<p>ভারতে মাদরাসাগুলোকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া বন্ধ করতে সম্প্রতি রাজ্যগুলোকে পরামর্শ দিয়েছিল দেশটির জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন। সেই প্রস্তাবের ওপর সোমবার স্থগিতাদেশ জারি করলেন সুপ্রিম কোর্ট। ওই পরামর্শের ভিত্তিতে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারগুলো কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না বলেও জানিয়েছেন দেশটির শীর্ষ আদালত। ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।</p> <p>উত্তর প্রদেশ ও ত্রিপুরা রাজ্যের সরকার সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছিল, অনুমোদনহীন ও সরকার অনুমোদিত মাদরাসাগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের সরকারি স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য। জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ওই নির্দেশিকাগুলো জারি করা হয়েছিল। দুই রাজ্যের নির্দেশিকার ওপরও স্থগিতাদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ।</p> <p>উত্তর প্রদেশ সরকারের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ নামের একটি সংগঠন। মামলাকারী পক্ষের অভিযোগ, সরকারি নির্দেশিকায় সংখ্যালঘুদের নিজস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালানোর অধিকার খর্ব হচ্ছে। পরে মামলাটি ওঠে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা ও মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে। কমিশনের প্রস্তাব ও দুই রাজ্যের নির্দেশিকার ওপর সোমবার স্থগিতাদেশ জারি করেন আদালত। এর মধ্যে আর কোনো রাজ্য এই বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করলে সেটির ওপরও স্থগিতাদেশ কার্যকর থাকবে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রতিটি রাজ্য সরকারের কাছ থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব তলব করেছেন সুপ্রিম কোর্ট।</p> <p>সম্প্রতি ভারতের মাদরাসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে দেশটির জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন। তাতে মাদরাসার ‘ঐতিহাসিক ভূমিকা’ ও শিশুদের শিক্ষার অধিকারে তার প্রভাব নিয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১১ অধ্যায়ের ওই প্রতিবেদনে কমিশনের মূল পরামর্শ ছিল, বিভিন্ন রাজ্যে মাদরাসাগুলোতে আর্থিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করা হোক।</p> <p>এ ছাড়া কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়াংকা কানুনগো শিশু শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘শিক্ষার অধিকার আইনের (আরটিই, ২০০৯) লক্ষ্য হলো সমতা, সামাজিক ন্যায় ও গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা। কিন্তু তার পরও একটি বিপরীতধর্মী চিত্র দেখা যাচ্ছে। সেখানে শিশুদের মৌলিক অধিকার ও সংখ্যালঘুদের অধিকারের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা যাচ্ছে।’</p> <p>জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, শুধু বোর্ড ও একটি ইউডিআইএসই কোড থাকা মানেই মাদরাসাগুলো যে শিক্ষার অধিকারসংক্রান্ত আইন মানছে, এমনটা নয়। বেশ কিছু ঘটনার উদ্ধৃতি ও উদাহরণ দিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে বলা হয়েছে, মাদরাসাগুলোকে যেন সাহায্য না করা হয়। পাশাপাশি মুসলমান সম্প্রদায়ের শিশুদের মাদরাসায় ভর্তি না করিয়ে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ানোর পরামর্শও দিয়েছিল জাতীয় কমিশন। সেই সুপারিশের প্রেক্ষিতেই উত্তর প্রদেশে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের অন্য সরকারি স্কুলে ভর্তি করানোর নির্দেশিকা জারি হয়েছিল।</p>