দেশে গত বছরের শেষ পাঁচ মাসে এক হাজার ৫৬৫ জন খুন হয়েছে। এতে প্রতি মাসে গড়ে খুন হয়েছে ৩১৩ জন। এ সময় হামলাকারীদের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রে দেড় সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়। পুলিশ সদর দপ্তর, হাসপাতাল ও হতাহতের পরিবার সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
দেশে গত বছরের শেষ পাঁচ মাসে এক হাজার ৫৬৫ জন খুন হয়েছে। এতে প্রতি মাসে গড়ে খুন হয়েছে ৩১৩ জন। এ সময় হামলাকারীদের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রে দেড় সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়। পুলিশ সদর দপ্তর, হাসপাতাল ও হতাহতের পরিবার সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
চলতি বছরের শুরুতেও এই অপরাধমূলক ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। চলতি জানুয়ারি মাসের ২৫ দিনে দেশে প্রতিদিন একাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে।
দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম গতকাল শনিবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। পুলিশের সব ইউনিটপ্রধানকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র বলছে, চলতি মাসের গত ২৫ দিনে দেশে প্রতিদিন একাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক সহিংসতা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও ডাকাতি। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হলেও বেশির ভাগ অপরাধী অধরা।
সর্বশেষ গত শুক্রবার এক দিনেই তিনটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে মধ্যরাতে রাজধানীর মিরপুরের দিয়াবাড়ী সিটি বস্তিতে মো. মিলন নামের এক পোশাককর্মীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
একই দিন রাত সাড়ে ৯টায় খুলনা নগরের তেঁতুলতলা মোড় এলাকায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অর্ণব কুমার সরকারকে প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
এর আগে ওই দিন দুপুরে চট্টগ্রামের রাউজানে জুমার নামাজ আদায়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে জাহাঙ্গীর আলম (৫৫) নামের এক ব্যবসায়ী নিহত হন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এভাবে প্রতিদিন রাজধানী বা ঢাকার বাইরে চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় নদী, খাল-বিল, মাঠ, ঝোপ-জঙ্গল থেকে অজ্ঞাতপরিচয় লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। একই সঙ্গে চুরি-ছিনতাই, দস্যুতা ও ডাকাতির মতো অপরাধমূলক ঘটনা বেড়েছে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা ও বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা বেড়ে যাওয়া মানে সমাজে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। তাঁদের মতে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর ব্যর্থতার কারণেই মূলত এসব ঘটছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করে জনমনে শান্তি ফেরাতে হবে।
হত্যার নেপথ্যের কারণ বিশ্লেষণে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, পূর্বশত্রুতা, রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, সম্পত্তির লোভ ও সম্পর্কের টানাপড়েনের মতো ঘটনার জেরে হত্যার ঘটনা বাড়ছে। এমনকি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও কুপিয়ে হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের গত এক বছরের তথ্য বলছে, দেশে ২০২৪ সালে তিন হাজার ৪৩২ জন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ খুন হয়েছে। এর মধ্যে পেশাজীবীর সংখ্যা বেশি। গত আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে এক হাজার ৫৬৫ জন খুন হয়। এর আগের সাত মাসে খুন হয় এক হাজার ৮৬৭ জন। এই হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে ২৬৭ জন খুন হয়।
পুলিশের অন্য এক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসে দেশে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৭৯৬টি মামলা হয়েছে। আগের বছর ২০২৩ সালে একই সময়ে এই অপরাধে মামলা হয় ৪৯৪টি। একই সময়ে অপহরণের ঘটনায় ৩০২টি মামলা হয়। ২০২৩ সালের এ সময় এসব অভিযোগে মামলা হয় ১৬০টি।
পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সাধ্যমতো কাজ করছে। কিন্তু কিছু সামাজিক অপরাধের কারণেই খুনের পরিসংখ্যান বাড়ছে।
পুলিশ ও আদালতের অপরাধবিষয়ক তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক মাসে রাজধানীর ৫০টি থানা এলাকায় অন্তত ৩৪ জন ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে মামলা করেছে। মেয়র হানিফ উড়ালসেতুতে গত ১৮ ডিসেম্বর কামরুল হাসান নামের একজন ছিনতাইকারীদের ধারালো অস্ত্রে খুন হন। এর আগে ১৫ ডিসেম্বর হাবিব উল্লাহ নামের একজন মগবাজার এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। আহত হয়েছেন অনেকে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে কামরাঙ্গীর চর বেড়িবাঁধ এলাকায় সজল রাজবংশী নামের এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে টাকাসহ ৭০ ভরি স্বর্ণালংকার ডাকাতির অভিযোগ পাওয়া যায়।
