ফারাজ প্রকল্পে ৭৩ কোটি টাকা ভারতে পাচার

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ফারাজ প্রকল্পে ৭৩ কোটি টাকা ভারতে পাচার
সিমিন ও ফারাজ

ট্রান্সকম গ্রুপ ‘ফারাজ’ নামে সিনেমা নির্মাণে ভারতে অন্তত ৭৩ কোটি টাকা পাচার করেছে। ২০২০ এবং ২০২১ সালে এই অর্থ পাচার করা হয়। মানিলন্ডারিং বিষয়ে সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। 

ট্রান্সকম গ্রুপের সিইও সিমিন রহমানের ছেলে ‘ফারাজ’-এর জীবন নিয়ে এই কল্পকাহিনিভিত্তিক সিনেমাটি ভারতীয়।

সেই কল্পকাহিনি নির্মাণের জন্য পুরো টাকা দিয়েছিল ট্রান্সকম গ্রুপ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে ট্রান্সকম গ্রুপ ভারতে এই সিনেমা প্রযোজনার জন্য কোনো টাকা পাঠানোর অনুমতি গ্রহণ করেনি। এমনকি ট্রান্সকম গ্রুপের নথিপত্রেও এ ধরনের কোনো প্রকল্পের কথা উল্লেখ নেই। 

২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বিতর্কিত এই সিনেমা নির্মাণের সব টাকা দিয়েছে ট্রান্সকম গ্রুপ ও সিমিন রহমান।

এই সিনেমার পরিচালক হানসাল মেহতা ‘ফিল্ম ফেয়ার’ পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন। 

গত বছরের অক্টোবরে এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়। হানসাল মেহতা দাবি করেছেন, এটি একটি ফরমায়েশি সিনেমা। এর পরিকল্পনা, পাণ্ডুলিপি এবং অর্থ সবই দেওয়া হয়েছে সিমিন রহমান এবং তার শিল্প গ্রুপের মাধ্যমে।

 

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় কয়েকজন বিদেশিসহ ২২ ব্যক্তি মারা যান। ওই জঙ্গি হামলা সারা দেশকে স্তম্ভিত করেছিল। সে সময় জঙ্গিদের সঙ্গে ছিলেন ট্রান্সকম গ্রুপের বর্তমান সিইও সিমিন রহমানের ছেলে ফারাজ। তিনি জঙ্গিদের সহযোগী ছিলেন বলে পরবর্তী সময়ে একাধিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায়।

কিন্তু ঘটনার পরপরই ট্রান্সকম গ্রুপের সিমিন রহমান তার ছেলেকে নিয়ে শুরু করেন সাজানো নাটক। 

বিপুল অর্থ ঢেলে জঙ্গি ছেলেকে ‘বীর’ বানানোর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকারের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে ফারাজ যে একজন জঙ্গি হিসেবে ওখানে নিহত হয়েছিলেন, এই তথ্যটি গোপন করা হয়। এতেও ক্ষান্ত হননি সিমিন রহমান। পরে তিনি পুরো ঘটনাটাকে অন্যভাবে সাজানোর জন্য একটি বিতর্কিত সিনেমা তৈরির পরিকল্পনা নেন। 

এ নিয়ে তাকে পরামর্শ ও সহযোগিতা করেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের ঘনিষ্ঠ নুরুজ্জামান লাভলুকে দায়িত্ব দেওয়া হয় এই ঘটনায় ফারাজকে নায়ক বানিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করার। নুরুজ্জামান লাভলু সেই অনুযায়ী অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করেন। 

এরপর সিমিন রহমান বাংলাদেশের অন্তত দুজন চলচ্চিত্র পরিচালকের সঙ্গে এই নিয়ে কথা বলেন। তাদের এ বিষয়ে সিনেমা তৈরির অনুরোধ করেন। এ সিনেমা নির্মাণের জন্য তাদের বিপুল অর্থ দেওয়া হবে বলেও প্রলোভন দেখান। কিন্তু বাংলাদেশের এই দুই পরিচালকের কেউই এতে রাজি হননি। এরপর সিমিন রহমান ভারতে যান। সেখানে একাধিক চিত্রপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেন। 

