যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় (পেন্টাগন) বুধবারের এক স্মারক প্রকাশ করেছে। সেখানে পেন্টাগন জানিয়েছে, ‘কেস-বাই-কেস’ পর্যবেক্ষণ শেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ট্রান্সজেন্ডার সেনাদের সেনাবাহিনী থেকে সরিয়ে দেবে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জানুয়ারির শেষের দিকের নির্বাহী আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে দায়ের করা মামলার অংশ হিসেবে এই স্মারকলিপি প্রকাশ করা হয়েছে। যার লক্ষ্য ট্রান্সজেন্ডার কর্মীদের সামরিক বিভাগের চাকরিতে নিষিদ্ধ করা।
স্মারকে বলা হয়েছে, ‘যেসব সেনা সদস্যের বর্তমান লিঙ্গ সংশয়জনিত (জেন্ডার ডিসফোরিয়া) রোগ নির্ণয় রয়েছে বা পূর্বে এ ধরনের ইতিহাস আছে অথবা এ ধরনের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, তাদের সামরিক বাহিনী থেকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তবে এসব সেনা চাকরির ক্ষেত্রে ছাড় পাওয়ার জন্য বিবেচিত হতে পারেন, যদি তাদের বহাল রাখা যুদ্ধ পরিচালনাসংক্রান্ত সক্ষমতার স্বার্থে সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়।’
এমন অনুমোদন পেতে হলে সংশ্লিষ্ট সেনাকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি কখনো লিঙ্গ পরিবর্তনের চেষ্টা করেননি এবং ‘সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর টানা ৩৬ মাস ধরে তার নির্ধারিত লিঙ্গে কোনো মানসিক কষ্ট, সামাজিক বা পেশাগত ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি।’
এই মাসের শুরুতে জারি করা আরেকটি পেন্টাগন স্মারকলিপিতে ট্রান্সজেন্ডারদের সেনাবাহিনীতে যোগদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই ইউনিফর্ম পরিহিত অন্যদের জন্য লিঙ্গ পরিবর্তনের চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ স্মারকলিপিতে অরো বলা হয়েছে, ‘যেসব আবেদনকারী লিঙ্গ সংশয়জনিত রোগে ভুগছেন বা অতীতে এমন রোগ নির্ণীত হয়েছে বা এর উপসর্গ রয়েছে, তারা সামরিক বাহিনীতে যোগদানের অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।’ এ ছাড়া ‘যেসব ব্যক্তির পূর্বে বিপরীত লিঙ্গের হরমোন থেরাপি নেওয়ার ইতিহাস আছে বা লিঙ্গ পরিবর্তন বা পুনর্গঠনের অস্ত্রোপচার করেছেন, তারাও অযোগ্য বলে গণ্য হবেন।’
আরো পড়ুন
কর্মক্ষেত্র খালি করার জন্য ইউএসএআইডি কর্মীদের দেওয়া হবে ১৫ মিনিট
সরকারের আগ্রহ থাকলে এবং সব শর্ত মেনে নিয়ে চলতে ইচ্ছুক এবং সক্ষম থাকলে অযোগ্য আবেদনকারীরা সেনাবাহিনীতে চাকরি করার ক্ষেত্রে ছাড় পেতে পারেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ট্রান্সজেন্ডার আমেরিকানরা সামরিক পরিষেবার নীতি পরিবর্তনের মুখে পড়েছে।
যেখানে ডেমোক্রেটিক প্রশাসন তাদের প্রকাশ্যে সেবা করার অনুমতি দিয়েছে, অন্যদিকে ট্রাম্প বারবার তাদের পদ থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করছেন।
ডেমোক্র্যাট বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সামরিক বাহিনী ২০১৬ সালে ট্রান্সজেন্ডার সেনাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন নীতিটি সম্পূর্ণরূপে উল্টে দেয়। ট্রান্সজেন্ডার সামরিক পরিষেবার ওপর ট্রাম্পের বিতর্কিত বিধি-নিষেধ বিভিন্ন আদালতের চ্যালেঞ্জের মুখে পরিবর্তিত হয়েছিল, অবশেষে ২০১৯ সালের এপ্রিলে কার্যকর হয়, একটি দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর। দেশের শীর্ষ আদালত পর্যন্ত চলে যায় এটি।
ট্রাম্পের ডেমোক্রেটিক উত্তরসূরি জো বাইডেন ২০২১ সালে দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক দিন পরেই এই বিধি-নিষেধগুলো প্রত্যাহার করতে পদক্ষেপ নেন। এরপর জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফিরে এসে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। সেখানে আবারও ট্রান্সজেন্ডার সেনাদের লক্ষ্য করে বলা হয়, ‘একজন ব্যক্তি তার প্রকৃত লিঙ্গ থেকে সরে একটি ভিন্ন মিথ্যা ‘লিঙ্গ পরিচয়’ প্রকাশ করা সামরিক পরিষেবার কঠোর মান পূরণ করতে পারে না।’ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন রাজনীতিতে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুগুলো আলোড়ন তুলেছে।
সূত্র : এএফপি