ঢাকা, সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫
১০ চৈত্র ১৪৩১, ২৩ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫
১০ চৈত্র ১৪৩১, ২৩ রমজান ১৪৪৬

ঋণের সুদহার কমান

  • উদ্যোক্তাদের আস্থা ফেরাতে হবে
শেয়ার
ঋণের সুদহার কমান

৯ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতিতে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি ও নীতি সুদ হার অপরিবর্তিত রাখা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বছরে দুইবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে কী প্রভাব ফেলবে? গত শনিবার ডিসিসিআই আয়োজিত বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিদ্যমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা শীর্ষক বক্তব্যে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেছেন, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি উদ্বেগজনক হারে কমেছে। উদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ঋণের সুদহার হ্রাস একান্ত অপরিহার্য। বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।

সেমিনারে তিনি বলেছেন, উদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের হার ডাবল ডিজিটে উন্নীত করা, মন্দ ঋণ কমাতে নজরদারি বাড়ানো, আর্থিক খাতে সুশাসন ও স্বচ্ছতা আনা এবং ঋণের সুদহার হ্রাস অপরিহার্য।

যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি নির্ভর করে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর। অনেক সময় বিনিয়োগকে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে ধরা হয়। বিনিয়োগ ব্যক্তি খাতে যেমন হতে পারে, তেমনি হয় রাষ্ট্রীয় খাতে।

যেকোনো দেশে ব্যক্তি বা বেসরকারি বিনিয়োগ বড় একটা দিক। সাম্প্রতিক বাস্তবতা হচ্ছে, ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরশীল ছোট, মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এলসি খোলার হার কমেছে ৭ শতাংশ আর উৎপাদন কমেছে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। ঋণের সুদহার বাড়ানোতে চরম সংকটে পড়েছে বেসরকারি খাত। ফলে ব্যবসার প্রসারসহ থমকে রয়েছে বিনিয়োগ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের মুদ্রানীতিতে একদিকে যেমন উচ্চ নীতি সুদ হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি অর্থনীতিতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি করা হয়নি। এর ফলে দেশে বিনিয়োগ সেভাবে উৎসাহিত হবে না। ব্যবসায়ীদের জন্য নিশ্চয়ই এটি ভালো সংবাদ নয়।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রে বিরাজমান অনিশ্চয়তার সময় বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ থাকে না। তবে বৃহৎ আকৃতির বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা না গেলেও ব্যবসার অগ্রগতি বজায় রাখার স্বার্থে স্বাভাবিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প নেই। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যদি স্বাভাবিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি অব্যাহত না থাকে, তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই স্থবিরতা নেমে আসবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে না, বেকারত্ব বেড়ে যেতে পারে, দ্রব্যমূল্যও বেড়ে যেতে পারে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনে। এমনকি দেশে মন্দা অবস্থাও দেখা দিতে পারে, যা দেশের সার্বিক অর্থনীতির জন্য মোটেই ভালো নয়।

দেশের অর্থনীতি নানা রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। ছোট-বড় সব ব্যবসার ক্ষেত্রেই নানা ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। শিল্প, ব্যবসা, বিনিয়োগসব কিছুই যেন তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ঋণের সুদহার কমিয়ে উদ্যোক্তাদের আস্থা ফেরাতে হবে।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বেতন-বোনাস পরিশোধ করুন

    উত্তপ্ত শিল্পাঞ্চল
শেয়ার
বেতন-বোনাস পরিশোধ করুন

নানামুখী সংকটে নিমজ্জিত দেশের শিল্প খাত। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট ক্রমেই প্রবল হচ্ছে। উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। রয়েছে ডলার সংকট।

কমছে ঋণপত্র খোলা এবং নিষ্পত্তির হার। কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েক শ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ধুঁকছে অনেক কারখানা।
অনেক কারখানা নিয়মিত বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। ফলে বাড়ছে শ্রম অসন্তোষ। এরই মধ্যে চলে এসেছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তা সবাই বেতন-বোনাসের জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন, কিন্তু অনেক কারখানাই এখনো তা দিতে পারেনি।
ফলে বাড়ছে আরো অসন্তোষ।

গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঈদে বেতন-বোনাস, ছুটি ও বিভিন্ন দাবিতে শিল্পাঞ্চলগুলোতে রীতিমতো উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে। বরং প্রতিদিনই আন্দোলন, বিক্ষোভ, কর্মবিরতিতে সোচ্চার আছেন কর্মীরা। সরকারের ত্রিপক্ষীয় কমিটির (মালিক-শ্রমিক এবং সরকারের) বৈঠকে সমন্বিত উদ্যোগের ফলে মজুরি ও বোনাস নিয়ে সংকট কিছুটা প্রশমন হলেও এখনো কয়েকটি কারখানা ঝুঁকিতে রয়েছে। এ নিয়ে গত শনিবার কয়েকটি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষও ছিল।

