আয়ারল্যান্ডের ন্যাশনাল গ্যালারির এক লাখ ইউরোর বেশি দামে কেনা স্ক্যানার সাত বছর পরও ব্যবহৃত হয়নি। কারণ এটি আকারে খুব বড় বলে মনে করা হচ্ছে।
ডাবলিনের ন্যাশনাল গ্যালারি ২০১৭ সালের নভেম্বরে ডিজিটাল ইনভেস্টিগেটিভ ইমেজিং প্রকল্পের অংশ হিসেবে এক লাখ ২৪ হাজার ৮০৫ ইউরো দামে একটি এক্স-রে সিস্টেম কেনে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ টাকা। ওই সময় এই যন্ত্রটি গ্যালারির চিত্রকর্মগুলোকে নন-ডিস্ট্রাকটিভভাবে পরীক্ষা করার জন্য অপরিহার্য হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল।
তবে আইরিশ সম্প্রচারমাধ্যম আরটিই জানাচ্ছে, কর্মকর্তারা স্ক্যানারটি স্থাপনের জন্য কোনো জায়গা খুঁজে পাননি। কারণ তারা সম্ভাব্য স্থানের ‘ভারবহন ক্ষমতা’ নিয়ে শঙ্কিত।
ন্যাশনাল গ্যালারি বর্তমানে গণপূর্ত অফিসের সঙ্গে মিলে স্ক্যানারটির জন্য একটি উপযুক্ত স্থান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো স্থান খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ পরিস্থিতিতে গ্যালারিটি এখন যন্ত্রটিকে ভ্রাম্যমাণ ইউনিট হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে এবং এটি এই বছরের মধ্যে ব্যবহৃত হতে পারে।
এদিকে আইরিশ শিল্পকলা বিষয়ক মন্ত্রী প্যাট্রিক ও’ডোনোভান মঙ্গলবার ন্যাশনাল গ্যালারির বার্ষিক প্রতিবেদন সরকারের কাছে উপস্থাপন করবেন।
‘অত্যন্ত ক্রোধ’
প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মার্টিন বলেছেন, ‘এটা ব্যাখ্যা করা খুবই কঠিন যে কেন কেউ এমন একটি স্ক্যানার কেনার চেষ্টা করবে, যেটি রাখার জন্য তাদের কোনো ব্যবস্থা নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘এর দায়িত্ব গ্যালারির ওপরই পড়ে, তাদেরই ব্যাখ্যা করতে হবে এখানে কী ঘটেছিল।
’
পাশাপাশি উপপ্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস বলেন, ‘এটা নিয়ে আমার প্রতিক্রিয়া পুরো দেশের প্রতিক্রিয়ার মতোই হবে—পূর্ণাঙ্গ ক্রোধের।’
তিনি আরো বলেন, ‘সরকার রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে অর্থ প্রদান করে। তারা খুব ভালো কাজ করে, তবে তারা সেই অর্থ খরচের জন্য জবাবদিহি করতেও বাধ্য। সুতরাং আজকের প্রথম কাজ হবে মন্ত্রীর কাছ থেকে এই বিষয়ে শোনা। আমি নিশ্চিত, এরপর জনগণ ন্যাশনাল গ্যালারি থেকেও এর ব্যাখ্যা শুনতে চাইবে।
’
আর্থিক কেলেঙ্কারি
বিবিসির ডাবলিন প্রতিবেদক কেভিন শার্কি করদাতাদের অর্থের অপচয়ের কেলেঙ্কারি নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। তার মতে, আইরিশ জনগণ বর্তমানে এমন একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি, যেখানে ব্যাপকভাবে মনে করা হচ্ছে, সরকারি অর্থের বারবার অপচয় করা হচ্ছে। নতুন আইরিশ সরকার আগের সরকারের মতোই আরেকটি কেলেঙ্কারির মুখোমুখি হচ্ছে, যেখানে করদাতাদের অর্থ কিভাবে খরচ করা হচ্ছে, তা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে।
এ ছাড়া খবরটি এমন এক মাসে প্রকাশিত হয়েছে, যখন সরকার আর্টস কাউন্সিলের শাসন ও সংস্কৃতির বিষয়ে একটি বাহ্যিক পর্যালোচনার জন্য আদেশ দিয়েছে। কারণ সেই সরকারি সংস্থা ৭০ লাখ ইউরো খরচ করে একটি ব্যর্থ আইটি সিস্টেম তৈরি করেছিল।
এই নতুন তথ্যগুলো গত বছরের শেষের দিকে অন্যান্য সরকারি খরচের কেলেঙ্কারির পর প্রকাশিত হয়েছে। বেরিয়ে এসেছে, ডাবলিনের অর্থ বিভাগে ১৪ লাখ ইউরোর বেশি ব্যয়ে একটি নিরাপত্তা কাঠামো নির্মিত হয়েছে এবং আইরিশ পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে তিন লাখ ৩৬ হাজার ইউরো ব্যয়ে একটি বাইক শেড তৈরি হয়েছে।
বিরোধী দলগুলো আরেকটি সুযোগ হাতছাড়া করবে না, যেখান থেকে তারা সরকারের অনুপযুক্ত খরচ ও সরকারি প্রকল্পে করদাতাদের অর্থের ব্যবহারে সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাব তুলে ধরতে চায়।