<p style="text-align:justify">দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দুষ্কৃতকারীদের নাশকতা ও সহিংসতার কারণে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার মধ্যরাতে কারফিউ জারি করে সরকার। বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নতি এবং জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসতে থাকার পরিপ্রেক্ষিতে কারফিউ ক্রমে শিথিল করা হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>সব অফিস খুলছে আজ</strong></p> <p style="text-align:justify">ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে আজ বুধবার এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার কারফিউ বহাল থাকবে। তবে আজ সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সাত ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ ছাড়া বাকি জেলাগুলোতে সিদ্ধান্ত নেবে জেলা প্রশাসন।</p> <p style="text-align:justify">সরকারের নির্বাহী বিভাগের আদেশে সারা দেশে সাধারণ ছুটি আর বাড়ানো হয়নি। আজ সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অফিস চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সময়ের মধ্যে সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">এর আগে চলমান নাশকতা ও সহিংসতার কারণে গত রবিবার ও সোমবার সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার।</p> <p style="text-align:justify">গত সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে গতকাল মঙ্গলবারও সরকারি-বেসরকারি সব অফিস বন্ধ ছিল।</p> <p style="text-align:justify">সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর কোথাও কোনো সংঘাত-সহিংসতা ছিল না। সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখা গেছে। সড়কে যানবাহন আগের চেয়ে বেড়েছে।</p> <p style="text-align:justify">পরিবেশ শান্ত থাকায় দুর্বৃত্তদের ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষত ও চিহ্নগুলো স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। সড়ক থেকে সরানো হয়েছে অনেক ধ্বংসস্তূপ। ফুটপাতের বেশির ভাগ দোকান বসেছে। সাধারণ মানুষ অনেকটা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করেছে। কারফিউ বলবৎ থাকায় সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন এলাকায় টহল দিতে দেখা গেছে। বেশির ভাগ এলাকার পরিবেশ ছিল শান্ত। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।</p> <p style="text-align:justify"><strong>কারফিউ আরো শিথিল</strong></p> <p style="text-align:justify">চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কারফিউ অব্যাহত থাকছে। তবে ঢাকাসহ চার জেলায় আজ সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে।</p> <p style="text-align:justify">এর আগে গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে কারফিউ জারি করে সরকার। একই সঙ্গে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। প্রথম দফায় শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কারফিউ চলে। মাঝে দুই ঘণ্টা বিরতি দিয়ে শনিবার দুপুর ২টা থেকে আবার কারফিউ শুরু হয়।</p> <p style="text-align:justify">রবিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত কারফিউ চলে। মাঝে দুই ঘণ্টা কারফিউ শিথিল করা হয়। গত সোমবারও তিন ঘণ্টা বিরতি দিয়ে কারফিউ বলবৎ ছিল। গতকালও ছিল কারফিউ।</p> <p style="text-align:justify"><strong>নাশকতায় ট্রাফিক পুলিশের যত ক্ষতি</strong></p> <p style="text-align:justify">ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তর বলেছে, দুষ্কৃতকারীদের গত কয়েক দিনের সহিংসতায় ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দিয়ে দুষ্কৃতকারীরা চার কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে। মোট ৫৪টি ট্রাফিক বক্স আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় তারা। এর মধ্যে রয়েছে গুলশানের ডিসি ট্রাফিক অফিস, এসি ট্রাফিক রমনা, রামপুরা, মহাখালী ও উত্তরা অফিস। এসব ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৮টি মামলা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">হামলা, ভাঙচুর, আগুন ও নাশকতার ঘটনায় সারা দেশে প্রায় দুই হাজার সন্দেহভাজন ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছে। আরো কয়েক হাজার দুর্বৃত্ত গ্রেপ্তারের তালিকায় রয়েছে। তাদের বেশির ভাগ বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। </p> <p