হাম দো, হামারা তেইশ!
আর মাত্র দেড় মাসের অপেক্ষা৷ তার পরই মায়ের কোলজুড়ে আসবে ২৩তম সন্তান৷ ২৩বারের গর্ভবতী এই নারীর নাম বসিরান বিবি৷ না, এ কোনো গল্পকথা নয়, একেবারেই বাস্তব৷ বাস্তবে এই ঘটনাটি ঘটতে চলেছে সবংয়ের কানুচক গ্রামে৷ ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে৷ তবে হইচই ফেলে দেওয়া ঘটনায় বিশেষ কোনো হেলদোল নেই ২৩তম সন্তানের হবু বাবা শেখ সাত্তারের৷ আর পাঁচটা বিষয়ের মতো এই ব্যাপারটিও তাঁর কাছে খুব স্বাভাবিক৷ এতে কোনো অন্যায় দেখছেন না তিনি৷ তাঁর ভাবখানা এমন ‘জিভ দিয়েছেন যিনি, আহার দেবেন তিনি'৷
জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে শেখ সাত্তার বা বসিরান বিবির অজ্ঞতা স্পষ্ট৷ বরং স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে গিয়ে ৫২ বছর বয়সে তিনি যে ফের বাবা হতে চলেছেন সেই আনন্দে এখন মশগুল সাত্তার সাহেব৷ এ পর্যন্ত ২২টি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ৪৬ বছরের বসিরান বিবি৷ তার মধ্যে ১৭টি ছেলেমেয়ে বেঁচে রয়েছে৷ আর পাঁচটি মারা গিয়েছে৷ লজ্জিত বসিরান বিবির আশা, পেটে যে সন্তান এখন রয়েছে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন৷ আর তাই যদি হয় তাহলে এই দম্পতির জীবিত সন্তানের সংখ্যা হবে ১৮৷
তবে সবচেয়ে মজার বিষয়, এক নিঃশ্বাসে তো দূরের কথা, মাথা চুলকেও জীবিত সব সন্তানের নাম এই দম্পতি বলতে পারলেন না৷ অনেক কষ্টে মাত্র প্রথম তিন মেয়ের নাম বলতে পেরেছেন৷ তারা হল রুকসানা, সাহানারা ও জাহানারা৷ বাকি নয় জনের নাম সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শেখ রহমতকে জিজ্ঞাসা করে কোনও রকমে বলতে পেরেছেন৷ এরা শেখ জামশেদ, শেখ সবরাতি, শেখ লালু, শেখ কালু, শেখ রহমত, বাণী খাতুন, শেখ মহম্মদ, সুরাদ আলি, শেখ বসির৷ বাকিদের নাম রহমতও মনে করতে পারেননি৷
ইতিমধ্যে চার মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ২২ সন্তানের জন্মদাতা৷ সাত্তার সাহেব এক সময়ে ফেরি করতেন৷ কিন্তু বর্তমানে পায়ের সমস্যার জন্য ফেরি করতে পারেন না৷ দুই ছেলে দিনমজুরের কাজ করে৷ বর্তমানে ১৭ জনকে নিয়ে একসঙ্গে থাকেন সাত্তার সাহেব৷ ছিটেবেড়ার দেওয়াল৷ খড়ের চালের বাড়ি৷ গরমকালে কষ্ট নেই৷ রাতে বাড়ির বাইরে শোয়া যায়৷ কষ্ট বর্ষা ও শীতে৷ ওই ছোট একচালার বাড়িতে ১৩টি প্রাণীকে একসঙ্গে থাকতে হয়৷ তিনি জানেন না আশু সন্তানটিকে কীভাবে ও কোথায় রাখবেন৷ তাঁর বিশ্বাস, আগের ২২টির মতো এই সন্তানকেও ঠিক সামলে নেবেন৷
তবে সম্প্রতি তিনি সবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অমল পান্ডার কাছে অনুরোধ করেছেন গীতাঞ্জলি প্রকল্পে তাঁকে একটি বাড়ি বানিয়ে দিতে৷ প্রকল্পের ৭০ হাজার টাকায় লম্বা গোয়ালের মতো একটি বাড়ি তৈরি করবেন ছিটেবেড়া দিয়ে৷ এই ব্যাপারে অমলবাবু জানিয়েছেন, ''চেষ্টা করছি গীতাঞ্জলি প্রকল্পে সাত্তারকে একটি বাড়ি তৈরি করে দিতে৷'' তবে অমলবাবু জানিয়েছেন, সাত্তারবাবুকে জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক রকম পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ ''কিন্তু কানে তুললে তো!'' আক্ষেপ অমল বাবুর৷ অবশ্য সাত্তারসাহেব জানিয়েছেন, 'এটাই শেষ!'
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন
।