প নেই বললেই চলে। চুলের যত্ন ও তেলের ব্যবহার সম্পর্কে রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীনের সঙ্গে কথা বলেছেন মোনালিসা মেহরিন</p> <p>প্রকৃতিতে বইছে বৈরী হাওয়া। গরমে অতিষ্ঠ সবাই। বাইরে রোদের তাপ। ঘরেও পড়ছে গরমের আঁচ। সঙ্গে রাস্তার ধুলাবালি, গাড়ির কালো ধোঁয়া তো আছেই। আবহাওয়ার এই বিরূপ অবস্থার প্রভাবে চুল নিস্তেজ হয়ে পড়ে। গরমে শুধু ত্বক নয়, চুলেরও ক্ষতি হয়।</p> <p>রেড বিউটি স্যালনের স্বত্বাধিকারী ও রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন জানালেন, রোদে ঘামে নাজেহাল অবস্থা ছোট-বড় সবার। ঘাম ও বাতাসের ধুলাবালি মিশে খুশকি, র্যাশ বা ফুসকুড়ি সমস্যা দেখা দেয়। চুল বিবর্ণ হয়ে পড়ে। রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ দেখায়। এ সময় খানিকটা যত্ন নিলেই চুল হবে ঝরঝরে, জৌলুসময়। গরমের মধ্যে পার্লারে যেতেও অনেকের অনীহা লাগে। যাদের মা বেঁচে আছেন তারা ভীষণ ভাগ্যবান। এ সময় ঘরে বসে মায়ের কাছেই সঁপে দিতে পারেন চুল। মায়ের হাতের কোমল স্পর্শে প্রাণ ফিরবে চুলে। চাইলে মায়ের চুলে কাচি চালাতে পারেন আপনি। মায়ের চুল ছেঁটে দিয়ে তেল ম্যাসাজ করে দিন। এ সময় মায়ের কাছে তাঁর ছেলেবেলার গল্প শোনার বায়না ধরতে পারেন। চুলের যত্নের পাশাপাশি দুজনের সময়টাও হয়ে উঠবে আনন্দময়।</p> <p><strong>তেল ব্যবহার</strong></p> <p>চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য সবারই উচিত সপ্তাহে অন্তত এক দিন তেল দেওয়া। বলা হয় জলে চুন তাজা, তেলে চুল তাজা। যুগ যুগ ধরে চুলের যত্নে তেলের ব্যবহার হয়ে আসছে। নারকেল তেল, বাদাম তেল, জলপাই তেল যে তেলই ব্যবহার করুন তা চুলে উপকার এনে দেবেই। গরমের কারণে অনেকের মধ্যে এ সময় চুলে তেল ব্যবহারে অনীহা দেখা দেয়। এই আলস্যই কিন্তু চুলের ক্ষতি করতে পারে। তেল চুলে পুষ্টি জোগানোর পাশাপাশি মাথার তালু ঠাণ্ডা রাখতে সহায়তা করে। ফুসকড়িসহ নানা সংক্রমণ রুখে দেয় তেল। সপ্তাহে অন্তত দুদিন চুলে তেল ব্যবহার করা উচিত। চুলে হট অয়েল ম্যাসাজ বেশি উপকার দেয়। তেল দিয়ে ভালো ফল পেতে তা অন্তত আধাঘণ্টা মাথায় রাখা উচিত। ৩০ থেকে ৪০ মিনিটই যথেষ্ট মাথার ত্বকের গভীরে তেল পৌঁছানোর জন্য। তেল দিয়ে ১০ মিনিট স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করতে হবে। এতে এর রক্ত সঞ্চালন বাড়বে। এটি চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। এরপর শ্যাম্পু করতে হবে। আরো ভালো ফল পেতে তেলের সঙ্গে মেথি, আমলকী, হরীতকী, বহেড়া, লেবুর রস, পেঁয়াজের রসের মতো ভেষজ উপকরণ মিশিয়ে নিতে পারেন।</p> <p><strong>চুল আঁচড়ান</strong></p> <p>ছোট্ট এই অভ্যাসটাই চুলের জন্য দারুণ ফল এনে দিতে পারে। প্রতিদিন অন্তত একবার ১০ মিনিট ধরে যত্ন নিয়ে চুল আঁচড়ান। এতে মাথার ত্বকে রক্তসঞ্চালন বাড়ে। চুল জট ধরারও ভয় থাকে না। চুলের যত্ন নেওয়া সহজ হয়। চুলে বাতাস চলাচল করতে পারে। ঘাম হলেও সহজে শুকিয়ে যায়। চুল সামলানোর ঝক্কি পোহাতে হয় না।</p> <figure class="image"><img alt="৬৪৭৫৭৫" height="483" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/timir/1/KALERKANTHO024.jpg" width="800" /> <figcaption>হেয়ার স্ট্রেইটনার ও হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার চুল আরো নিস্তেজ করে দেয়। এ জন্য গরমে হিট স্টাইলিং টুল কম ব্যবহার করতে হবে।