একই সঙ্গে চাঁদাবাজির ঘটনাও বাড়ছে। গত ১০ জানুয়ারি রাতে চাঁদা না পেয়ে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে ব্যবসায়ী এহতেশামুল হককে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে নিউ মার্কেট থানায় মামলা হয়।
রাজধানীতে খুন, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অপরাধ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মো. সাজ্জাত আলী বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তৎপর রয়েছে। অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।
খুনের ঘটনা বাড়ছে
দেশে সাম্প্রতিক ১৫টি হত্যার ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১১টি খুনে ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। বাকি তিনটি গুলি করে হত্যা।
গত ২২ জানুয়ারি মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে রুবেল নামের এক যুবককে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল জাদুরানী বাজারের একটি বটগাছে দুই হাত বেঁধে ঝুলিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। গত ২০ জানুয়ারি রাজধানীর পল্লবীতে বাবু নামের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গত ১ জানুয়ারি কিশোর-তরুণ অপরাধীরা মালপত্র ছিনিয়ে নিতে না পেরে হাসিবুল ইসলাম নামের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. মুনতাসীর মারুফ বলেন, নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের মনোসামাজিক বিশ্লেষণধর্মী গবেষণার অপ্রতুলতা রয়েছে। দেশে সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে মানুষের হত্যাপ্রবণতার কারণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়াবলি নির্ণয়ে এ ব্যাপারে নির্মোহ, পক্ষপাতহীন গবেষণা প্রয়োজন। কারণ অপরাধ সংঘটনে ও সহিংসতা বিস্তারে ব্যক্তির চেয়ে সমাজ বেশি দায়ী।
অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষক অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মানুষের প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির মিল না হলে প্রতিশোধপ্রবণ হয়ে ওঠে। পাওয়া-না পাওয়ার দ্বন্দ্বেও মানুষ আগ্রাসী ও হিংস্র হয়ে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাই সামাজিক-পারিবারিক অস্থিরতা দূর করে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে রাষ্ট্র, সমাজ ও নাগরিকদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে ।
সম্পর্কিত খবর
সারা বিশ্বে এখন শুল্কঝড় বইছে। মার্কিন প্রশাসন শুল্কহার বৃদ্ধিতে কোনো নিয়ম-কানুনের ধার ধারেনি। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্ক আরোপ নিয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশও এই চ্যালেঞ্জের বাইরে নয়।
গতকাল শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কহারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ সভাপতিত্ব করেন।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ কর আরোপের প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ। তবে ট্রাম্পের উচ্চ শুল্কনীতি আমাদের জন্য ওয়েক-আপ কল। ব্যক্তি সমালোচনা না করে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়াতে হবে। দেশের করকাঠামো শক্তিশালী করতে আয়কর আদায়ে জোর দিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘শুল্ক ও অশুল্ক বাধা কাটিয়ে বাণিজ্যের সম্প্রসারণে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) গঠিত হয়েছিল। কিন্তু প্রভাবশালী দেশগুলো ডব্লিউটিওর নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেনি। তাই সংস্থাটি এ ক্ষেত্রে সেভাবে প্রভাব রাখতে পারেনি। এর পর থেকেই নিজেদের মধ্যে সমমনা ১৫ থেকে ২০টি দেশ মিলে একাধিক জোট করে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে বাণিজ্য করছে।
ড. ফাহমিদা খাতুন আরো বলেন, ‘বাণিজ্য সক্ষমতা বাড়াতে আমরা অনেক দিন ধরেই বেশ কিছু দেশের সঙ্গে এফটিএ করার কথা বলে আসছি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামে যেখানে ৫০ দেশের সঙ্গে এফটি রয়েছে সেখানে আমাদের রয়েছে শুধু ভুটানের সঙ্গে। যত দ্রুত সম্ভব আরো কিছু দেশের সঙ্গে এফটি করতে হবে। একই সঙ্গে নতুন বাজার, পণ্য বহুমুখীকরণ ও উৎপাদনশীলতার ওপর জোর দিতে হবে।’
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে ঘোষিত নতুন শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করায় বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে সাময়িক স্বস্তি মিললেও অনিশ্চয়তা কাটেনি। এই ৯০ দিনের মধ্যে নতুন করে এলসি খোলা হলে তার জাহাজীকরণ যদি ৯০ দিনের পরে হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে ওই রপ্তানির বিপরীতে স্থগিত কর সুবিধা প্রযোজ্য হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। যদি এই স্থগিতাদেশের ৯০ দিন পর মার্কিন শুল্ক বিভাগ পণ্য খালাসীকরণের লক্ষ্যে শুল্ক অ্যাসেসমেন্ট করে তাহলে কত শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, তা নিশ্চিত করা না গেলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে শঙ্কা থেকেই যাবে।