জানা যায়, শনিবার বকেয়া বেতনের দাবিতে চট্টগ্রাম নগরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন জেএমএস গার্মেন্টস লিমিটেড নামের একটি পোশাক তৈরি কারখানার শ্রমিকরা। নগরের ফ্রিপোর্ট এলাকায় বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। পরে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সমঝোতার পর দুপুর ১টার দিকে সড়ক থেকে অবরোধকারীরা সরে গেলে যান চলাচল শুরু হয়। কারখানাটি চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) অবস্থিত। ওদিকে গাজীপুর মহানগরীর বাসন এলাকার জায়ান্ট নিট ফ্যাশন কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করায় শনিবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। ফলে সকাল থেকেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে দুই ঘণ্টা পর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম কালের কণ্ঠকে বলেন, শনিবার ছিল তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ঈদ বোনাস ও মজুরি প্রদানের শেষ দিন। কিন্তু শনিবার বন্ধের দিন হওয়ায় কিছু সমস্যা হয়েছে। তাঁদের ধারণা, এরই মধ্যে ৬০ শতাংশ শ্রমিকের মজুরি হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের মজুরি হয়েছে ৮০ শতাংশ আর মার্চের বেতন খুব একটা পাননি শ্রমিকরা। বিজিএমইএর সাবেক জ্যেষ্ঠ সভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব কালের কণ্ঠকে বলেন, ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০ রোজার মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন ও বোনাস ৮০ শতাংশের বেশি কারখানার মালিকরা পরিশোধ করেছেন। বাকিগুলো নিয়েও সংকটের আশঙ্কা করছেন না তিনি।

আমরা চাই না সারা বছর কাজ করার পর ঈদের আগে শ্রমিকরা বেতন-বোনাসের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসুন। এর আগেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন, এমনটাই প্রত্যাশিত।

মন্তব্য

সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে

    নির্বাচনের দাবি জোরালো হচ্ছে
শেয়ার
সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে

অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাস অতিবাহিত হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রতিদিন মিটিং, মিছিল, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ আরো কিছু রাজনৈতিক দল দ্রুত সাধারণ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে।

আবার কয়েকটি দল আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করার দাবি জানাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে গত ১৭ মার্চ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেই দিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমরা এরই মধ্যে সাত মাস পার করে এসেছি। আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে।
কাজেই কী কী সংস্কার করতে চাই করে ফেলতে হবে।

মানুষ দীর্ঘদিন গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, বিশেষ করে আগের তিনটি নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা আছে। দিনের ভোট রাতে হয়েছে, একজনের ভোট আরেকজন দিয়েছেএমন অনেক অভিযোগ ছিল। কাজেই দেশের মানুষ, বিশেষ করে গত ১৫ বছরে যারা নতুন ভোটার হয়েছে, তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে উন্মুখ হয়ে আছে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, অবাধ ও অংশগ্রহণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগাদা রয়েছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে, দেশের পরিস্থিতি তত জটিল হবে। রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়বে। সংঘাত, সংঘর্ষ বাড়বে। অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হতে পারে।
কাজেই প্রধান উপদেষ্টা যথার্থই বলেছেন, আমাদের দ্রুত নির্বাচনের দিকে এগোতে হবে।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনী প্রস্তুতি ও রাষ্ট্রের সংস্কারপ্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে চলেছে। অন্তর্বর্তী সরকার সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ বাস্তবায়নের দিকে যাবে, নাকি বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ নিয়ে এগোবে, তা রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ওপরই নির্ভর করছে। তবে সরকারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, শেষ পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ বাস্তবায়ন করে দ্রুত নির্বাচনে যেতে পারে সরকার। কারণ রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যেসব প্রস্তাব রেখেছে, তাতে ইতিবাচক জবাবের সঙ্গে ভিন্নমতেরও প্রকাশ ঘটছে। সে ক্ষেত্রে সংস্কার প্যাকেজ সংক্ষিপ্ত হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। এদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) চলতি বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন করার সময়সীমা অতিক্রম করতে চায় না বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। গত ১০ মার্চ ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই সময়সীমা যাতে পার না হয় সে জন্য ইসি প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অক্টোবরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে। নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে জানতে উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরাও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।

দেশের মানুষ চায়, দ্রুত গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসুক। আবার অস্থিতিশীলতাও কাম্য নয়। এই অবস্থায় অতি জরুরি সংস্কার সম্পন্ন করে দ্রুত নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

 

মন্তব্য

আলু চাষিদের রক্ষা করুন

    হিমাগারে স্লিপ কারসাজি
শেয়ার
আলু চাষিদের রক্ষা করুন

চলতি মৌসুমে আলুর ফলন খুবই ভালো হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী, দেশে আলুর উৎপাদন ছাড়িয়েছে এক কোটি ৯ লাখ টন। অন্যদিকে দেশে এক বছরে আলুর মোট চাহিদা ৯০ লাখ টন। ফলে চাহিদার চেয়েও ১৯ লাখ টন বা ২২ শতাংশ আলু বেশি উৎপাদিত হয়েছে।

