দীর্ঘকাল অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমকায় থাকা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত সরকারের শক্তিটা অন্য। এর পেছনে জনগণ থাকে। এই কথাটা আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে।
দীর্ঘকাল অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমকায় থাকা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত সরকারের শক্তিটা অন্য। এর পেছনে জনগণ থাকে। এই কথাটা আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে।
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা আয়োজিত আলোচনাসভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
মির্জ ফখরুল বলেন, ‘আপনি সংস্কারের জন্য কয়েকটা কমিশন করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, আপনারা সংস্কার করেন আমাদের কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু যে বিষয়টা নিয়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে তা হলো বাংলাদেশের অস্থিরতা, অস্থিতিশীলতা এগুলো সমস্যা। এই সমস্যাগুলো অনেক কমে যাবে যদি একটা নির্বাচিত সরকার থাকে। নির্বাচিত সরকারের শক্তিটা অন্য।
তিনি বলেন, ‘আজকে দেখুন দেশের সংকট বাড়ছে তো বাড়ছেই। সবচেয়ে বড় সংকট সাধারণ মানুষের। চালের দাম এমনভাবে বেড়েছে যে, তাদের পক্ষে চাল কেনাও কঠিন হয়ে গেছে। চাল, ডাল, তেল, লবন, ডিম, মুরগি প্রতিটা জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটার দিকে তাদের (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) কোনো খেয়াল নেই। দ্রব্যমূল্য কমানোর জন্য তারা কাজ করছেন না। কিছু বললে বলেন, এত তাড়াতাড়ি সম্ভব না। কিন্তু আমরা উদ্যোগটা দেখতে চাই। কী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, সেটা দেখতে চাই। আমরা তো দেখলাম না, উনাদের কজন উপদেষ্টা বা যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন তারা বাজারে গিয়ে একটু জিজ্ঞাসা করছেন। মানুষকে বোঝার চেষ্টা করছেন যে, সমস্যাটা কোথায়?’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংস্কার কোনো নতুন ধারণা নয়। আর সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রতি মুহূর্তে সংস্কার হচ্ছে, সেই ধারা চলতে থাকবে। সে জন্য নির্বাচন বন্ধ হয়ে থাকতে পারে না। সেই পর্যন্ত আমরা একটি অনির্বাচিত সরকারের হাতে দিনের পর দিন দেশ চালাতে দিতে পারি না। সেই কারণে আমরা যখন বলি, নির্বাচন তাড়াতাড়ি চায়, তখন আমাদের সম্পর্কে একটা ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয় যে, বিএনপি তাড়াতাড়ি নির্বাচন চাচ্ছে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। ক্ষমতায় তো আমরা আগেও ছিলাম। আল্লাহ চাইলে আমরা আবারও ক্ষমতায় যাব।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম, ড. মুহাম্মদ ইউনূস নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। সেই প্রস্তাব হচ্ছে, ১৭ বছর ভোটার হওয়ার জন্য ন্যূনতম বয়সসীমা। এখন তা হলে কী করতে হবে? নতুন করে আবার ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এই বিষয়টাকে এভাবে না বলে উচিত ছিল, এই বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে তারপর বিষয়টা আনতে পারলে ভালো হতো। কোনো বিতর্কের সৃষ্টি হতো না। এখন তো আরো বেশি মানুষ আশাহত হবে। এটা করতে গিয়ে আরো সময় যাবে, আরো সময় খাবে, আরো সময়ক্ষেপণ হবে, আরো বিলম্ব হবে।’
ফখরুল বলেন, ‘কেন জানি না মানুষের মধ্যে একটা ধারণা হচ্ছে, এই সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিলম্ব করছে। এটা সঠিক নয়। বাট এট দ্য সেম টাইম মানুষের মধ্যে এই আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে।’
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ফার্মগেট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত দুই দিনব্যাপী জাতীয় সংলাপ-২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বলেন, ‘তরুণরা সংখ্যায় বেশি। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা আগ্রহী। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার মতামত নেওয়ার জন্য আমি মনে করি ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত।’
বিষয়টা নির্বাচন কমিশনকে ছেড়ে দিন
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই জিনিসটা (ভোটার তালিকার ন্যূনতম বয়সমীমা নির্ধারণ) তো কন্সসাস না। ইউ আর দ্য চিফ এক্সিকিউটিভ। আপনি প্রথমেই বলে দিচ্ছেন যে ১৭ বছর হলে ভালো। আপনি যখন বলছেন, তখন দ্যাট বিকামস বাইন্ডিং অন ন দ্যা ইলেকশন কমিশন। যেটা ইলেকশন কমিশন ঠিক করবে। এই বিষয়টা ইলেকশন কমিশনকে ছেড়ে দিন। দ্যাট দ্য ডিসাইড…১৮ বছর তো আছে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’
