<p>মস্কোয় চোখের সামনে থাকা দৃশ্য ও বাস্তবতার মধ্যে যেন সারাক্ষণই দ্বন্দ্ব চলছে। তিন বছর ধরে চলমান যুদ্ধের পরও সেখানকার মানুষের জীবন খুব স্বাভাবিক বলেই মনে হতে পারে। বিশেষ করে মেট্রোরেলে যাত্রীদের ভিড় বা ক্লাব ও বারে তরুণদের জটলা দেখে সেটাই মনে হবে। কিন্তু পরক্ষণেই এমন কিছু ঘটবে যা দেখে মনে হবে যে রাশিয়ায় এখন কিছুই স্বাভাবিক নেই।</p> <p><strong>কী ঘটছে সেখানে?</strong><br /> হঠাৎ দেখা যাবে, নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেদ করে মস্কোর আকাশে উড়ছে ইউক্রেনের ড্রোন। মঙ্গলবারের ঘটনাটি ছিল আরো বেশি নাটকীয়। সেদিন সকালে নিজের বাসা থেকে বের হওয়ার সময় রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ জেনারেল রীতিমতো হত্যার শিকার হয়েছেন। তার নাম লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইগর কিরিলোভ। এদিন সহকারী ইলিয়া পোলিকারপভকে সঙ্গে নিয়ে কিরিলোভ যখন বাসা থেকে বের হচ্ছিলেন তখন বৈদ্যুতিক স্কুটারের মধ্যে লুকিয়ে রাখা বোমার বিস্ফোরণে তার মৃত্যু হয়।</p> <p>আর খোদ মস্কোতেই যখন এমন ঘটনা ঘটে তখন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ যে দেশটির ভেতরেও বেশ প্রভাব ফেলেছে, সেটি স্পষ্টভাবেই বোঝা যায়। বিশেষ করে মঙ্গলবার মস্কোর যে এলাকায় জেনারেলকে হত্যা করা হয়েছে, সেখানকার বাসিন্দারা সেটি ভালোভাবেই অনুভব করতে পেরেছে।</p> <p>মস্কোর বাসিন্দা লিজা বিবিসিকে বলেন, ‘গণমাধ্যমে এ রকম ঘটনার খবরে পড়া, আর কাছ থেকে সেটি ঘটতে দেখা মোটেই একটি জিনিস নয়। কারণ আপনি হয়তো দূরের বাসিন্দা হয়ে খবরটি পড়ছেন। কিন্তু ঘটনাটি যখন আপনার পাশে বা সামনেই ঘটছে, তখন সেটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ও ভীতিকর এক অভিজ্ঞতা।’</p> <p>মঙ্গলবার যেখানে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেটির কাছেই একটি ভবনে থাকেন লিজা। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এত দিন মনে হয়েছিল যেন সেটি অনেক দূরে ঘটছে। কিন্তু এখন যখন বাড়ির কাছেই একজনের মৃত্যু হচ্ছে, তখন সেটার (যুদ্ধের) পরিণতি ভালোমতোই অনুভব করছি। বাইরের প্রতিটি শব্দই এখন আপনাকে বিচলিত ও উদ্বিগ্ন করছে। যেকোনো শব্দ শুনলে ভাবছি, এটি কি কোনো ড্রোনের শব্দ নাকি কোনো নির্মাণকাজের?’</p> <p>ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের বিষয়টি এত দিন একটি ‘দূরের বিষয়’ হিসেবেই দেখে আসছিল মস্কোর বাসিন্দারা। সেখানকার মানুষজনের সঙ্গে কথা বললেই বিষয়টি স্পষ্টভাবে বোঝা যেত। বস্তুত রাশিয়ার সাধারণ জনগণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের কাছেই ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান লড়াই কেবলই একটি যুদ্ধ যা তারা কেবল টিভি পর্দায় বা স্মার্টফোনে দেখে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে বিষয়টি তাদের কাছে অনেকটা ভার্চুয়াল যুদ্ধের অভিজ্ঞতার মতো ব্যাপার।</p> <p>যদিও কয়েক বছর ধরা চলা এই যুদ্ধে যে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটি বিবেচনা করলেই সাধারণ রুশ নাগরিকদের এমন মনোভাব অবাক করতে পারে। কিন্তু এতদিন সেটাই ছিল বাস্তবতা। তবে মঙ্গলবার মস্কোয় একজন রুশ জেনারেলকে হত্যার ঘটনাটি মস্কোর বাসিন্দাদের কাছে যেন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে ‘বাস্তব ও বাড়ির খুব কাছের ঘটনা’ করে তুলেছে। ঘটনাটি কি রুশ কর্তৃপক্ষের জন্যও একটি ‘ঘুম ভাঙার ডাক’ হিসেবে কাজ করবে? সম্ভবত না।</p> <p>এদিকে ইউক্রেনের ওপর হামলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার বিষয়ে ক্রেমলিনে তেমন কোনো চিহ্ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বরং হামলা আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্তত এখন পর্যন্ত তেমনটাই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।</p> <p>জেনারেল কিরিলোভের হত্যার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের একটি রাজনৈতিক টক শোতে উপস্থাপক ইতিমধ্যে ইউক্রেনকে দায়ী করে বলেছেন, ‘এই হামলার মাধ্যমে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি নিজেই নিজের মৃত্যুদণ্ডে স্বাক্ষর করেছেন।’</p> <p>অন্যদিকে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, ‘ঘটনার তদন্তকারীদেরকে অবশ্যই খুনিদের খুঁজে বের করতে হবে। কিয়েভে থাকা তাদের পৃষ্ঠপোষকদের ধ্বংস করার জন্য যা করা প্রয়োজন, সেগুলোর সব অবশ্যই আমাদের করতে হবে।’</p> <p>রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষ থেকে অবশ্য জেনারেল ও তার সহকারীর মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে ক্রেমলিন নেতা এর আগে তার ভাষণে বহুবার বলেছেন, রাশিয়া হামলা বা নিরাপত্তা হুমকির মুখোমুখি হলে ‘সব সময় সেটির কড়া জবাব দেবে।’</p> <p>রুশ প্রেসিডেন্টের এমন বক্তব্য থেকে সহজেই অনুমেয় যে মস্কোর ঘটনায় দেশটি ‘প্রতিশোধ’ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। বৃহস্পতিবার পুতিনের বছর শেষের সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে। দীর্ঘ সংবাদ সম্মেলনটি রাশিয়ার প্রধান টিভি চ্যানেলগুলো সরাসরি সম্প্রচার করবে।</p> <p>উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যে মস্কোর প্রধান মিত্র বাশার আল-আসাদের পতনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত পুতিন প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি।</p>