অবশেষে মতিউর রহমান ও মাহ্ফুজ আনামের মধ্যস্থতায় ভারতের তিনজন পরিচালক এ বিষয়ে রাজি হন। পরে মতিউর রহমান, মাহ্ফুজ আনাম ও আনিসুল হকের নেতৃত্বে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। সেই বাছাই কমিটিতে সর্বসম্মতভাবে হানসাল মেহতাকে পরিচালক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হানসাল মেহতা সিনেমাটি নির্মাণের আগে ঢাকায় আসেন। সিমিন রহমানের সঙ্গে আর্থিক বিষয়াদি চূড়ান্ত হওয়ার পর সিনেমা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। 

সিনেমাটি নির্মাণের ব্যাপারে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তিনটি প্রতিষ্ঠানকে প্রযোজক হিসেবে দেখানো হয়েছে। এই তিনটি প্রতিষ্ঠান হলো- টি সিরিজ, বেনারস মিডিয়া ওয়ার্কস ও মাহানা কোম্পানি। এর মধ্যে টি সিরিজ ভারতে প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয়। বেনারস মিডিয়া ওয়ার্কস অনুভব সিনহার প্রতিষ্ঠান। 

এই প্রতিষ্ঠানও দীর্ঘদিন সিনেমা নির্মাণের সঙ্গে জড়িত। মাহানা কোম্পানিটির কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এই কোম্পানিটি শুধু একটি সিনেমা করেছে, সেটি হলো ‘ফারাজ’। এর আগে-পরে এই প্রতিষ্ঠানটি ভারতীয় কোন সিনেমার সঙ্গে নিজেদের যুক্ত রাখেনি। 

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই মাহানা কোম্পানি হলো সিমিন রহমান এবং তার পুত্র যারাইফ আয়াত হোসেনের একটি ভৌতিক কোম্পানি। যে কোম্পানির মাধ্যমে এই সিনেমাটির অর্থায়ন করা হয়। হানসাল মেহতা নিজেই জানিয়েছেন সিনেমাটি নির্মাণে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ কোটি রুপির মতো। 

অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭৩ কোটি টাকার কাছাকাছি। এই পুরো অর্থই সিমিন রহমান দিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। ভারতীয় চলচ্চিত্র বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী টি সিরিজ সিনেমার গানের জন্য স্বত্ব নেয়। আর বেনারস মিডিয়া ছিল পরিবেশক। সিনেমায় এই দুই প্রতিষ্ঠান কোনো বিনিয়োগ করেনি। 

এই সিনেমাটি খুবই বিতর্কিত এবং হোলি আর্টিজানের মূল তদন্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নির্মাণ করা হয়েছে। সিনেমায় পুরো ঘটনাকে অন্য খাতে প্রবাহিত করে ফারাজকে এ ঘটনার একজন নায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এমনভাবে হোলি আর্টিজানের ঘটনা বিকৃত করা হয়েছে, যেখানে দেখানো হচ্ছে যে ফারাজ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। 

কিন্তু হোলি আর্টিজানের প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা যায়, এ ধরনের কোনো ঘটনাই সেখানে ঘটেনি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অনুসন্ধান করে দেখেছে, এই সিনেমা নির্মাণের পর্যায়ে সিমিন রহমান ও তার পুত্র যারাইফ আয়াত হোসেন অন্তত পাঁচবার ভারতে গিয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, হানসাল মেহতা এবং তার টিম বাংলাদেশে এসেছিল চারবার। এ সময় সিমিন রহমানের বাসায় তারা একাধিক নৈশভোজেও অংশ নিয়েছিলেন। 

ধারণা করা যায়, এই সিনেমার অর্থ নিতেই হানসাল মেহতা ও তার টিম বাংলাদেশে এসেছিল। তা ছাড়া তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই সিনেমাটি বাংলাদেশে সুটিং করার জন্য কোনো অনুমোদন মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া হয়নি। অথচ আইন অনুযায়ী এ ধরনের যৌথ প্রাযোজনায় কোনো সিনেমা নির্মাণ করতে গেলে বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব অনুমোদন লাগে। 

তৎকালীন দুর্নীতিবাজ তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে যোগসাজশে সিমিন রহমান অনুমতি না নিয়েই এই সিনেমা নির্মাণ করেছিলেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখন সিআইডি সিমিন রহমান ও যারাইফ আয়াত হোসেনের অবৈধভাবে ভারতে ৭৩ কোটি টাকা পাচারের বিষয়টি তদন্ত করছে বলে জানা গেছে। 

