ঢাকা, শনিবার ০৫ এপ্রিল ২০২৫
২২ চৈত্র ১৪৩১, ০৫ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, শনিবার ০৫ এপ্রিল ২০২৫
২২ চৈত্র ১৪৩১, ০৫ শাওয়াল ১৪৪৬

রুশ ব্যবসায়ীর ফেলে যাওয়া রাসায়নিক থেকে বৈরুত ট্র্যাজেডি!

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
রুশ ব্যবসায়ীর ফেলে যাওয়া রাসায়নিক থেকে বৈরুত ট্র্যাজেডি!

বৈরুত বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পরেই শুরু হয়েছে দায় ঝেড়ে ফেলে অন্যের কাঁধে দায় চাপানোর নির্লজ্জ অপরাজনীতি। আর সেই দায় এড়িয়ে দায় চাপানোর খেলাতে এবার প্রকাশ্যে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। যে রাসায়নিক থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে, সাত বছর ধরে সেই ভয়াবহ বিস্ফোরক মজুদ ছিল বন্দরের গুদামে। শুল্ক কর্মকর্তারা বারবার প্রশাসনের শীর্ষ মহলের কাছে বিস্ফোরক সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছিলেন।

কিন্তু সরকার সেই সতর্ক বার্তায় কান দেয়নি।

নিউ ইয়র্ক পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, বৈরুত বন্দরের ১২ নম্বর গুদামে খোলামেলা ফেলে রাখা বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে। বাতুমি থেকে রাসায়নিকবাহী একটি জাহাজ আটক করা হয়। রাশিয়ার ব্যবসায়ী ইগর গ্রেচুশকিন ওই জাহাজে দুই হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জর্জিয়া থেকে মোজাম্বিকে পাঠাচ্ছিলেন।

প্রয়োজনীয় নথিপত্র দেখাতে না পারার জন্য লেবানন কর্তৃপক্ষ জাহাজটি বাজেয়াপ্ত করে। তবে রাসায়নিকের নিরাপত্তার জন্য নাবিকদের জাহাজে থাকতে বাধ্য করে। পরে নাবিকরা  অনশন ধর্মঘট শুরু করলে তাঁদের জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

লেবানন কর্তৃপক্ষকে নাবিকরা ওই সময় জানান, মোটরবাইক ভক্ত গ্রেচুশকিন দেউলিয়া হয়ে গেছেন এবং তিনি জাহাজটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে গেছেন।

\"\"

ছবি : রাশিয়ান ব্যবসায়ী গ্রেচুশকিন।

কিছুদিন বাদে জাহাজ থেকে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো মারাত্মক বিস্ফোরক বন্দরের ১২ নম্বর গুদামে নামিয়ে রাখা হয়। এর কয়েক মাস পর ২০১৪ সালের ২৭ জুন কার্গো সমস্যার সমাধান চেয়ে চিঠি পাঠান তৎকালীন লেবানিজ শুল্ক দপ্তরের পরিচালক শফিক মেরহি। পরের তিন বছরে আরো পাঁচবার চিঠি পাঠিয়েছেন শুল্ক কর্মকর্তারা। চিঠিতে শুল্ক কর্মকর্তারা বাজেয়াপ্ত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য তিনটি পথও বাতলে দিয়েছিলেন।

প্রথমত, বাজেয়াপ্ত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট রপ্তানি করা। দ্বিতীয়ত, দেশের সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা। অথবা দেশের বেসরকারি বিস্ফোরকদ্রব্য উ‍ৎপাদনকারী সংস্থাগুলোর কাছে বিক্রি করা। কিন্তু কোনো জবাব আসেনি।

এক বছর বাদে শুল্ক দপ্তরের নতুন পরিচালক বাদ্রি দাহির ২০১৭ সালে ওপর মহলে এক চিঠি পাঠিয়ে কর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। গত সাত বছর ধরে বিপজ্জনক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বন্দরের ওই গুদামেই অরক্ষিত অবস্থায় রাখা ছিল। যার সর্বশেষ ফলাফল ধ্বংসপ্রায় রাজধানী বৈরুত। প্রাণ গেছে শতাধিক মানুষের। আহত পাঁচ হাজারেরও বেশি। গৃহহারা তিন লাখ মানুষ।

সূত্র : নিউ ইয়র্ক পোস্ট।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মিসর সফরে যাচ্ছেন ম্যাখোঁ, নজর মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির দিকে

