বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আশিক চৌধুরী। কর্মদক্ষতা, উপস্থাপনা শৈলী ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে যিনি ইতোমধ্যে মানুষের মন জয় করেছেন। আজ বুধবার (৯ এপ্রিল) বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একটি প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন। তথ্যবহুল ও সাবলীল ভাষায় দেশের সম্ভাবনাময়ী খাতগুলো তুলে ধরার সেই ভিডিও ইতোমধ্যে সোশ্যাল মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
প্রেজেন্টেশন সেই ভিডিও শেয়ার করে সোশ্যাল মাধ্যমে অনেকেই বলছেন, ‘এই মেধাবী তরুণরা এত দিন দেশে আসতে ভয় পেতেন। কিন্তু ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর মেধাবীরা দেশে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই আশিক চৌধুরী। যিনি বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে দেশের প্রয়োজনে নিজেকে নানাভাবে উপস্থাপন করছেন।
’
লেখক গাজী মিজানুর রহমান তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘কিছু লোক দেশপ্রেমের চেতনার কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ভালো থাকার জন্য দেশের টাকা সিঙ্গাপুরে পাচার করে বিলিয়নেয়ার হয়, আর জনাব আশিক চৌধুরীর মতো কিছু লোক নিজ মাতৃভূমির ভালোবাসার টানে সিঙ্গাপুরের আয়েশি জীবন ছেড়ে বাংলাদেশের মানুষের জন্য ছুটে এসেছেন দেশে। এখানে চেতনার ফেনা তোলা আর প্রকৃত দেশপ্রেমিকদের মধ্যে মূল পার্থক্য।’ এভাবে অনেকেই আশিক চৌধুরীর প্রশংসা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।
আর যতই দিন যাচ্ছে, ততই আশিক চৌধুরী এত দিন কোথায় ছিলেন? কী করতেন—এমন প্রশ্ন এখন সর্বত্র।
যতটুকু জানা গেছে, আশিক চৌধুরী পেশায় ব্যাংকার। সিঙ্গাপুরে বহুজাতিক দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) রিয়েল অ্যাসেট ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার একটি ফোনকলে তিনি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নিয়েছেন।
যেভাবে বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে দেশে আসেন আশিক :
গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখার উপসচিব এ টি এম শরিফুল আলম স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপনে আশিক চৌধুরীকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্মসম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে গত সোমবার (৭ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনে আশিক চৌধুরীকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে নিয়োগের বিষয়ে গত বছরের ৬ নভেম্বর আশিক চৌধুরী নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “সরকারি চাকরির আজকে এক মাস হলো। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি এক দুপুরে প্রফেসর ইউনূস হঠাৎ ফোন করে বললেন, ‘আশিক, দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পাওয়া গেছে। আসবা নাকি?’ আমি নন্দিনীকে জিজ্ঞেস না করেই রাজি হয়ে গেলাম। জানতাম ও কোনো দিন মানা করবে না। সো ৫৯ সেকেন্ডের এক হোয়াটসঅ্যাপ কলে আমরা সিঙ্গাপুরের বিলাসী জীবন ছেড়েছুড়ে দেশের পথে রওনা দিলাম বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে, বন্ধুদের ভাষায় বাংলাদেশের চিফ মার্কেটিং অফিসার হিসেবে।
গত এক মাস শুক্র-শনিবারসহ দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেও কূল পাচ্ছি না। প্রায় আড়াই শ সিইও, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করছি তাদের সমস্যাগুলো কোথায় আর কী করে তার সমাধান করতে পারি। নতুন ইনভেস্টমেন্ট কিভাবে আনতে পারি। চেষ্টা চলছে। ফেল করা যাবে না। আমরা জনগণের সরকার। তাই প্রত্যাশা অনেক। অনেকটা জাতীয় ক্রিকেট দলের মতো। সবাই চায়, আমরা জিতি। কিন্তু পরের বলটা একটু খারাপ হলেই সবাই হা হা করে ওঠে। টিম সিলেকশন, বোলার সিলেকশন, ফিল্ড সেটিং, এসব নিয়ে নানা সমালোচনা। ম্যাচে সবাই ভালো বল করবে না, এটাই স্বাভাবিক। তা নিয়ে দলের সমর্থকরা গালাগাল করবে, তা-ও স্বাভাবিক। দলটা তো আমাদের। কয় দিন আগেও এসব করা কবিরা গুনাহ ছিল। তাই দিনশেষে টায়ার্ড হয়ে ফেসবুক খুলে যখন মনে হয় আমার বউ ও বিরোধী দল, তখন নিজেকে বোঝাই: এটাই তো আসলে বাকস্বাধীনতা। হোক না সমালোচনা। আমরা ভুল করব। তারপর শুধরাব। আমাদের দেশটা আস্তে আস্তে ঠিক রাস্তায় হাঁটবে।”
জানা গেছে, চাঁদপুরে বাড়ি হলেও বাবার চাকরির সুবাদে আশিকের বেড়ে ওঠা যশোরে। স্কুল-কলেজের পাট চুকিয়েছেন সিলেট ক্যাডেট কলেজে। এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ)। ২০০৭ সালে স্নাতক শেষেই যোগ দেন দেশের বেসরকারি একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। ছুটিছাটায় ছুটে যেতেন রোমাঞ্চের টানে। ২০১১ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানেই চাকরি করেছেন। তারপর পড়তে যান যুক্তরাজ্যে। তখন থেকে সেখানেই তিনি নিজেকে নতুনভাবে গড়েছেন।
এই আশিক চৌধুরী একজন স্কাইডাইভার। যিনি ৪১ হাজার ফুট উঁচু থেকে দেশের লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে লাফ দেন। যার কারণে তিনি ইতোমধ্যে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বুকে নাম লিখিয়েছেন।