<article> <p style="text-align: justify;">ব্যবসায়ী মোস্তাফিজের কাছে মাসখানেক আগে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ফোন কল আসে। তিনি রিসিভ করতেই শোনা যায়, ‘আমি সিআইডির ওসি রবিউল বলছি, আপনার নাম কি মোস্তাফিজ?’ মোস্তাফিজ স্বীকার করতেই তাঁকে পরের দিন দুপুরের মধ্যে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। দ্বিধাগ্রস্ত মোস্তাফিজ যাননি।</p> <p style="text-align: justify;"><img alt="ভিন্ন পেশার আড়ালে অপহরণ" height="360" src="https://www.kalerkantho.com/_next/image?url=https%3A%2F%2Fcdn.kalerkantho.com%2Fpublic%2Fnews_images%2F2024%2F01%2F27%2F1706298848-b12ff8564244d4beff93726862a2aedd.jpg&w=1920&q=100" width="600" /></p> <p style="text-align: justify;">পরদিন দিনের বেলা রাজধানীর ভাটারা এলাকার বাসা থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যায় কয়েক ব্যক্তি। এরপর পূর্বাচল এলাকার একটি বাসায় নিয়ে তাঁকে আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়ে ৫০ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় তারা।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এ ঘটনায় ভাটারা থানায় করা মামলায় অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) কর্মরত দুই পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সিআইডির এসআই রেজাউল করিম ও কনস্টেবল আবু সাঈদ এবং তাঁদের সহযোগী বরিশালের উজিরপুরের মো. ইমন, আব্দুল্লাহ আল ফাহিম, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার শরিফ হোসেন।</p> <p style="text-align: justify;">এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা ভিন্ন পেশার আড়ালে অপহরণ করে লোকজনের কাছ থেকে টাকা-পয়সা আদায় করে আসছিলেন। এমন বেশ কিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।  </p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, সারা দেশে নানা ছদ্মবেশে এমন অনেক সংঘবদ্ধ চক্র অপহরণের মতো অপরাধে সক্রিয়। তাদের ওপর নজরদারির পাশাপাশি গ্রেপ্তারে জেলা পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। </p> <p style="text-align: justify;">পুলিশ সূত্র জানায়, দেশে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক হাজারের বেশি ব্যক্তিকে অপহরণের অভিযোগ পেয়েছে তারা।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">র‌্যাব জানায়, অপহরণের শিকার ৬৭৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয় ৬৯৯ জনকে। তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা করা হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">ডিএমপির গত বছরের অপরাধবিষয়ক মাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ডিএমপির আটটি ক্রাইম বিভাগের প্রতিটি থানা এলাকায় অপহরণের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে রমনা বিভাগে তিনটি, ওয়ারী বিভাগে পাঁচটি, লালবাগে আটটি, মতিঝিলে সাতটি, মিরপুরে ছয়টি, গুলশানে ১০টি, উত্তরয় ১২টি এবং তেজগাঁওয়ে ১৪টি মামলা করা হয়।</p> </article> <p style="text-align: justify;">এসব মামলায় আসামির তালিকায় থাকা অনেক অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। এসব বিভাগের থানাগুলোতে অপহরণসংক্রান্ত কয়েক হাজার সাধারণ ডায়েরির (জিডি) তদন্ত চলছে। সর্বশেষ গত বুধবার রাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইইউবিএটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র হিমেলকে অপহরণকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করে র‌্যাব।</p> <article> <p style="text-align: justify;">র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, সারা দেশে অপহরণকারীচক্রের সদস্য রয়েছে। তারা বিভিন্ন পেশার মানুষকে অপহরণ করে। তবে অভিযোগ পেলেই অভিযান চালিয়ে চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।</p> <p style="text-align: justify;">বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইইউবিএটির ছাত্র হিমেল বর্তমানে চরম অসুস্থ। তিনি ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। হিমেলের মা তহুরা বিনতে হক বলেন, ‘অপহরণকারীরা নির্যাতন চালিয়ে আমার ছেলের জীবনটাকে শেষ করে দিয়েছে। ছেলেটা এখনো অসুস্থ।’</p> <p style="text-align: justify;">হিমেল অপহরণের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় অপহরণ ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করা হয়েছে। মামলা দুটি বর্তমানে তদন্ত করছে ডিবি। এর মধ্যে হিমেলদের গাড়িচালকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছ র‌্যাব।</p> <p style="text-align: justify;">ডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, তারা সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্রের সদস্য। এই চক্রে আরো অনেক সদস্য রয়েছে। তারা ভিন্ন পেশার আড়ালে অপহরণসহ নানা অপরাধে জড়িত।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ভিন্ন পেশার আড়ালে অপহরণকারী </strong></p> <p style="text-align: justify;">হিমেল অপহরণের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে একজনের নাম মালেক। তিনি পেশায় গাড়িচালক। তবে গাড়ি চালানোর পেশার আড়ালে একটি সংঘবদ্ধ অপহরণকারীচক্রের নেতৃত্ব দিতেন। তিনি ধনাঢ্য পরিবারের সদস্যদের টার্গেট করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করতেন। মালেকের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় অপহরণ, অস্ত্র আইন, বিস্ফোরক আইন, ডাকাতি-ছিনতাই, খুনসহ ১৪টির বেশি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় আট বছরের বেশি সময় কারাভোগ করেছেন তিনি।</p> <p style="text-align: justify;">সর্বশেষ তিনি ময়মনসিংহের একজন অধ্যাপকের ছেলে অপহরণের ঘটনায় করা মামলায় তিন বছর কারাভোগ করে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ছাড়া পান বলে জানা যায়। গ্রেপ্তার ছামিদুলও পেশায় একজন গাড়িচালক।  তিনি মালেকের অন্যতম সহযোগী। দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের গাড়ি চালানোয় তাঁদের বিশ্বস্ত হয়ে ওঠেন এবং ব্যাংকিং বিভিন্ন আর্থিক লেনদেন ও ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ সম্পর্কেও তাঁর ভালো ধারণা ছিল। তিনি হিমেলের বাবার মৃত্যুর পর মালেকের নেতৃত্বে  হিমেলকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন।</p> <p style="text-align: justify;">গ্রেপ্তার রনি পেশায় অটোচালক। তিনি মালেকের অন্যতম প্রধান সহযোগী ছিলেন। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো তাঁর সুপরিচিত ছিল। মালেকের নির্দেশনায় বিভিন্ন সময় অপহৃতদের বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি ও দুর্গম এলাকাগুলোয় আটকে রাখতেন। সেখানে অপহৃতদের আটকে রেখে নির্যাতন চালাতেন। অস্ত্র, ডাকাতিসহ দুটি মামলায় ছয় বছরের বেশির সময় কারাভোগ করেন তিনি। এ ছাড়া গ্রেপ্তার রাসেল ও বিল্লাল পেশায় গাড়িচালক। তাঁরাও মালেকের সহযোগী ছিলেন।</p> <p style="text-align: justify;">আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, দেশে অপহরণের শিকার নারী-পুরুষের পাশাপাশি একটি বড় অংশ শিশু রয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য মতে, প্রতিবছরই বিপুলসংখ্যক মানুষ অপহরণের শিকার হয়। সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ৭৪০ নারী ও শিশুকে অপহরণ করা হয়। এর মধ্যে ২০২১ সালে ১৮০ জন, ২০২০ সালে ১২৫ জন, ২০১৯ সালে ১৪৭ জন, ২০১৮ সালে ১৪৫ জন, ২০১৭ সালে ১৪৩ জন এবং ২০১৬ সালে ১৩২ জন ছিল।</p> </article>