    আরববিশ্বে ফ্রান্সের ভূমিকা কী বিশ্ব মঞ্চে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ ‘ফ্রান্স, ইইউ ও মিসরকে চাপ তৈরি করতে হবে’
ডয়চে ভেলে
ডয়চে ভেলে
শেয়ার
মিসর সফরে যাচ্ছেন ম্যাখোঁ, নজর মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির দিকে
প্যারিসের এলিসি প্রাসাদে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ (ডানে) ও মিসরীয় প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতেহ আল-সিসি। ফাইল ছবি : এএফপি

মিসর সফরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে দুই দেশের ঐতিহাসিক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে কাজে লাগাতে চান৷ অন্যদিকে অ্যাক্টিভিস্টদের চাওয়া, কায়রোতে ম্যাখোঁ মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলবেন৷

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ রবিবার তিন দিনের কায়রো সফরে যাচ্ছেন। মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতেহ আল-সিসির সঙ্গে নানা ইস্যুতে বৈঠক করবেন তিনি৷ ২০১৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১১বার কায়রো অথবা প্যারিসে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেছেন এই দুই নেতা। তবে এবারের সফরকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্টের দপ্তর এলিসি প্যালেসের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘সিরিয়া ও প্রতিবেশি দেশ লিবিয়া, সুদান ও ইসরায়েল : আমরা এই অঞ্চলের সংকট নিয়ে কথা বলব।

আরববিশ্বের সঙ্গে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করার দীর্ঘদিনের ভূমিকা রয়েছে ফ্রান্সের। ফলে এবারও মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের সমাধানে ভূমিকা রাখার আশা করছে ফ্রান্স। তবে অধিকারকর্মীরা মানবাধিকারের ক্ষেত্রে মিসরের ভয়াবহ ইতিহাস তুলে ধরার জন্যও ম্যাখোঁর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।

এই সফরের আনুষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা।

কিন্তু বাস্তবে সবার দৃষ্টি রয়েছে গাজার দিকে। ইসরায়েল সম্প্রতি হামাসের সঙ্গে করা যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা করার পর ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় পাল্টা অভিযান শুরু করে। হামাসের হামলায় এক হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত ও দুই শতাধিক মানুষ জিম্মি হয়।

জিম্মিদের কয়েকজন এখনো হামাসের হাতে আটক রয়েছেন। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের আক্রমণে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও কিছু আরব রাষ্ট্রও হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

এলিসি প্যালিসের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘আমরা একটি যুদ্ধবিরতি ও যুদ্ধের সম্ভাব্য সমাপ্তি নিয়ে কথা বলব।’ পাশাপাশি ফ্রান্স ও মিসরের মধ্যে একটি কৌশলগত অংশীদারি জোরদার করার লক্ষ্যও ম্যাখোঁর রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আরববিশ্বে ফ্রান্সের ভূমিকা কী?
সাবেক সাংবাদিক ও বর্তমানে রাজনৈতিক পরামর্শদাতা এইকে কনসিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ এল কেই মনে করেন, ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মিসর ও আরববিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগে ফ্রান্স এগিয়ে রয়েছে।

ডিডব্লিউকে তিনি বলেন, ‘কয়েক দশক ধরে ফরাসি-মিসরীয় সম্পর্ক চমৎকার। অনেক ফরাসি কম্পানি মিসরে সক্রিয় এবং সেখানে তাদের কয়েক হাজার কর্মী রয়েছে। এ ছাড়া ২০১৫ সালে প্রথম দেশ হিসেবে ২৪টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান কিনেছিল মিসর, যা অন্যান্য দেশে বিমান রপ্তানির পথ প্রশস্ত করেছিল।’ এখনো ফরাসি সামরিক সরঞ্জামের অন্যতম প্রধান আমদানিকারক দেশ মিসর।

এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট শার্ল ডি গলের মধ্যপ্রাচ্যনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা এই জেনারেল মধ্যপ্রাচ্যে মধ্যপন্থী কৌশল অনুসরণ করেছিলেন। এই কৌশলের ফলে রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়া হলেও সেটি নিঃশর্ত ছিল না। ডি গল ইসরায়েলের নিন্দা জানিয়েছিলেন এবং ১৯৬৭ সালের জুনে মিসরে হামলা চালিয়ে ছয় দিনের যুদ্ধ শুরু করার পর ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছিলেন। আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে ডি গল সতর্ক অবস্থান নিয়েছিলেন।

