<p style="text-align:justify">পদ্মার পানি মুন্সীগঞ্জের যশলদিয়া থেকে পরিশোধন করে ঢাকায় সরবরাহের প্রকল্প নেয় ঢাকা ওয়াসা। ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শুরু হয়। এই প্রকল্প বুয়েটে পরীক্ষা না করিয়ে কম পুরুত্বের নিম্নমানের পাইপ ব্যবহার করে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন ঢাকা ওয়াসার তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান। </p> <p style="text-align:justify">ওই কে৯ পাইপ সরবরাহ না করতে ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়ায় সরিয়ে দেওয়া হয় প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী এম এ রশীদ সিদ্দিকীকে। ওখানে নিজের অঘোষিত ক্যাশিয়ার প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলামকে বসিয়ে অর্থ লোপাটের পথ পরিষ্কার করেন তাকসিম।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="যেন মুকুটহীন রাজা ছিলেন প্রতিমন্ত্রী জাকির, যত অভিযোগ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/26/1729921993-194bd0a892f0996d52cfecb1e39286b1.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>যেন মুকুটহীন রাজা ছিলেন প্রতিমন্ত্রী জাকির, যত অভিযোগ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/10/26/1439305" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify"> শুধু এ প্রকল্প নয়, এমন কোনো মেগা প্রকল্প নেই যেখানে থাবা বসাননি তাকসিম। ওয়াসার প্রকল্পগুলোতে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ বিভিন্ন ধরন এবং আকারের পাইপ। আর এ পাইপে নয়ছয় করেই আখের গুছিয়েছেন তাকসিম ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা। তাকসিমের এসব অপকর্মে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম সহিদ উদ্দিন এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম ছিলেন ডান হাত এবং বাম হাত। যদিও এদের নিজেদের মধ্যে রয়েছে অন্তর্দ্বন্দ্ব। </p> <p style="text-align:justify">তাকসিম এ খান পলাতক থাকলেও ঢাকা ওয়াসায় বহাল তবিয়তে আছেন তার সাগরেদরা। ঢাকা ওয়াসার ১৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে ওয়াসার প্রকল্পের অর্থ তছরুপ, নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতিসহ বিভিন্ন অপকর্মে এমডি তাকসিম এ খানকে সহযোগিতা করার অভিযোগ। <br /> শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে গত ১৪ আগস্ট পদত্যাগ করেন ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান। এর পরই ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগ পান প্রতিষ্ঠানটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম সহিদ উদ্দিন। কিন্তু গত ৯ সেপ্টেম্বর এমডি হিসেবে প্রকৌশলী এ কে এম সহিদ উদ্দিনকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখার নির্দেশ দেন হাই কোর্ট। একই সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে জ্যেষ্ঠতম উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সাময়িকভাবে নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। </p> <p style="text-align:justify">আগে থেকেই তাকসিমের দুর্নীতি অনিয়ম অপকর্মের সঙ্গী হিসেবে হাত পাকানো সহিদ ২৫ দিনের এমডি হয়েই জড়িয়ে পড়েন অপকর্মে। অভিযোগ রয়েছে, এই সময়ে সাড়ে ৫ কোটি টাকার বিনিময়ে ৫৪ জন পাম্প অপারেটরকে ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি দেন। ২ কোটি টাকার বিনিময়ে ২৩ জনকে বিলিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে আউটসোর্সিং করেন। ১ কোটি টাকার বিনিময়ে ২৪ জন উপসহকারী প্রকৌশলীকে সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি এবং ১ কোটি টাকার বিনিময়ে ৩৫ জন উপসহকারী প্রকৌশলীকে পদায়নের কার্যক্রম গ্রহণ করেন। </p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বেশি কক্সবাজারে, মৃত্যু বরিশালে" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/26/1729920625-9ca7a3d574f10be437e37fe334768d9d.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বেশি কক্সবাজারে, মৃত্যু বরিশালে</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/10/26/1439302" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">তিনি নিয়োগ পেয়ে প্রথম ওএসডি করেন আগের প্রতিদ্বন্দ্বী মো. রফিকুল ইসলামকে। এই রফিকুল ইসলামও তাকসিমের ছায়ায় হাতিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। নিজের ইচ্ছামতো নয়ছয় করতে পদ্মা যশলদিয়া প্রকল্পের পরিচালককে সরিয়ে রফিকুলকে বসান তাকসিম। ২০১৪ সালের ৯ অক্টোবর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেন তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী এম এ রশীদ সিদ্দিকী।</p> <p style="text-align:justify">চায়না সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানিকে দেওয়া ওই চিঠিতে লেখেন ‘ঢাকা ওয়াসার সাথে এই প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ী কে৯ ডাকটাইল পাইপ গ্রহণযোগ্য না। তাই ঢাকা ওয়াসার অনুমোদন ছাড়া এই পাইপ না পাঠানোর জন্য বলা হচ্ছে।’ এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান ওয়াসার তৎকালীন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সিরাজউদ্দিন (গবেষণা, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এবং প্রধান কৌশলী আবুল কাশেমকে মেইল করে ধমকান। </p> <p style="text-align:justify">বলেন, ‘এসব কী চলছে?’ ২০১৪ সালের ৯ অক্টোবর রাত ৮টা ৫৬ মিনিটে পাঠানো ওই মেইলে তিনি আরো লেখেন, ‘আপনারা কি ওই চিঠি সম্পর্কে অবগত আছেন? প্রকল্প পরিচালক এগুলো কী করছে? তিনি কেন ওই চিঠি আপনার সাথে আলোচনা না করে লিখেছে? তাকে বলে দেন, আর একটা শব্দও যেন আমাকে বা আপনাকে জিজ্ঞেস না করে লেখা হয়।’ এই মেইলের অনুলিপি দিয়েছিলেন উপ-প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম এবং স্থানীয় ঠিকাদার অ্যারিডড গ্রুপের পরিচালক আজিজুল আকিল ডেভিডকেও।</p> <p style="text-align:justify">একইভাবে ওইদিন রাত ৯টা ২৭ মিনিটে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সিরাজউদ্দিন প্রকল্প পরিচালক এম এ রশীদ সিদ্দিকীকে মেইল পাঠান। তিনি লেখেন, ‘এরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা না বলে ঠিকাদারকে মেইল পাঠানোয় আমি অবাক হচ্ছি। এটি পুরো প্রক্রিয়াকে জটিলতায় ফেলেছে। আপনাকে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে এবং এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।’ </p> <p style="text-align:justify">এরপর প্রকল্প পরিচালকের পদ থেকে প্রকৌশলী এম এ রশীদ সিদ্দিকীকে সরিয়ে মো. রফিকুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে রফিকুল পানি শোধনাগারের ৩৩ কিলোমিটার মূল সঞ্চালন লাইনে ২২ মিমির পরিবর্তে ১৯ দশমিক ৫ মিমি পুরুত্বের নিম্নমানের ডাকটাইল আয়রন পাইপ ব্যবহার করে আত্মসাৎ করেন ৫০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া আরো বেশ কিছু প্রকল্পে ঠিকাদারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পকেট ভারী করেছেন রফিকুল। </p> <p style="text-align:justify">এ ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসার সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রবিউল কাইজার বলেন, ‘তাকসিম এ খান মেগা প্রকল্পগুলোতে নিজের পছন্দের লোকদের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিতেন। এই সিন্ডিকেটের যোগসাজশে চলত ওয়াসা। তাকসিমের এসব দুর্নীতিতে সায় না দিয়ে প্রতিবাদ করলেই চাকরিচ্যুত করতে মরিয়া হয়ে উঠতেন। আমাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আমি গত ১২ বছর ধরে তাকসিমের এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করে আদালতের দুয়ারে ঘুরছি। এসব দুর্নীতিবাজকে শনাক্ত করে চাকরিচ্যুত করতে হবে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’      </p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="বালুর বস্তায় আটকে ছিল জিহাদের মরদেহ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/26/1729923980-d910c0bfa749cd12cea822ced3c1f8b7.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>বালুর বস্তায় আটকে ছিল জিহাদের মরদেহ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/10/26/1439311" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">‘ঢাকাসহ বৃহত্তর মিরপুর এলাকায় পানির চাহিদা পূরণকল্পে মিরপুরের ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা হ্রাসকরণ’ প্রকল্পের জন্য সাভারের ভাকুর্তা, তেঁতুলঝোড়া এবং কেরানীগঞ্জের তারানগর ইউনিয়নে জায়গা নির্বাচন করা হয়। ঢাকার পানির স্তর নিচে নামা ঠেকাতে ভূগর্ভস্থ পানি তোলার জন্য গভীর নলকূপ বসাতে বেছে নেওয়া হয় এই ইউনিয়নগুলোকে। রাজধানীর মিরপুরে পানি সরবরাহে নেওয়া ওয়াসার ৫৭৩ কোটি টাকার প্রকল্পে গভীর নলকূপসহ পাম্প বসানোর জায়গায় শুধু পাইপ বসিয়ে কাজ শেষ করেছে ঠিকাদার। </p> <p style="text-align:justify">৪৬টি গভীর নলকূপ বসানোর কথা থাকলেও পাঁচটিতে পানি ওঠানোর প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিই বসানো হয়নি। এ ছাড়া তিনটিতে শুধু নলকূপের পাইপ বসিয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করে বিল তুলে নিয়েছে ঠিকাদার। </p> <p style="text-align:justify">এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ঢাকা ওয়াসার জবাবদিহিতা নিশ্চিতে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে সৎ সাহস দেখাতে হবে। ওয়াসার এই মেগা প্রকল্পগুলো দেশি-বিদেশি অর্থায়ন এবং জনগণের টাকায় করা হয়েছে। এগুলোকে পুরোপুরি সক্রিয় করতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিতে হবে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে। ওয়াসা এমডি একা এসব দুর্নীতি করতে পারবেন না। এখানে তার হাত হিসেবে কাজ করেছে সিন্ডিকেট। তাকসিম এ খান পলাতক হলেও এ সিন্ডিকেট সক্রিয় আছে। এসব অপরাধে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। নইলে আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলবে।</p>