<p>উনিশ শতক পর্যন্ত তুলা দিয়ে মসলিনের মতো বিশ্বখ্যাত কাপড় উৎপাদিত হতো আমাদের দেশে। মসলিনের সেই জৌলুস আর না থাকলেও বিশ্বে তুলার চাহিদা কমেনি। তুলা বাঙালির জীবন, কৃষি ও শিল্পের এক অমূল্য সম্পদ। বিশ্বের অন্যতম পুরনো এই ফসল যুগে যুগে মানুষের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।</p> <p>পৃথিবীতে তুলার ইতিহাস সাত হাজার বছর আগের। আর্য যুগ থেকে ব্রিটিশ আমলের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশে কার্পাসের ব্যাপক চাষবাদ হতো। সেই কার্পাস দিয়ে চলত চরকায় সুতা তৈরির উৎসব। তাঁতিরা কাপড় বুনে নিজ দেশের চাহিদা মেটাতেন। তবে এখন দেশীয় তুলার বাজার আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে। পৃথিবীর প্রধান তুলা উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, ব্রাজিল ও মিসর আছে সামনের সারিতে।</p> <p>তুলাগাছ মূলত মালভেসি পরিবারের অন্তর্গত। সাধারণত ছয় থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয় তুলাগাছ। বছরে একবার ফল দেয় গাছটি, যা পাকলে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে তুলার সাদা আঁশ। এই আঁশই মূলত প্রক্রিয়াজাত হয়ে আমাদের ব্যবহার উপযোগী করা হয়, যা তুলা নামে পরিচিত।</p> <p>প্রধানত উষ্ণ জলবায়ুতে এই গাছ ভালো জন্মায়। বাংলাদেশে খুলনা, যশোর, রাজশাহীসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাটিতে তুলা চাষ বেশি জনপ্রিয়। তুলাশিল্পকে বলা হয় ‘সাদা সোনা’। বিশ্বজুড়ে এর চাহিদা বিপুল। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এটি কৃষি ও শিল্প খাতের মধ্যে একটি সেতুবন্ধ তৈরি করে। দেশে তৈরি পোশাক শিল্পে তুলার চাহিদা অনেক বেশি। তবে তুলা চাষে আমরা এখনো স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারিনি। দেশের তুলা চাহিদার বড় অংশ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করতে হয়। সরকার তুলা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে আধুনিক প্রযুক্তি আর উচ্চফলনশীল জাতের বীজ কৃষকের হাতে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।</p> <p>তুলাগাছ থেকে প্রাপ্ত সাদা আঁশ আমাদের পোশাক তৈরির প্রধান উপাদান। তবে এর ব্যবহার এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। তুলা থেকে তৈরি হয় ব্যান্ডেজ, ফিল্টারের মতো পণ্যও। এ ছাড়া তুলার বীজ থেকে উৎপন্ন তেল খাবার ও প্রসাধনী শিল্পে ব্যবহৃত হয়। প্রাপ্ত এই ভোজ্য তেল উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ ও পুষ্টিকর। গাছের শুকনা অংশ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া তুলাগাছের কাঠ দিয়াশলাই বাক্স ও কাঠি তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়।</p> <p> </p> <p>♦ আল সানি</p> <p> </p>