এল কেই ব্যাখ্যা করেন, ‘আরববিশ্বে, বিশেষ করে মিসরে ফ্রান্সকে অত্যন্ত সম্মান দিয়ে দেখার এটি আরেকটি কারণ।’

১৯৯৫ সাল থেকে এলিসি প্যালেসে প্রবেশ ও সংবাদ সংগ্রহের অনুমতি রয়েছে সাংবাদিক খালেদ সাদ জাঘলুলের। এই প্রবণতাটি তিনিও প্রত্যক্ষ করেছেন।

মিসরীয় পরামর্শদাতা জাঘলুল ডিডব্লিউকে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক, নিকোলাস সারকোজি, ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ও এখন ইমানুয়েল ম্যাখোঁ—সবাই সপ্তাহে অন্তত একবার কায়রোর সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। ১৯৭৯ সালে মিসর ও ইসরায়েলের মধ্যে স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তির পর থেকে কায়রোকে একটি গ্রহণযোগ্য অংশীদার হিসেবে দেখা হয়ে আসছে।’

সেই সময় মিসর ছিল প্রথম আরবদেশ, যারা তথাকথিত ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়।

অনিশ্চিত রাজনৈতিক সময়ে মিসরে ফরাসি রাষ্ট্রীয় সফর
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ফাওয়াজ গার্গেসের কাছে আসন্ন সফরের সময়কালটাও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নেতৃত্বে শূন্যতার সময়ে পশ্চিমা নেতা হিসেবে বিশ্ব মঞ্চে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে ম্যাখোঁর। যুক্তরাষ্ট্র এখন অসংলগ্ন বলে মনে হচ্ছে। জোট সরকার গঠনের আলোচনার নিজেদের সুশৃঙ্খল করার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে জার্মানি। ইতালি ও যুক্তরাজ্যের মতো মধ্যপ্রাচ্যে ফ্রান্সের উপস্থিতিও কম।’

মিসর এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১১ কোটি এবং আফ্রিকা, এশিয়া ও ইউরোপের সংযোগস্থলে এর অবস্থান। গার্গেস বলেন, ‘মিশরে যা ঘটে তার সুদূরপ্রসারী পরিণতি রয়েছে। অভিবাসনের দিক থেকে দেশটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে অনেক শরণার্থীকে গ্রহণ করে দেশটি। লিবিয়ার মতো শরণার্থীরা (ইউরোপের দিকে) এগিয়ে যায় না। এমন একটি অঞ্চলে স্থিতিশীলতার আশ্রয়স্থল হিসেবে মিসরকে দেখা হয়, যে অঞ্চলে গৃহযুদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রয়েছে।’

সাংবাদিক জাঘলুল বলেন, মিসর সব আঞ্চলিক সংঘাতে মধ্যস্থতার ভূমিকা নেয়। তিনি আরো বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে বলা হয়, মিসর ছাড়া আপনি যুদ্ধ বা শান্তি স্থাপন করতে পারবেন না, আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে এই জাতি একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।’

‘ফ্রান্স, ইইউ ও মিসরকে চাপ তৈরি করতে হবে’
মার্চের শুরুতে আরব লীগের ২২টি সদস্য রাষ্ট্র মিসরের রাজধানীতে বৈঠকে বসে। পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে গাজা পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনায় একমত হয় দেশগুলো। একমত হওয়া অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বাসিন্দাদের গাজাতেই থাকতে দেওয়া এবং পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে দিয়ে গাজা পরিচালিত করার সিদ্ধান্তও ছিল।

এই প্রস্তাবটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফিলিস্তিনিদের মিসর ও জর্দানে স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনার সম্পূর্ণ বিপরীত।

এলিসির মুখপাত্র জানান, ‘আরব পরিকল্পনা আলোচনার জন্য একটি ভালো ভিত্তি, তবে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও গাজার ভবিষ্যৎ সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এটি সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন।’

তিনি আরো বলেন, এই সফরের ফলাফল পরবর্তীতে ওয়াশিংটনের কাছে উপস্থাপন করা হবে।

ফ্রান্স ও সৌদি আরবও এই জুনে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ওপর একটি সম্মেলনের পরিকল্পনা করছে। সাদ জঘলুল আশা করেন, ম্যাখোঁর এই সফর ফলপ্রসূ হবে। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ফ্রান্স, ইইউ ও মিসরকে অবশ্যই চাপ তৈরি করতে হবে।’

এদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ফ্রান্সকে মিসরের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে ভিন্নভাবে ব্যবহার করার আহ্বান জানাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাটি ‘মানবাধিকার সংকট’ এবং দেশটির ‘বিরোধী রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের ওপর নিয়মতান্ত্রিক দমন’ সম্পর্কে সতর্ক করেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মিসর প্রতিনিধি লেনা কোলেট ডিডব্লিউকে বলেন, ‘চূড়ান্ত ঘোষণায় ম্যাখোঁর স্পষ্টভাবে মানবাধিকারের কথা উল্লেখ করা উচিত, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দাবি করা উচিত এবং এই আগস্টে সংসদীয় নির্বাচন অবাধ ও গণতান্ত্রিকভাবে অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।’

এলিসির সূত্র জানিয়েছে, সফরে মানবাধিকারের বিষয়টিও ‘উল্লেখ’ করা হবে।

মন্তব্য

পকেটে মোবাইল ফোন বিস্ফোরণ, তরুণের গোপনাঙ্গে আঘাত

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
পকেটে মোবাইল ফোন বিস্ফোরণ, তরুণের গোপনাঙ্গে আঘাত
প্রতীকী ছবি (সংগৃহীত)

এক তরুণের পকেটে রাখা মোবাইল ফোন বিস্ফোরণে প্যান্টে আগুন লেগে যায়। পুড়ে যায় তার শরীরের নিচের অংশ। ভারতের মধ্য প্রদেশে গত মঙ্গলবার এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা শনিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯ বছর বয়সী এক যুবকের পকেটে থাকা মোবাইল ফোন বিস্ফোরণের ফলে কুঁচকিতে আঘাত লেগেছে বলে জানা গেছে। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে মার্চ মাসের শেষের দিকে।

পুলিশের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমটি আরো জানিয়েছে, ১৯ বছর বয়সী অরবিন্দ নামের এক তরুণ বাজার থেকে সবজি কিনে মোটরবাইক চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। ঠিক সেই সময় টোল বুথের কাছে প্যান্টের পকেটে রাখা মোবাইল ফোনটিতে বিস্ফোরণ ঘটে।

বিস্ফোরণে তার গোপনাঙ্গও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণের ফলে তিনি ভারসাম্য হারিয়ে হাইওয়েতে বাইক থেকে পড়ে যান ও গুরুতর আহত হন। চলন্ত বাইক থেকে পড়ে যাওয়ায় তার মাথায় আঘাত লাগে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।

দুর্ঘটনার পর সারঙ্গপুর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার করানো হয় অরবিন্দের।

পরে আঘাত গুরুতর হয়ে ওঠায় তাকে শাজাপুরের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

আহতর পরিবার জানিয়েছে, অরবিন্দ টাকা জমিয়ে একটি মোবাইল ফোন কিনেছিলেন। সেটিতেই বিস্ফোরণ হয়েছে।

এ ছাড়া সারঙ্গপুর হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, মোবাইল ফোনের বিস্ফোরণের কারণে ওই যুবক যৌনাঙ্গেও আঘাত পেয়েছেন। যদিও এই মুহূর্তে তিনি বিপদমুক্ত।

তবে তার চিকিৎসা চলছে।

মন্তব্য

ফ্লাইটে শিশুর গলা থেকে সোনার চেইন চুরি, ক্রুর বিরুদ্ধে মামলা

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ফ্লাইটে শিশুর গলা থেকে সোনার চেইন চুরি, ক্রুর বিরুদ্ধে মামলা
প্রতীকী ছবি : এএফপি

স্বল্পমূল্যের ভারতীয় এয়ারলাইনস ইন্ডিগোর এক ক্রু সদস্যর বিরুদ্ধে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুর গলা থেকে সোনার চেইন চুরির অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি শনিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছে। ভারতের বেঙ্গালুরুতে দায়ের করা এফআইআরে শিশুটির মা প্রিয়াঙ্কা মুখার্জি বলেন, ফ্লাইটের এক অ্যাটেনডেন্ট তার সন্তানকে টয়লেটের দিকে নিয়ে গেলে শিশুটির গলা থেকে সোনার চেইনটি নিখোঁজ হয়ে যায়।

তিনি আরো জানান, ইন্ডিগোর ৬ই ৬৬১ ফ্লাইটে দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি কেরালার তিরুবনন্তপুরম থেকে বেঙ্গালুরুর উদ্দেশে ভ্রমণ করছিলেন।

ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট অদিতি আশ্বিনী শর্মার বিরুদ্ধে করা এফআইআরে বলা হয়েছে, তিনি শিশুটির গলা থেকে ২০ গ্রাম ওজনের সোনার চেইনটি চুরি করেছেন, যার আনুমানিক মূল্য ৮০ হাজার রুপি। পুলিশ এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে।

ইন্ডিগো এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘তিরুবনন্তপুরম থেকে বেঙ্গালুরুগামী ৬ই ৬৬১ নম্বর ফ্লাইটে আমাদের এক কর্মীকে ঘিরে গ্রাহকের উত্থাপিত একটি অভিযোগের বিষয়ে আমরা অবগত।

আমরা বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদন্তে পূর্ণ সহায়তা প্রদান করছি।’

মন্তব্য

গাজায় নিহত সহায়তাকর্মীদের শেষ মুহূর্তের ভিডিও প্রকাশ

    ইসরায়েলের দাবি খণ্ডন
এএফপি, বিবিসি
এএফপি, বিবিসি
শেয়ার
গাজায় নিহত সহায়তাকর্মীদের শেষ মুহূর্তের ভিডিও প্রকাশ
ছবি : ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি প্রকাশিত ভিডিও থেকে নেওয়া

গাজায় নিহত এক সহায়তাকর্মীর মোবাইল থেকে উদ্ধার করা একটি ভিডিওতে তাদের শেষ মুহূর্তের চিত্র দেখা গেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস)। ভিডিওতে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত অ্যাম্বুল্যান্স ও জ্বলজ্বল করা জরুরি আলোর মধ্যে তীব্র গুলির শব্দ শোনা যায়। 

জাতিসংঘ ও পিআরসিএস জানিয়েছে, ২৩ মার্চ ইসরায়েলি বাহিনীর এক হামলায় ১৫ জন মানবিক সহায়তা কর্মী নিহত হন। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা কোনো অ্যাম্বুল্যান্সে ‘এলোপাতাড়ি হামলা’ চালায়নি; বরং ‘সন্দেহজনক যানবাহনে’ আসা ‘সন্ত্রাসীদের’ লক্ষ্য করেই গুলি চালানো হয়।

ওই ঘটনায় এখনো এক প্যারামেডিক নিখোঁজ রয়েছেন। 

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাদাভ শোশানি জানান, যে গাড়িগুলোর ওপর গুলি চালানো হয়েছে, সেগুলোর জন্য আগে থেকে অনুমোদন ছিল না এবং সেগুলোর আলোও বন্ধ ছিল। অন্যদিকে পিআরসিএস শনিবার যে ভিডিও প্রকাশ করেছে, তা সেনাবাহিনীর এসব দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ভিডিওতে দেখা যায়, হেডলাইট ও জরুরি বাতি চালু অবস্থায় অ্যাম্বুল্যান্সগুলো চলছিল।

 

সম্ভবত একটি চলমান গাড়ি থেকে ধারণ করা ওই ভিডিওতে আরো দেখা যায়, একটি লাল ফায়ার ট্রাক ও একাধিক অ্যাম্বুল্যান্স রাতে চলাচল করছে। এগুলো রাস্তায় থেমে একটি অন্য গাড়ির পাশে দাঁড়ালে দুজন ইউনিফর্মধারী ব্যক্তি গাড়ি থেকে নামেন। এর পরই তীব্র গুলির শব্দ শোনা যায়।  

ভিডিওতে দুইজন চিকিৎসাকর্মীর কণ্ঠও শোনা যায়।

একজন বলেন, ‘গাড়িটা, গাড়িটা’, অন্যজন উত্তর দেন, ‘মনে হয় একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে।’ এর কয়েক সেকেন্ড পরই তীব্র গুলির শব্দ শুরু হয় এবং স্ক্রিন কালো হয়ে যায়।

পিআরসিএস জানায়, নিহত সহায়তাকর্মী রিফাত রাদওয়ানের মোবাইল ফোন থেকে এই ভিডিওটি উদ্ধার করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ‘এই ভিডিও নির্ভেজালভাবে প্রমাণ করে, অ্যাম্বুল্যান্সে ইসরায়েলি বাহিনীর এলোপাতাড়ি হামলা না চালানোর দাবি মিথ্যা। কিছু গাড়ি আলো বা জরুরি চিহ্ন ছাড়া এগিয়ে এসেছিল—সেই কথাও অসত্য।

এই ফুটেজ সত্যকে উন্মোচিত করে এবং মিথ্যা বর্ণনাকে ভেঙে দেয়।’

নিহতদের মধ্যে ছিলেন পিআরসিএসের আট কর্মী, গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থার ছয় সদস্য ও জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর এক কর্মী। তাদের মরদেহ রাফার কাছে একটি গণকবরে পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ)। অন্যদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, মরদেহগুলো ‘বালু ও কাপড়ে ঢাকা ছিল, যাতে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়’ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের পর সেগুলো উদ্ধার করা যায়। এই হামলার তদন্ত চলছে বলে সেনাবাহিনী জানিয়েছে।

ভয় ও প্রার্থনায় শেষ মুহূর্ত
ওসিএইচএ জানিয়েছে, ওই দিন ভোরে প্রথম দলটিকে ইসরায়েলি বাহিনী লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এরপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে সহকর্মীদের খোঁজে এগিয়ে যাওয়া আরো কয়েকটি উদ্ধার ও সহায়তা দলের ওপর ধারাবাহিক হামলা চালানো হয়।  

পিআরসিএস বলেছে, রাফায় গোলাবর্ষণের মধ্যে আটকে পড়া বেসামরিক লোকদের ডাকে সাড়া দিয়েই এই বহরটি পাঠানো হয়েছিল।  

ভিডিওতে যে চিকিৎসাকর্মী দৃশ্য ধারণ করছিলেন, তাকে বারবার কালেমা শাহাদাত পাঠ করতে শোনা যায়—‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর রাসূল’—কম্পিত কণ্ঠে তিনি এটি বারবার উচ্চারণ করেন, গুলির শব্দের মধ্যে। তাকে আরো বলতে শোনা যায়, ‘মা, ক্ষমা করো, কারণ আমি এই পথ বেছে নিয়েছি—মানুষের সেবা করার পথ।’ এরপর তিনি বলেন, ‘আমার শাহাদাত (মৃত্যু) কবুল করো হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করো।’

ভিডিও শেষ হওয়ার আগে ইসরায়েলি সেনাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘ইহুদিরা আসছে, ইহুদিরা আসছে।’

এই হামলায় সহায়তাকর্মীদের মৃত্যুর ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে। ফিলিস্তিন অঞ্চলে ওসিএইচএর প্রধান জোনাথন হুইটল বলেন, নিহতদের মরদেহ ‘ইউনিফর্ম ও হাতে গ্লাভস পরা’ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক এ হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, এতে ইসরায়েলি বাহিনীর ‘যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের সম্ভাবনা’ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘আমি ১৫ জন চিকিৎসা ও সহায়তাকর্মীর হত্যাকাণ্ডে স্তম্ভিত। এতে ইসরায়েলি সেনাদের যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়ে উঠছে।’ এ ছাড়া তুর্ক একটি ‘স্বাধীন, দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের’ আহ্বান জানান।

‘আমাদের সব কর্মীই সাধারণ নাগরিক’
এদিকে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্যারামেডিক মুনথের আবেদ বলেন, ‘দিনে হোক বা রাতে—সব সময়ই একইভাবে গাড়ির বাইরের ও ভেতরের আলো জ্বলে। গাড়ির গায়ে স্পষ্ট করে লেখা থাকে যে এটি ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের অ্যাম্বুল্যান্স। গাড়ির সব আলো জ্বলছিল, যতক্ষণ না তা সরাসরি গুলির শিকার হয়।’

তিনি ও তার দলের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আবেদ বলেন, ‘আমাদের সব কর্মীই সাধারণ নাগরিক। আমরা কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য নই। আমাদের একমাত্র কাজ অ্যাম্বুল্যান্স সেবা দেওয়া ও মানুষের জীবন রক্ষা করা—এর বাইরে কিছু নয়।’

এ ছাড়া জাতিসংঘে গতকাল দেওয়া এক ভাষণে পিআরসিএস প্রেসিডেন্ট ড. ইউনিস আল-খাতিব সেই ভিডিওর প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “আমি নিহত হওয়া এক সহকর্মীর কণ্ঠস্বর শুনেছি। গুলি খাওয়ার ঠিক আগেই তার শেষ কথা ছিল…‘আমাকে মাফ করে দিও মা, আমি শুধু মানুষকে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। আমি জীবন বাঁচাতে চেয়েছিলাম।’ এটি হৃদয়বিদারক।” তিনি এ ঘটনাকে ‘নৃশংস অপরাধ’ আখ্যা দিয়ে ‘জবাবদিহি’ ও ‘একটি স্বাধীন ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত’ দাবি করেন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