<p style="text-align:justify">বাংলাদেশে অত্যন্ত আলোচিত বছর ২০২৪ সাল। বিশেষ করে বছরের মধ্যভাগ থেকে কোটা সংস্কার তথা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল ছিল দেশ। কারো কারো বিরুদ্ধে বড় দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েও চলে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। আলোচিত-সমালোচিত ব্যক্তিদের নিয়ে আমাদের আয়োজন।</p> <h2 style="text-align:justify"><strong>আলোচিত</strong></h2> <p style="text-align:justify"><strong>মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ</strong> : কোটা সংস্কার আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবেও কাজ করতেন। আন্দোলনের সময় খাবার পানি এবং বিস্কুট বিতরণ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। মুগ্ধের কণ্ঠে ‘পানি লাগবে পানি’ শব্দ তিনটি মানুষের কাছে স্মৃতি হয়ে আছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>নাহিদ ইসলাম </strong>: কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনের ২০২৪ সালের ‘টাইম ১০০ নেক্সট’-এর তালিকায় উদীয়মান নেতা ক্যাটাগরিতে তাঁর নাম রয়েছে। আন্দোলনের সময় নাহিদকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছিল। মুক্তি পেয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনে নামেন।</p> <p style="text-align:justify"><strong>মুহাম্মদ ইউনূস</strong> : আওয়ামী লীগের শাসনকালে তাঁর বিরুদ্ধে কর ফাঁকি, শ্রম আইন লঙ্ঘনসহ একাধিক হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে তাঁকে হেনস্তা করার অভিযোগ রয়েছে। জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বে দেওয়া সমন্বয়করা গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন।</p> <p style="text-align:justify"><strong>ওয়াকার-উজ-জামান</strong> : জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে ছাত্র-জনতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রশংসা পান সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। তাঁর ৩৯ বছরের সামরিক জীবন কমান্ড, স্টাফ ও প্রশিক্ষকের অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন বলে তিনি জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র-জনতার সমর্থনে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>আসিফ নজরুল</strong> : কোটা আন্দোলনে ছাত্রদের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify"><strong>আসিফ মাহমুদ</strong> : কোটা সংস্কার আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। তিনিসহ সমন্বয়করা দেশে অসহযোগ আন্দোলন এবং পরিশেষে লং মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ডাক দেন। ফলে কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন হয়। আসিফ অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা।</p> <p style="text-align:justify"><strong>সারজিস আলম</strong> : ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। কোটা আন্দোলনের সময় তাঁর বিভিন্ন বক্তব্য ছাত্র-জনতাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। ডিবি হেফাজত থেকে মুক্তি পেয়ে আবার নামেন আন্দোলনে। বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন। উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে বিচার বা মব জাস্টিসকে আইনবিরোধী বলে মতামত দেন সারজিস।</p> <p style="text-align:justify"><strong>হাসনাত আবদুল্লাহ </strong>: কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্য পাঁচ সমন্বয়কের সঙ্গে তাঁকেও হেফাজতে নিয়েছিল ডিবি। পরে মুক্তি পেয়ে পুনরায় আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এখন আন্দোলনের মাঠে থেকে বিভিন্ন অন্যায়-অনিয়মের প্রতিবাদ করছেন। সরকারের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিচ্ছেন।</p> <p style="text-align:justify"><strong>শফিকুর রহমান </strong>: জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান আলোচনায় আসেন আগস্টে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানান। সেখানে উপস্থিত থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আলোচনায় আসেন শফিকুর। ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।</p> <p style="text-align:justify"><strong>তারেক রহমান :</strong> বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শেখ হাসিনার কাছে ‘প্রতিহিংসার’ শিকার হয়েছিলেন বলে আলোচনা রয়েছে। লন্ডনে থেকেই তিনি বিএনপিকে পরিচালিত করছেন। আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ভাঙার নানা চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দিয়ে তিনি বিএনপিকে এগিয়ে নিচ্ছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দীর্ঘদিন পর তারেক রহমানের বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচার ও প্রকাশ শুরু হয়। বিভিন্ন মামলায় খালাস পান তারেক।</p> <p style="text-align:justify"><strong>খালেদা জিয়া</strong> : ২০০৭ সালের পর সংসদের বাইরে থাকলেও আলোচনায় ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা করে। কয়েকটি মামলায় কারাদণ্ডও হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্তি পান। তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে।</p> <h2 style="text-align:justify"><strong>সমালোচিত</strong></h2> <p style="text-align:justify"><strong>শেখ হাসিনা</strong> : ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা প্রধানমন্ত্রী হয়ে ‘কর্তৃত্ববাদী’ ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কোটা সংস্কার তথা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড চালানোর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>বেনজীর আহমেদ </strong>: সাবেক আইজিপি বেনজীরের বিরুদ্ধে ক্ষমতার প্রভাব দেখানোর পাশাপাশি অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ার ও একাধিক মানুষ হত্যার অভিযোগ রয়েছে। ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজে জড়িত থাকার’ অভিযোগে র‌্যাবে থাকাকালে অন্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বেনজীরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।</p> <p style="text-align:justify"><strong>ওবায়দুল কাদের</strong> : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী  ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধেও জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড চালানোর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে বহু মামলা হয়েছে। বেফাঁস ও লাগামহীন বক্তব্যের জন্য ছিলেন সমালোচিত। এখন আত্মগোপনে রয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify"><strong>আসাদুজ্জামান খান কামাল </strong>: কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনে সর্বোচ্চ বল প্রয়োগ করার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তৎকালীন আওয়ামী লীগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে। ‘গণহত্যা’র অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে। আসাদুজ্জামান ও তাঁর পরিবারের নামে শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি দুদকের।  </p> <p style="text-align:justify"><strong>সালমান এফ রহমান </strong>: ঋণখেলাপি এবং ব্যাবসায়িক ‘কেলেঙ্কারির’ জন্য সমালোচিত। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাঁর মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ সুবিধা নিয়ে ঋণখেলাপির তালিকা থেকে নিজেদের নাম সরিয়ে ফেলে বলে অভিযোগ। শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা হওয়ার পর রাজনীতিতে একচেটিয়া প্রভাব তৈরি হয়। ১৩ আগস্ট পর্যন্ত ‘আত্মগোপনে’ ছিলেন।</p> <p style="text-align:justify"><strong>হারুন অর রশীদ </strong>: ২০১১ সালে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবেদিন ফারুককে হরতাল চলাকালে পিটিয়ে আহত করা থেকেই আলোচনায় ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ। রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে প্রভাবশালী বিভিন্ন ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে তাঁর অফিসে খাইয়ে সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করতেন। ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল ও অনলাইনে ভাইরাল হয়েছিল ডিবির কার্যালয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয়ে ধরে নিয়ে বেশ কয়েক দিন আটকে রেখেছিলেন তিনি। পরে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়াতে তিনি বাধ্য করেন বলে অভিযোগ। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা হয়েছে। বর্তমানে তিনি পলাতক।</p> <p style="text-align:justify"><strong>মতিউর রহমান :</strong> এনবিআরের সদস্য থাকা অবস্থায় মতিউর রহমান বছরব্যাপী আলোচনায় ছিলেন। কোরবানির জন্য ১২ লাখ টাকার ছাগল কেনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত মুশফিকুর রহমান ইফাত ও তাঁর বাবা মতিউর। মতিউরকে নিয়ে অনুসন্ধানে নেমে দুদক বিপুল অর্থবিত্তের প্রমাণ পায়। </p> <p style="text-align:justify"><strong>জিয়াউল আহসান </strong>: এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক। গুম, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ আগস্ট চাকরি থেকে এই সেনা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। এনটিএমসির দায়িত্বে থাকাকালে কল রেকর্ড ফাঁস করার অভিযোগ রয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের সময় তাঁর নির্দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করার অভিযোগ রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>আনিসুল হক </strong>: সাবেক আইনমন্ত্রী। তাঁর বিরুদ্ধে আদালতকে ব্যবহার করে বিরোধী দল ও বিরোধী মতকে দমনের অভিযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৩ আগস্ট পর্যন্ত ‘আত্মগোপনে’ ছিলেন। ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৬ জুলাই ঢাকা কলেজের সামনে সংঘর্ষে একজন ছাত্র ও একজন হকার নিহত হন। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify"><strong>এস আলম</strong> : সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে এক লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে আগস্টে এস আলম ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে বাংলাদেশের তদন্তকারী সংস্থা।</p>