</figcaption> </figure> <p><strong>চুল শুকানো</strong></p> <p>সূর্যের তাপ ও বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় গরমে মাথার ত্বক বেশি ঘামে। ঘাম জমে থাকলে মাথার তালুতে ছত্রাক ও ফাঙ্গাস সংক্রমণ দেখা দেয়। যার প্রভাব পড়ে চুলে। খুশকির উপদ্রব দেখা দেয়। এ জন্য যখনই চুল ঘামবে, তখনই ভালো করে চুল শুকিয়ে নিতে হবে। এমনকি গোসলের পরও ভেজা চুলে থাকা যাবে না। টাওয়াল দিয়ে দ্রুত চুল মুছে ফেলতে হবে। শুকানোর জন্য ফ্যানের ঠাণ্ডা বাতাস সবচেয়ে বেশি ভালো।</p> <p><strong>পুষ্টির জোগান</strong></p> <p>গরমে চুলের ক্ষতি পোষাতে বাহ্যিক যত্নের পাশাপাশি নিয়মিত পুষ্টির জোগান দিতে হবে। এ সময় বাজারে তরমুজ, ভাঙ্গি, লিচু, আম, জাম, পেঁপে, বেল, কামরাঙা, আমড়া, জাম্বুরাসহ নানা ধরনের সুস্বাদু ফল পাওয়া যায়। নিয়মিত খাদ্যতালিকায় এসব মৌসুমি ফলমূল রাখতে হবে। পুষ্টি ভেতর থেকে চুলকে মজবুত করে তোলে।</p> <figure class="image"><img alt="৩৪৬৫৪৬" height="483" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/timir/1/KALERKANTHO023.jpg" width="800" /> <figcaption>প্রতিদিন অন্তত একবার ১০ মিনিট ধরে যত্ন নিয়ে চুল আঁচড়ান। এতে মাথার ত্বকে রক্তসঞ্চালন বাড়ে। চুল জট ধরারও ভয় থাকে না।</figcaption> </figure> <p><strong>ডিটক্স পানি পান</strong></p> <p>গরমে পানিশূন্যতা পূরণে অনেকেই ডিটক্স পানি পান করেন। চুলের জৌলুস বৃদ্ধিতে কাজে দেয় ডিটক্স পানি। এটুজেডের চলতি সংখ্যায় পৃষ্ঠা ছয় ও সাতে থাকা ডিটক্স রেসিপির পদ্ধতি মেনে খুব সহজেই বানাতে পারবেন এমন পানি। চুল আর্দ্র ও কোমল হবে।</p> <p><strong>শ্যাম্পু এবং অন্যান্য</strong></p> <p>তপ্ত আবহাওয়ায় ঘাম ও ধুলাবালি থেকে চুলে ময়লা হবেই। এ জন্য নিয়মিত চুল পরিষ্কার করতে হবে। ঘরে থাকলে সপ্তাহে অন্তত চার দিন চুল শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। আর বাইরে গেলে প্রতিদিন চুলে শ্যাম্পু করা উচিত। মাথার ত্বক ও চুলের ধরন বুঝে শ্যাম্পু নির্বাচন করতে হবে। প্রাকৃতিক ক্লিনজিং যেমন রিঠা ও শিকাকাই দিয়েও চুল পরিষ্কার করতে পারেন।</p> <p><img alt="৪৬৪৫৭৫" height="483" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/timir/1/KALERKANTHO022.jpg" width="800" /></p> <p><strong>বাইরে চুল ঢেকে রাখুন</strong></p> <p>সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শুধু আমাদের ত্বকের ক্ষতি করে তা নয়। বরং চুলের জন্যও এটা সমান ক্ষতিকর। এ জন্য বাইরে বের হলে চুল ঢেকে রাখতে হবে। চুল ঢাকার জন্য স্কার্ফ, টুপি ব্যবহার করতে হবে। এতে ধুলাবালি ও ঘাম থেকেও সুরক্ষিত থাকবে চুল। রোদে গেলে অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করতে হবে। বাইরে চুল বেঁধে রাখতে হবে। এতে চুলে ঘাম ও ময়লা দুই-ই কম হবে।</p> <p><strong>হিট স্টাইলিং</strong></p> <p>গরমে মড়ার ওপর খাড়ার ঘায়ের মতো চুলে হিট স্টাইলিং টুল ব্যবহার করতে যাবেন না। এতে চুল আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। চুল শুকাতে ব্লোয়ার বাদ দিন। কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকেই ফ্যানের বাতাসে সময় নিয়ে চুল শুকানোকে ঝামেলা মনে করেন। তাই হেয়ার ড্রায়ারে চুল শুকান। এর গরম বাতাস চুল আরো নিস্তেজ করে দেয়। এ জন্য গরমে হিট স্টাইলিং টুল কম ব্যবহার করতে হবে।</p>