তিনি বলেন, ‘যদি এক বছর কমাতে চান তাহলে সেটা ইলেকশন কমিশন প্রস্তাব করুক যারা নতুন হয়েছে। কিন্তু উনি (প্রধান উপদেষ্টা) যখন প্রথমেই বলে দেন, তখন ইট ওয়াজ মাইন্ড ইট। এটা একটা চাপ তৈরি হয় ইলেকশন কমিশনের জন্য।’ তবে একই সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থনের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন বিএনপি মহাসচিব।
দ্রুত নির্বাচনের ফের দাবি
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন আছে এবং আমরা চাই যে, তারা সফল হোক এবং এ জন্য সব রকম সহযোগিতা করতে আমরা তৈরি আছি।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি অনুরোধ করব, দ্রুত করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। তা না হলে সমস্যাগুলোর সংকট বাড়তেই থাকবে এবং আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বলেন, বর্ডার সমস্যা বলেন, সাবোটাজ করার যে সমস্ত সব ঘটনাগুলো হচ্ছে, এই ঘটনাগুলো কমানো যাবে না।’
নতুন দল গঠন প্রসঙ্গে
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আরেকটা সংবাদ দেখলাম, আরও দু-তিনটা দল গঠিত হবে। নির্বাচন প্রক্রিয়াতে আরও ২-৩ দল গঠিত হয় আমাদের কোনো আপত্তি নাই। এক শ টা হলে, দুই শটা হলে তাতেও আপত্তি নাই।’
তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন হচ্ছে, জাতির জন্য কতটুকু কাজে লাগবে সেটাই সবাই চিন্তা করবে। এখন বাংলাদেশে একটা সমস্যা কি জানেন, আমরা সবাই রাজনীতিবিদ। দেখবেন, রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে, চর্চা করতে আমরা পছন্দ করি। আপনার সোশ্যাল মিডিয়া মারাত্মকভাবে সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে সবাইকে রাজনীতিবিদ হওয়ার। সবাইকে সাংবাদিক হওয়ার, সবাইকে ইউটিউবার হওয়ার, সবাইকে ফিলিসোফার হওয়া। তাই না। সবাই হয়ে গেছে। ভালো কথা, সবাই পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। সবাই কাজ করছেন। এটাকে একটা জায়গায় আনতে হবে তো। বাংলাদেশকে একটা পথে নিয়ে যেতে হবে তো।’
এখনো মানুষ স্তস্তি পায়নি
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখনো কিন্তু মানুষ স্বস্তি পায়নি। গতকাল একটা অনুষ্ঠানে ছিলোম। সেখানে অধ্যাপক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘খুব ভালো কথা, সংস্কার তো সবাই চায়। কিন্তু স্বস্তি চায়। বাজারে স্বস্তি চায়, রাস্তায় বেরিয়ে খুন হয়ে যাবে না সেটা চায়। গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করে ৬-৭ জন মারা যাবে না সেটা চায়। ওই দিকে একটু নজর দিতে হবে তো। প্রশাসনের দিকে নজর দিতে হবে। গভর্ন্যান্সের দিকে নজর দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করব, সরকার আরও বেশি গভর্ন্যান্সের দিকে নজর দেবেন। ব্যাংকের সব টাকা লুট করে নিয়ে চলে গেল তাদের বিরুদ্ধে তো একটা মামলাও শুরু হলো না। অন্য মামলা হচ্ছে যেটা আগের মতো। ওই সেই পুরনো অজ্ঞাতনামা ১০০০/১৫০০ আসামি। ওই একই কায়দায় আবার একটা বাণিজ্য করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এগুলো বন্ধ না করলে আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) যে জায়গায় পৌঁছাতে চাচ্ছেন সেই জায়গায় আপনি পৌঁছাতে পারবেন না।’
জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রিয়াজের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, এনডিপির চেয়ারম্যান আবু তাহের, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ন্যাপ চেয়ারম্যান এম এন শাওন সাদেকী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সম্পর্কিত খবর
আওয়ামী লীগের বিচার ও দলটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার বিষয়ে একমত পোষণ করেছে হেফাজতে ইসলাম ও জাতীয় নাগরিক পার্টি। বুধবার (৯ এপ্রিল) সকালে জাতীয় নাগরিক পার্টির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক মতবিনিময়সভায় এসব বিষয়ে একমত পোষণ করেন দল দুটির নেতারা।
সভায় হেফাজত ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল এবং আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে।
এতে আওয়ামী লীগের বিচার প্রশ্নে চারটি বিষয়ে একমত হয় হেফাজত ও এনসিপি।
এ ছাড়া মতবিনিময়সভায় সমসাময়িক রাজনৈতিক ও চলমান সংস্কার বিষয়ে আলোচনা হয়। ফ্যাসিবাদের সময়ে হেফাজতে ইসলাম ও অন্য দলগুলোর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের মিথ্যা হয়রানিমূলক ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার ও নিষ্পত্তি বিষয়ে একমত পোষণ করে এনসিপি। সংস্কার নিয়ে পারস্পরিক প্রস্তাবনাগুলোও উত্থাপন করা হয়।
সভায় হেফাজতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, নায়েবে আমির ড. আহমেদ আব্দুল কাদের, মাওলানা আহমেদ আলী কাসেমী, মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী প্রমুখ।