style="text-align:justify">পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলেছে, গত কয়েক দিনের সংঘর্ষে সারা দেশে এক হাজার ১০০ জনের বেশি পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মারা গেছেন তিন পুলিশ সদস্য। পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের ২৮১টি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ২৩৫টি থানা, ফাঁড়ি ও ক্যাম্পে হামলা চালানো হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>সারা দেশে গ্রেপ্তার</strong></p> <p style="text-align:justify">এদিকে গতকাল ২২ জেলায় ৭৮ মামলায় ৩৭৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। গত কয়েক দিনে চটগ্রামে তিন শতাধিক নাশকতাকারী, সিলেটে ১০ মামলায় ১৬ হাজার আসামির মধ্যে ২৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।</p> <p style="text-align:justify">ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, দেশে চলমান সংঘর্ষ, সংঘাত, সহিংতার মূলে বিএনপি-জামায়াত। সহিংসতা হয়েছে তারেক রহমানের নির্দেশে। নাশকতায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব তথ্য বলেন।</p> <p style="text-align:justify"><strong>ডিএমপির আট থানার ওসি বদল</strong></p> <p style="text-align:justify">দেশের চলমান এই পরিস্থিতির মধ্যে ডিএমপির আট থানার ওসি বদল করা হয়েছে। গত সোমবার পুলিশের এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বদল হওয়া থানাগুলো হলো মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি, দারুসসালাম, কামরাঙ্গীর চর, দক্ষিণখান, তুরাগ, খিলক্ষেত ও কাফরুল।</p> <p style="text-align:justify"><strong>নতুন মৃত্যু নেই</strong></p> <p style="text-align:justify">গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশে সহিংসতায় নতুন করে কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। তবে গত কয়েক দিনের সংঘর্ষে আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে এক হাজার ১১৭ জন। মারা যাওয়া ৮৬ জনের লাশ মর্গে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ৮০ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আরো ছয়টি লাশ মর্গে রাখা হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>মিরপুর ১০ নম্বর এখন শান্ত</strong></p> <p style="text-align:justify">কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে টানা পাঁচ দিন মিরপুর ১০ নম্বরসহ আশপাশের এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গতকাল পুরো মিরপুরে শান্ত পরিবেশ বিরাজ করেছে। </p> <p style="text-align:justify">সকাল থেকে মিরপুর ১, ২, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। মিরপুর ১০ নম্বরে দুটি সাঁজোয়া যান নিয়ে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী।</p> <p style="text-align:justify">মিরপুর ১ নম্বর সনি সিনেমা হলের সামনে চেকপোস্ট বসিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।  সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করা হচ্ছে। দুপুর ১টা পর্যন্ত জরুরি কাজ ছাড়া কারফিউয়ের মধ্যে বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">মিরপুর ২ নম্বরের পুলিশ বক্সটি গত বৃহস্পতিবার পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এখন শুধু টিনের বক্সটি রয়েছে। ভেতরে ছাই ছাড়া কিছু নেই। মিরপুর ২ থেকে ১০ নম্বরের সড়কে আন্দোলনকারীদের কাঠ, বাঁশসহ অন্যান্য জিনিস পোড়ানোর চিহ্ন এখনো রয়ে গেছে। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা  সেসব পরিষ্কার করছেন। মিরপুর ১০ নম্বরের পুলিশ বক্সটি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখানাকার পদচারী সেতুর অনেক জায়গায় ভেঙে গেছে।</p> <p style="text-align:justify">মিরপুর ১০ থেকে ১১ নম্বরের দিকে গেলে চোখে পড়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিস। সেই অফিসের ২০টির বেশি বর্জ্য বহনের গাড়ি পুড়িয়েছে দুর্বৃত্তরা। গাড়িগুলোর ধ্বংসাবশেষ এখনো সিটি করপোরেশনের ভেতরে রয়েছে। পোড়া গাড়িগুলো দেখার জন্য সাধারণ মানুষকে ভিড় করতে দেখা গেছে।</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, তেজগাঁও, গুলশান, রমনা, ওয়ারীসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরেও ধ্বংসস্তূপ দেখা গেছে।</p> <p style="text-align:justify">কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে সারা দেশে সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করে সরকার।</p>