গ্রিক শহর থেসালোনিকির অন্যতম কুখ্যাত কারাগারের কাছে নির্মাণকাজ চলার সময় দেশটির গৃহযুদ্ধকালীন সময়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বহু ব্যক্তির দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। স্বজন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বুধবার এ তথ্য জানিয়েছেন ।
এ পর্যন্ত থেসালোনিকির উত্তর-পূর্বে এপ্তাপিরগিও কারাগারের কাছে ৩৩টি কঙ্কাল পাওয়া গেছে। এটি একসময় বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের একটি দুর্গ ছিল, যা পরে ওসমানী শাসনের সময় ইয়েদি কুলে নামে পরিচিত ছিল।
গ্রিসের গৃহযুদ্ধ ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। তবে গ্রিসের কমিউনিস্ট পার্টির (কেকেএ) সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে রাজনৈতিক বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড-পরবর্তী কয়েক বছর ধরেও কার্যকর করা হয়। অনুমান করা হয়, এই সংঘাতে দেড় লাখের বেশি মানুষ নিহত হয় এবং প্রায় আট লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
সিকিয়েস পৌরসভার স্থানীয় মেয়র সিমোস দানিয়েলিদিস বলেন, ‘আমরা আজ এখানে খুব মিশ্র অনুভূতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
আমরা আনন্দিত। কারণ ৮০ বছর পর হলেও আমরা সেই মানুষগুলোর কঙ্কাল খুঁজে পেয়েছি, যারা তাদের আদর্শ ও দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা একই সঙ্গে দুঃখিত, হতাশ ও ক্ষুব্ধ। কারণ এগুলো ছিল নির্মম, ভয়াবহ ও আধুনিক গ্রিক সভ্যতার কাছে অকল্পনীয় হত্যাকাণ্ড।
’
প্রথম দেহাবশেষ গত ডিসেম্বর মাসে একটি নগর উদ্যানের কাজের সময় আবিষ্কৃত হয়। নিহতদের মধ্যে একজন নারী বলে ধারণা করা হচ্ছে। সিকিয়েস পৌরসভা এক বিবৃতিতে জানায়, ‘গৃহযুদ্ধের সেই অন্ধকার সময়ে এই এলাকা রাজনৈতিক বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বা তাদের দেহ স্থানান্তরের জন্য ব্যবহৃত হতো। কারণ এটি কারাগারের খুব কাছেই ছিল এবং তখন এটি জনবসতিহীন ছিল।’
রাজনৈতিক বন্দিদের মৃত্যুস্থল
অনেকের ধারণা, নিহতদের অধিকাংশই কেকেএর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
কমিউনিস্ট পার্টির একদল প্রতিনিধিও বুধবার ঘটনাস্থলে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এ ছাড়া প্রত্নতাত্ত্বিকদের সহায়তায় খননকাজ চালিয়ে দুটি গণকবর থেকে পোশাক, গয়না ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ববিদ স্তাভরৌলা চেভরিনি বলেন, ‘৩৩টি কঙ্কাল চারটি পৃথক ভাগে পাওয়া গেছে। মাটি ও আবহাওয়ার প্রভাবে কঙ্কালগুলোর অবস্থা খুব ভালো নয়, সেগুলো অত্যন্ত ভঙ্গুর।’
উদ্ধারকৃত দেহাবশেষ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তকরণের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ গৃহযুদ্ধের সময় নিহতদের আত্মীয় ও উত্তরসূরিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে দ্রুত পরিচয় নিশ্চিত করা যায়। কেকেএ দলও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাজনৈতিক বন্দিদের একটি তালিকা প্রস্তুত করছে, যা প্রকাশ করা হবে।
এই বিষয়ে গবেষণা করা সাংবাদিক স্পাইরোস কুজিনোপোলোস বলেন, ‘এই অঞ্চলে গৃহযুদ্ধ চলাকালে ইয়েদি কুলে কারাগারে বন্দি প্রায় ৪০০ রাজনৈতিক বন্দিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের গণকবরে সমাহিত করা হতো, তাদের স্বজনরা জানতেও পারত না কাকে কোথায় কবর দেওয়া হয়েছে। এই এলাকা দেহাবশেষে পূর্ণ।’
মিলতিয়াদিস পারাথিরাস জানান, তার চাচা রিগাসকে ১৯৫১ সালের মার্চ মাসে এই স্থানে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি বলেন, ‘তিনি (কমিউনিস্ট) গণতান্ত্রিক বাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন ছিলেন। ১৯৪৯ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং প্রায় দুই বছর কারাগারে রাখা হয়। ১৯৫১ সালের মার্চে আরো পাঁচজনের সঙ্গে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। সেই সময় তার বয়স ছিল ২৪ বছর।
পারাথিরাস বলে, ‘আমরা জানি না তাকে কোথায় কবর দেওয়া হয়েছে। কোথায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল তাকে?’
সূত্র : এএফপি