আর জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহদী, সংগঠক রফিকুল ইসলাম আইনী ও মো. সানাউল্লাহ প্রমুখ।
‘ইসরায়েলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক ছিল স্বামী-স্ত্রীর মতো’—মন্তব্য করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সহসভাপতি ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়াল বলেছেন, ‘স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ বিএনপি ও ছাত্রদলকে দমন করার জন্য ইসরায়েল থেকে পেগাসাস স্পাইওয়্যার এনে আড়ি পাতার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।’
গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বুধবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রদলের আয়োজনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের ডাক দিয়ে তিনি বলেন, ‘যেভাবে ভারতের পণ্য বয়কটের ডাক দিয়ে আমরা পতন নামিয়েছি; তেমনি ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করব।’
ডা. আউয়াল বলেন, ‘গাজা ও রাফাকে মুসলিমশূন্য করে দেওয়ার মিশনে নেমেছে ইসরায়েল।
তিনি আরো বলেন, ‘এই স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ বিএনপি ও ছাত্রদলকে দমন করার জন্য ইসরায়েল থেকে পেগাসাস স্পাইওয়্যার এনে আড়ি পাতার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তাওহীদুল ইসলাম সৈকত। এ ছাড়া উপস্থিত ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমেদ শিহাব, মো. মহসীন আলী, মাহিরুল ইসলাম মাহির, নয়ন হোসেন, আরিফ হোসেন সৈকত, জিদ্দান আদনান, মোসাদ্দেক হোসেন সৌরভ, রাফিন আহমেদ প্রমুখ।
অন্তর্বর্তী সরকারকে জাতীয় সরকারের রূপ দিয়ে সেই সরকারের অধীনে সংস্কার ও সংসদ নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে জমা দেওয়া লিখিত মতামতে এ দাবি জানিয়েছে তারা।
বুধবার (৯ এপ্রিল) গণ অধিকার পরিষদ ও বিকল্পধারা বাংলাদেশ লিখিত মতামত জমা দিয়েছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত ৩১টি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত জমা দিয়েছে।
রাজধানীর শেরেবাংলানগরের জাতীয় সংসদ ভবনে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের কাছে লিখিত মতামত জমা দিয়েছে গণ অধিকার পরিষদের প্রতিনিধিদল। পরে দলের উচ্চতর পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান রিজু উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকেই জাতীয় সরকারে রূপান্তরিত করতে হবে। সেই সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। জাতীয় সরকারই সংবিধানসহ সব সংস্কারকাজ সম্পন্ন করবে।
এদিকে কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবনার সাথে সম্পূর্ণ একমত প্রকাশ করেছে ড. নুরুল আমিন বেপারীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য, সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠনে ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়। সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, দুদক, জনপ্রশাসন সংস্কারে গঠিত পাঁচটি কমিশনের ১৬৬ সুপারিশে ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে মতামত চায় কমিশন।
গণহত্যার দায়ে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারে ঐকমত্য হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
বুধবার (৯ এপ্রিল) সকাল ১১টায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির সঙ্গে বৈঠক করেছে হেফাজতে ইসলাম। বৈঠকে এনসিপি ও হেফাজতের জ্যেষ্ঠ নেতারা অংশ নেন। হেফাজতে ইসলামের আগ্রহে এই বৈঠক হয়।
সভায় হেফাজত মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল ও আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে।
সভায় আওয়ামী লীগের বিচার, সংস্কার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মামলা-মোকদ্দমা নিয়ে আলোচনা হয়। আওয়ামী লীগের বিচার প্রশ্নে চারটি বিষয়ে একমত হয় হেফাজত ও এনসিপি।
>> গণহত্যার দায়ে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে।
>> বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল এবং রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত রাখতে হবে।
>> নির্বাচনের আগেই আওয়মী লীগের বিচারের পদক্ষেপ দৃশ্যমান করতে হবে।
>> আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা।
এ ছাড়া মতবিনিময়ে সমসাময়িক রাজনৈতিক ও চলমান সংস্কার বিষয়ে আলোচনা হয়। ফ্যাসিবাদের সময়ে হেফাজতে ইসলাম ও অন্যান্য দলের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের মিথ্যা হয়রানিমূলক ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার ও নিষ্পত্তি বিষয়ে একমত পোষণ করেন এনসিপি ও হেফাজত নেতারা। সংস্কার নিয়ে পারস্পরিক প্রস্তাবনাগুলো উত্থাপন করা হয়।