<p>মসলিন ‘ঢাকাই মসলিন’ নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত এক ধরনের মিহি সুতিবস্ত্র। ঢাকা শহর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্থানীয় কারিগররা ফুটি কার্পাস  নামক তুলা থেকে তৈরি অতি চিকন সুতা দিয়ে মসলিন প্রস্তুত করত। মসলিন শব্দের উৎপত্তির উৎস অস্পষ্ট। ধারণা করা হয়, মসলিন শব্দটি ইরাকের একটি প্রাচীন ব্যবসাকেন্দ্র মসুল থেকে উদ্ভূত। মোগল আমলে বাংলার রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তরিত হওয়ার পর থেকে ঢাকাই মসলিনের খ্যাতি বেড়ে যায়। মোগল সম্রাট ও অভিজাতরা ঢাকার মসলিনশিল্পের প্রসারে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। সে সময়ে সম্রাট, প্রাদেশিক শাসনকর্তা এবং পদস্থ কর্মকর্তা ও অভিজাতদের ব্যবহারের জন্য প্রচুর পরিমাণে সূক্ষ্ম মসলিন বস্ত্র সংগ্রহ করা হতো।</p> <p>ঢাকার মসলিন কাপড়ের মান বিভিন্ন ধরনের ছিল। সম্রাট, উজির, নওয়াব ও অভিজাত শ্রেণির জন্য বোনা হতো সূক্ষ্ম ও মিহি বস্ত্র এবং দরিদ্রদের জন্য মোটা ও ভারী কাপড়। কাপড়ের সূক্ষ্মতা ও স্বচ্ছতা, উৎপাদনের উৎস এবং ব্যবহারভেদে ঢাকাই মসলিনের মলমল, ঝুনা, রঙ্গ, আবিরাওয়ান, খাস, শবনম, আলাবালি, তনজিব, নয়ন-সুখ, জামদানি ইত্যাদি নাম দেওয়া হতো। বিভিন্ন রকম মসলিনের মধ্যে জামদানি এখনো প্রচলিত।</p> <p>সবচেয়ে সূক্ষ্ম মসলিনের নাম ছিল মলমল। এগুলো বেশ দামি এবং এ রকম এক প্রস্থ বস্ত্র তৈরি করতে তাঁতিদের দীর্ঘদিন, এমনকি ছয় মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেত। এই বস্ত্র সম্রাট ও নওয়াবরাই ব্যবহার করতেন।</p> <p>কথিত আছে, মসলিনে তৈরি করা পোশাকগুলো এতই সূক্ষ্ম ছিল যে ৫০ মিটার দীর্ঘ মসলিনের কাপড়কে একটি দিয়াশলাই বাক্সে ভরে রাখা যেত।</p> <p>ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে ঊনবিংশ শতাব্দীতে স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত করা বস্ত্রের ওপরে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ করারোপ করা হয়, যেখানে ব্রিটেনে প্রস্তুত করা আমদানীকৃত কাপড়ের ওপরে মাত্র ২ থেকে ৪ শতাংশ কর ছিল। এর ফলে স্থানীয় তাঁতিরা মসলিন কাপড় তৈরিতে উৎসাহ হারায়। কথিত আছে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা মসলিন উৎপাদন বন্ধ করার জন্য মসলিন বয়নকারী তাঁতিদের হাতের বুড়ো আঙুল কেটে দেয়।           </p> <p> </p> <p> </p>