মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজা থেকে কোনো ফিলিস্তিনিকে কেউ বহিষ্কার করবে না। ট্রাম্পের এমন মন্তব্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর প্রস্তাবিত গাজার বাসিন্দাদের উত্খাতের পরিকল্পনা থেকে পিছু হটেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
গত বুধবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প গাজা নিয়ে এমন কথা বলেন। এ সময় সেখানে তাঁর সঙ্গে আইরিশ প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিনও উপস্থিত ছিলেন।
গত মাসে ট্রাম্প গাজা নিয়ন্ত্রণ ও এর ২০ লাখের বেশি বাসিন্দাকে স্থায়ীভাবে প্রতিবেশী দেশগুলোতে স্থানান্তরের প্রস্তাব দিলে তা ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। ট্রাম্পের এমন গাজা খালি করার প্রস্তাব মধ্যপ্রাচ্য ও এর বাইরের দেশগুলোকে স্তম্ভিত করে দেয়।
এদিকে গাজা থেকে ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের উত্খাতের পরিকল্পনা থেকে ট্রাম্পের সরে আসার মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে হামাস। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেছেন, যদি ট্রাম্পের মন্তব্য গাজার জনগণকে বাস্তুুচ্যত করার চিন্তা-ভাবনা থেকে সরে আসার প্রতিনিধিত্ব করে, তাহলে সেটিকে স্বাগত জানাই।
ইসরায়েলি দখলদারদের যুদ্ধবিরতি চুক্তির সব শর্ত মেনে চলায় বাধ্য করার মাধ্যমে এই অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করার আহবান জানাই।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ জাতিসংঘের :
গাজায় হামলা চালানোর সময় পদ্ধতিগতভাবে নারীদের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো ধ্বংস এবং যৌন সহিংসতাকে যুদ্ধের একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে ইসরায়েল ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ চালিয়েছে বলে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার জেনেভাভিত্তিক স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন এক প্রতিবেদনে বলেছে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজার প্রধান প্রজনন স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রটিতে হামলা ও ধ্বংস করেছে। একই সঙ্গে তারা গর্ভাবস্থা, প্রসবসেবা, নবজাতকের যত্নের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র গাজায় সরবরাহ করতে বাধা দিচ্ছে।
গাজায় মৃতের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি : গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুরে জানায়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকাটিতে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া ৯টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৮ হাজার ৫২৪ জনে দাঁড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা এক লাখ ১১ হাজার ৯৫৫ জনে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আরো প্রায় ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গাজায় বন্ধ হচ্ছে বেকারি : ইসরায়েলি বাহিনীর অবরোধের মুখে জ্বালানি ও রান্নার গ্যাসের সংকটে একের পর এক বেকারি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে গাজায় খাদ্যসংকট আরো তীব্র হচ্ছে। এ ছাড়া জ্বালানির অভাবে গাজায় পরিবহনব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মুখে পড়েছে। লোকজনের পথচলা ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি চিকিৎসাসেবা নিতে হাসপাতালে যাওয়া-আসাও সীমিত করতে বাধ্য হচ্ছে তারা। রোজা শুরুর পর থেকে গাজায় ত্রাণসহ কোনো পণ্য প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েলি বাহিনী। এতে গাজায় খাদ্যাভাব দেখা দিচ্ছে ফিলিস্তিনি উপত্যকাটিতে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার-জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি ইসরায়েলি বাহিনীর অবরোধের মুখে গাজার পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি ঘটছে বলে সতর্ক করেছেন। তিনি সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে যুদ্ধবিরতির আগের সময়ের মতো আবারও তীব্র ক্ষুধার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠতে পারে গাজা। সূত্র : আলজাজিরা, এএফপি