সিআইডির একটি সূত্র বলেছে, শুধু ‘ফারাজ’ নির্মাণই নয়, প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের আরেকটি প্রতিষ্ঠান ওটিটি প্ল্যাটফরম চরকিও তৈরি হয়েছে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে। চরকি প্রতিষ্ঠার সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের তৎকালীন হাইকমিশনার বিক্রম দোরাই স্বামীর সঙ্গে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

চরকিতে যে ভারত এবং প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের যৌথ অর্থায়ন ঘটেছে সে বিষয়েও সরকারের অনুমতি নেওয়া হয়নি। চরকির মাধ্যমেও বিপুল অর্থ পাচার করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে। এ ব্যাপারে তারা তদন্ত শুরু করেছে। ট্রান্সকম গ্রুপ ও সিমিন রহমানের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

রমজানের সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ

শেয়ার
রমজানের সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ

এবারের রমজানের সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। গত ২৭ জানুয়ারি ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৪৪৬ হিজরির রমজান মাসের সাহরি ও ইফতারের এই সময়সূচি চূড়ান্ত করে।

আরো পড়ুন
ডি আর কঙ্গোতে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে ৭০০ জনের মৃত্যু : জাতিসংঘ

ডি আর কঙ্গোতে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে ৭০০ জনের মৃত্যু : জাতিসংঘ

 

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দ্বিনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক সরকার সরোয়ার আলম সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২ বা ৩ মার্চ শুরু হবে এবারের পবিত্র রমজান মাস।

তবে রমজান শুরুর সময় ২ মার্চ ধরে ঢাকার সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

আরো পড়ুন
এনামুল হক বিজয়ের দেশত‍্যাগে নিষেধাজ্ঞা

এনামুল হক বিজয়ের দেশত‍্যাগে নিষেধাজ্ঞা

 

সময়সূচি অনুযায়ী, ২ মার্চ প্রথম রমজানে ঢাকায় সাহরির শেষ সময় ভোররাত ৫টা ৪ মিনিট ও ইফতারির সময় ৬টা ২ মিনিট। তবে দূরত্ব অনুযায়ী ঢাকার সময়ের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৯ মিনিট পর্যন্ত যোগ করে ও ৯ মিনিট পর্যন্ত বিয়োগ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ সাহরি ও ইফতার করবেন বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে জানা গেছে।

1

দেশের অন্যান্য বিভাগ ও জেলার সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয় থেকে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন দ্বিনি দাওয়াত বিভাগের কর্মকর্তারা।

মন্তব্য

চিরগৌরবের ভাষার মাস শুরু আজ

সালেহ ফুয়াদ
সালেহ ফুয়াদ
শেয়ার
চিরগৌরবের ভাষার মাস শুরু আজ
সংগৃহীত ছবি

আজ শনিবার ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন। শুরু হলো বাঙালির চিরগৌরব, চিরপ্রেরণার ভাষার মাস। আজ থেকে ঘরে-বাইরে সবখানে শোনা যাবে একুশের গান। আবারও বাংলার দামাল ছেলেদের আত্মত্যাগের স্মৃতি তাজা হয়ে উঠবে।

আবৃত্তি হবে ভাষাশহীদদের স্মরণে লেখা অমর সব কবিতা। নতুন করে ভাষার প্রতি আরো যত্নশীল হওয়ার বোধ তৈরি হবে। ছড়িয়ে পড়বে ভাষার অধিকারের সমতার বার্তা। তৈরি হবে সব ভাষা টিকিয়ে রাখার তাগিদ।

আরো পড়ুন
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় ছাত্রদল কর্মীর শাস্তি মওকুফ

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় ছাত্রদলকর্মীর শাস্তি মওকুফ

 

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন বাঙালির সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে সৃষ্টি করেছিল অভূতপূর্ব এক অভিঘাত। স্বাধীনতার উন্মেষ-চেতনার ভিত রচিত হয়েছিল ৭৩ বছর আগের সেই আন্দোলনে। সেই জাগৃতি ও স্ফুরণের ধারাবাহিকতায় অর্জন আজকের বাংলাদেশ। ভাষাশহীদরা প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ের গহিনে চিরজাগরূক।

গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় চিরদিন স্মরণীয় তাঁরা।

ভাষা আন্দোলনের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূল্য অপরিসীম। এ কারণে ফেব্রুয়ারি মাস এলে দেশজুড়ে শুরু হয় নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। শহীদদের স্মরণে বাংলা একাডেমি মাসব্যাপী আয়োজন করে অমর একুশে বইমেলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বরে বসে জাতীয় কবিতা উৎসব।