আর এতেই বিপদে পড়েছেন আলু চাষিরা। আলুর দাম এতটাই পড়ে গেছে যে আলুর উৎপাদন খরচও উঠছে না। প্রতি কেজি আলুতে লোকসান দিতে হচ্ছে সাত-আট টাকা। তাঁরা হিমাগারেও আলু রাখতে পারছেন না।
কারণ সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় আলু রাখছেন না হিমাগার মালিকরা। কারসাজির মাধ্যমে নামে-বেনামে, আত্মীয়-স্বজন ও পরিজনদের নামে আগে থেকেই স্লিপ কেটে রেখেছেন মালিকরা। এরপর কৃষক আলু রাখতে গেলে তাঁদের বলা হচ্ছে হিমাগারে জায়গা নেই। ফলে যাঁরা স্লিপ কেটে রেখেছেন, তাঁদের কাছে নামমাত্র মূল্যে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।
আর যেসব ব্যবসায়ী আলু কিনে হিমাগারে রেখে পরে বিক্রি করেন, তাঁদের অনেকে এবার আলু কিনতে পারছেন না। কারণ তাঁরাও স্লিপ পাচ্ছেন না। ফলে হিমাগার মালিকদের এজেন্টরা রীতিমতো শোষণ করছেন।

আলু পচনশীল পণ্য। যে দামই পান, কৃষককে বিক্রি করে দিতেই হবে।

গতবার আলুর অতিরিক্ত দাম থাকায় কৃষকরা এবার বেশি আলু চাষ করে এখন বিপাকে পড়েছেন। জানা যায়, এ বছর প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ হয়েছে ১৯-২০ টাকা। কৃষকরা এখন প্রতি কেজি আলু ১০ থেকে ১২ টাকা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। গড়ে প্রতিবছর রপ্তানি হয় ৫০ হাজার টন। এ বছর রপ্তানির পরও সাড়ে ১৮ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত থেকে যাবে। অনেক আলু নষ্ট হবে। অথচ মৌসুম শেষে এই আলুই অনেক বেশি মূল্যে হিমাগার থেকে বাইরে আসবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আলু চাষিদের রক্ষায় সরকারকে আলু রপ্তানি বাড়ানোর বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে এবং তা করতে হবে অত্যন্ত দ্রুত। হিমাগারগুলোর ওপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে হবে। যেকোনো কারসাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে দেশে হিমাগারের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

মন্তব্য

সহিংসতা কাম্য নয়

    হঠাৎ উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ
শেয়ার
সহিংসতা কাম্য নয়

দীর্ঘদিন ধরেই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রেখে এসেছে। এখনো তারা একই ভূমিকায় রয়েছে। তারা চায় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আগামী নির্বাচন হোক সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক। নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রতিটি পদক্ষেপে যেন জবাবদিহি নিশ্চিত হয়।

গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) প্রেসিডেন্ট ড. কমফোর্ট ইরোর নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই বৈঠকে গণতন্ত্রের বৈশ্বিক প্রত্যাশার সঙ্গে সংগতি রেখেই প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সরকারের কোনো পরিকল্পনাই নেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার। তবে যেসব নেতার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের বিচার চলবে এবং তাঁরা আইন অনুযায়ী শাস্তি পাবেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যকে মেনে নিতে পারেনি অনেক রাজনৈতিক দল।
আবার অনেকে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে সমর্থনও করেছে। এরই মধ্যে এই বক্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে। ফলে হঠাৎ করেই রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
দেশ আবার সংঘাতময় হয়ে ওঠে কি না, সে আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষও।

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ অনেক রাজনৈতিক দলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। তারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

একদিকে সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করছে, অন্যদিকে দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিচারের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কারো মতে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সরকারের কার্যক্রম ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বলে দেবে এই সিদ্ধান্ত দেশে স্থিতিশীলতা আনবে, নাকি নতুন করে সংঘাতের জন্ম দেবে। এর আগে বিভিন্ন সময়ই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, তাঁরা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পক্ষে নন। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহবায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে এবং এই মাফিয়াগোষ্ঠীর রাজনীতিতে ফেরার যেকোনো প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করা হবে। এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে কোনো ধরনের আপস করার সুযোগ নেই। এনসিপির উত্তরাঞ্চলের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, লড়াইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের জন্য আমরা প্রস্তুত। এদিকে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ চিন্তা করে অনেকেই উদ্বেগ অনুভব করছে। এদিকে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত শুক্রবার রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়। সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সতর্ক অবস্থানে ছিল যৌথ বাহিনী। প্রস্তুত ছিল পুলিশের রায়টকারসহ বিশেষ সরঞ্জাম।

মানুষ চায় গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দেশ এগিয়ে যাক। সহিংসতা কারোই কাম্য নয়। এই অবস্থায় সবারই উচিত সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। যেকোনো মূল্যে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