<p style="text-align:justify">‘তামাক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের বিকল্প নেই।’ তামাক নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যম শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন আলোচকরা। গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিএমএ ভবনে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৭ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।</p> <p style="text-align:justify">আলোচকরা বলেন, ‘প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর সর্ববৃহৎ কারণ তামাক। তামাকের কারণে বিশ্বে প্রতিবছর ৮০ লাখেরও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করে। তামাকের আর্থ-সামাজিক, পরিবেশ ও প্রতিবেশগত ক্ষতিও রয়েছে ব্যাপক। তামাকের বহুমাত্রিক ক্ষয়-ক্ষতি রোধে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ, জোরালো কর ও মূল্য পদক্ষেপ গ্রহণ এবং কম্পানির কূটকৌশল সম্পর্কে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের কার্যকর ভূমিকা অনস্বীকার্য।’</p> <p style="text-align:justify">কর্মশালায় জানানো হয়, বাংলাদেশে ১৫ বছর ও তদুর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৩৫.৩ শতাংশ। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে, পঙ্গুত্ববরণ করে আরো কয়েক লক্ষ মানুষ। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির ২০১৯ সালে প্রকাশিত গবেষণা ফলাফল অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা একইসময়ে এই খাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের (২২ হাজার ৮১০ কোটি) চেয়ে অনেক বেশি। সবমিলিয়ে বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং পরিবেশের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে হুমকি সৃষ্টি করছে।</p> <p style="text-align:justify">কর্মশালায় আরো জানানো হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রস্তুতকৃত আইনের খসড়া সংশোধনীতে সকল পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান রাখার বিধান বিলুপ্তকরণ, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য বা প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ, তামাক কম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধকরণ, ই-সিগারেট, ভ্যাপিং, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসহ এ ধরনের সকল পণ্য উৎপাদন, আমদানি ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করাসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় কম্পানির প্রভাবমুক্ত থেকে খসড়াটি দ্রুত পাসের আহ্বান জানানো হয়। </p> <p style="text-align:justify">তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি বলে কর্মশালায় জানানো হয়। বাংলাদেশে তামাকের কাঠামো ত্রুটিপূর্ণ এবং তামাকপণ্য অত্যন্ত সস্তা ও সহজলভ্য। সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের মাধ্যমে সবধরনের তামাকপণ্যের দাম জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়া এবং সিগারেটের মূল্যস্তর পর্যায়ক্রমে ৪টি থেকে কমিয়ে একটিতে আনার আহ্বান জানানো হয় কর্মশালায়।</p> <p style="text-align:justify">দুই দিনব্যাপী কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিসিআইসির সাবেক চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, এনটিভির হেড অব নিউজ জহিরুল আলম, আত্মার কনভেনর লিটন হায়দার, কো-কনভেনর মিজান চৌধুরী, এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।</p>