আরো পড়ুন
বিকেলে ইজতেমায় অনুষ্ঠিত হবে যৌতুকবিহীন বিয়ে

বিকেলে ইজতেমায় অনুষ্ঠিত হবে যৌতুকবিহীন বিয়ে

 

শহীদ মিনারে আয়োজন করা হয় নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিদিন দেশব্যাপী থাকে নানা কর্মসূচি। বরাবরের মতো আজ থেকে মাসব্যাপী শুরু হচ্ছে সেসব আয়োজন।

ভাষা ঘিরে এই অভূতপূর্ব জাগরণ তৈরি হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্লজ্জ বৈষম্য সৃষ্টি থেকে। ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’—৭৩ বছর আগে পাকিস্তান সরকারের এমন ঘোষণায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বাংলার মানুষ এই অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি। তাই বাংলা ভাষার সমমর্যাদার দাবিতে পূর্ব বাংলায় দ্রুত দানা বাঁধে আন্দোলন।

আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এই আদেশ অমান্য করে ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মীরা মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি পৌঁছলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ করে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে শহীদ হন সালাম, রফিক, শফিক, জব্বার, বরকতসহ নাম না জানা আরো অনেকে। এতে তীব্র আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।

ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ বাঙালির ভাষাশহীদ দিবস। একই সঙ্গে দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। পৃথিবীর সব জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদার স্বীকৃতি স্মরণ করিয়ে দিতে দিনটি বাঙালি জাতির জন্য বিশেষ আবেগের। মাতৃভাষার জন্য বুকের তাজা রক্ত দেওয়ার উদাহরণ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ভাষার জন্য বাংলার সূর্যসন্তানদের এই বিরল আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর।

এদিন ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এর মধ্য দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি এখন বিশ্বের দেশে দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। শুধু বাংলা ভাষা নয়, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আরো যেসব ভাষার মানুষ আছে, তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষা বিকাশের উদ্যোগ বেগবান করার তাগিদ দেয় এই দিবস।

মন্তব্য

ঢাকার বাতাস আজ ‘অস্বাস্থ্যকর’, বেশি দূষণ যেসব এলাকায়

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ঢাকার বাতাস আজ ‘অস্বাস্থ্যকর’, বেশি দূষণ যেসব এলাকায়
ছবি: কালের কণ্ঠ

বায়ুদূষণে বিশ্বের শহরগুলোর তালিকায় আজ পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) ১৮৯ স্কোর নিয়ে ঢাকার বাতাসের মান ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে রয়েছে। শনিবার ৮টা ৫২ মিনিটে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (আইকিউএয়ার) সূচক থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

আজ ঢাকার সবচেয়ে দূষিত বাতাস বিরাজ করছে ইস্টার্ন হাউজিং (২৩৬) এলাকায়।

তালিকায় এর পরেই রয়েছে গোড়ান (২২৮), ঢাকার মার্কিন দূতাবাস (২১৯), সাভারের হেমায়েতপুর (২১৬), মহাখালীর আইসিডিডিআরবি (২০১) এলাকা। এসব এলাকায় বাতাসের মান খুবই অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া গুলশান লেক পার্ক এলাকা (১৮৯), তেজগাঁওয়ের শান্তা ফোরাম (১৮৯), কল্যাণপুর (১৮৮), গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল (১৮৪) এলাকায় বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে রয়েছে। 

এদিন বিশ্বের শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুষিত বাতাস বিরাজ করছে কম্বোডিয়ার শহর নম পেন (২১৫)।

তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে মিয়ানমারের ইয়াংগন (২১১) ও উগান্ডার কাম্পালা (২০৫)। শহরগুলোর বাতাসের মান ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে রয়েছে। 

একটি শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, তার লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক জানিয়ে থাকে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। প্রতিষ্ঠানটির মানদণ্ড অনুযায়ী, স্কোর শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে বায়ুর মান ভালো বলে বিবেচিত হয়।

৫১ থেকে ১০০ হলে মাঝারি বা সহনীয় ধরা হয় বায়ুর মান। সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে খুবই অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া ৩০১-এর বেশি হলে তা দুর্যোগপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

একনজরে আজকের কালের কণ্ঠ (০১ ফেব্রুয়ারি)

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার

সর্বশেষ সংবাদ