<p>আধুনিক সৌদি আরবের একটি মরুদ্যানে লুকানো ৪ হাজার ছরের পুরানো একটি শহরের সন্ধান পাওয়া গেছে। কীভাবে সেই সময়ের জীবন ধীরে ধীরে যাযাবর থেকে শহুরে অস্তিত্বে পরিবর্তিত হয়, সেই প্রচেষ্টারই একটি সাক্ষী এই হারিয়ে যাওয়া শহর। প্রত্নতাত্ত্বিকরা গত  বুধবার( ২৮ অক্টোবর) এমন কথাই জানিয়েছে। </p> <p>সৌদি ও ফ্রান্সের একদল প্রত্নতাত্ত্বিকের যৌথ প্রচেষ্টায় সম্প্রতি আবিষ্কৃত শহরটির নাম রাখা হয়েছে আল-নাতাহ। প্রত্নতাত্ত্বিকের দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন ফ্রান্সের বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ গিলাম শালোঁ। আন্তর্জাতিক সাময়িকী পিএলওএস ওয়ানে তাদের গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিতও হয়েছে। আল-নাতাহ নামে অভিহিত শহরের অবশিষ্টাংশগুলো দীর্ঘকাল ধরে খায়বারের প্রাচীর ঘেরা মরূদ্যানে লুকিয়ে ছিল, যা আরব উপদ্বীপের উত্তর-পশ্চিমে মরুভূমি দ্বারা বেষ্টিত একটি সবুজি এলাকা।</p> <p>শহরটিতে একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ, ব্রোঞ্জের তৈরি কুঠার ও ছোরা, তৈজসপত্র, চীনামাটির তৈরি পাত্র এবং মূল্যবান রত্নপাথর পাওয়া গেছে। এএফপিকে শালোঁ জানিয়েছেন, আল-নাতাহর স্থাপনা এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন পরীক্ষা করে তারা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, যিশুখ্রিষ্টের জন্মের অন্তত ২ হাজার ৪০০ বছর আগে। এই সময়টি ছিল, মানবসভ্যতার ব্রোঞ্জ যুগে প্রবেশের প্রারম্ভিককাল।</p> <p>২ দশমিক ৬ হেক্টর আয়তনের আল-নাতাহকে ঘিরে রয়েছে ১৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ। প্রাচীরটির বয়সও শহরটির সমান। প্রায় ৫০০ বাড়িঘর পাওয়া গেছে আল-নাতাহে। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বলছে, পত্তনের এক হাজার বছর পর, অর্থাৎ যিশুখ্রিষ্টের জন্মের ১ হাজার ৪০০ বছর আগে জনশূন্য হয়ে পড়ে আল নাতাহ। </p> <p>প্রাচীন শহরটি গড়ে ওঠার সময় ভূমধ্যসাগর বরাবর লেভান্ট অঞ্চলে শহরগুলো বর্তমান সিরিয়া থেকে জর্ডান পর্যন্ত সমৃদ্ধ হয়েছিল। সেই সময়ে উত্তর-পশ্চিম আরবকে অনুর্বর মরুভূমি বলে মনে করা হত। যাযাবরেরা প্রতিনিয়ত অতিক্রম করত এ অঞ্চলে।</p> <p>শালোঁ জানান, অন্য কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর আক্রমণে এই শহরটি জনশূন্য হয়নি। কারণ, সৌদির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আগ্নেয় শিলা বা ব্যাসল্ট দ্বারা গঠিত পর্বতমালা এই শহরটির সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট ছিল। তিনি বলেছেন, ‘ঠিক কী কারণে হঠাৎ করে শহরটি জনশূন্য হয়ে গেল, তা আমরা এখনো জানতে পারিনি।’</p> <p>এএফপিকে শালোঁ আরো জানান, আল-নাতাহরের পত্তন হয়েছিল, যখন ভূমধ্যসাগরের তীরে বর্তমান সিরিয়া, জর্ডান ও ইরাকে  মেসোপটেমিয়া সভ্যতা গড়ে উঠছিল। তবে এখানে রাজা-প্রজা ও ধনী-দরিদ্রের বিভাজন এত বেশি ছিল না, যেমন টা মেসোপটেমিয়ার বিভিন্ন শহরে ছিল, তুলনামূলকভাবে অনেক সমতাপূর্ণ সমাজ ছিল আল-নাতাহে।</p> <p>সূত্র: এএফপি</p>