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ১০ সুপারিশ
বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কহারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি ১০ দফা সুপারিশ করে। এগুলো হচ্ছে এক. শুধু পোশাক খাতকেন্দ্রিক রপ্তানিনির্ভরতা না রেখে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখিতা ও বৈচিত্র্য বাড়ানো এবং বিকল্প বাজার খুঁজে বের করা, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য কূটনীতি জোরদার করে সে দেশের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি অব্যাহত রাখা, ৯০ দিনের স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষে রপ্তানি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছালে বা জাহাজীকরণ হলে রপ্তানির বিপরীতে স্থগিতকৃত শুল্ক সুবিধা প্রযোজ্য হবে কি না তা স্পষ্ট করা অন্যতম।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কহারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সক্ষম হবে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সুলতান আহমেদ ভূঁইয়া এফসিএ, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা, ড. এস এম মোর্শেদ এবং টিভি অনুষ্ঠান নির্মাতা কে এম মাহমুদ হাসান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ও শান্তির পায়রা মোটিফে আগুন দেওয়ার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
একই সঙ্গে অবিলম্বে অগ্নিকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানায় সংগঠনটি।
গতকাল শনিবার ঢাবি সাদা দলের আহবায়ক অধ্যাপক মো. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক আব্দুস সালাম ও অধ্যাপক মো. আবুল কালাম সরকার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, বাঙালি জাতির ঐতিহ্যের স্মরক পহেলা বৈশাখ।
নেতারা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঢাবি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, পহেলা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রা পালনের লক্ষ্যে তৈরি প্রতিকৃতিসহ অন্যান্য জিনিসের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল না। ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর চারুকলার শোভাযাত্রা নিয়ে আগে থেকেই সতর্ক থাকা অত্যাবশ্যক ছিল। অতএব পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করি।
ঢাবি সাদা দলের নেতারা অবিলম্বে চারুকলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
ভারতের আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় গত শুক্রবার রাতে। এর ১৭ ঘণ্টা পর গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে পুনরায় একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ ছিল ৪৬ মেগাওয়াট। ক্রমান্বয়ে এক ইউনিট থেকে বিদ্যুতের পরিমাণ বাড়বে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কেন্দ্রটির দুটি ইউনিট থেকে গড়ে এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। কারিগরি ত্রুটির কারণে প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়েছে গত মঙ্গলবার। আর দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ হয় গত শুক্রবার রাত ১টার দিকে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) মো. জহুরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ত্রুটি দেখা দেওয়ায় আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ঘাটতি পূরণে গ্যাস ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বাড়ানো হয়।
আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম নিয়ে বিরোধ আছে। এটি নিয়ে আদানি ও বিপিডিবির মধ্যে আলোচনা চলছে। বকেয়া শোধ নিয়েও বিভিন্ন সময় তাগাদা দিয়েছে আদানি।
পিজিসিবি ও বিপিডিবি সূত্র বলছে, গতকাল শনিবার ছুটির দিন থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা অন্য দিনের চেয়ে কিছুটা কম। গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ চাহিদা উঠেছে ১৩ হাজার ৫৫২ মেগাওয়াট। এ সময় ৪২৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ শুরু না হলে আজ রবিবার লোডশেডিং আরো বৃদ্ধি পেত। ঘাটতি মেটাতে পেট্রোবাংলার কাছে বাড়তি গ্যাস সরবরাহও চেয়েছিল বিপিডিবি।
আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার। ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে এই কেন্দ্রে। এতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২৫ বছর ধরে কিনবে বাংলাদেশ। প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় একই বছরের জুনে। ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে বিপিডিবি। আদানির সঙ্গে বিপিডিবির চুক্তি পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত একটি কমিটি কাজ করছে।
ধরার বুকে ‘নির্মিত জাহান্নাম’ হিসেবে পরিচিত গাজার মানবিক পরিস্থিতির অবনতি বিশ্বসম্প্রদায়কে ভাবতে বাধ্য করছে। দখলদার ইসরায়েলের বেপরোয়া বিমান হামলা ও ভয়াবহ স্থল হামলায় অবরুদ্ধ গাজাবাসী এখন শুধু খাবারের অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরছে না; অনাহারি গাজাবাসী এক ঢোক সুপেয় জলও এখন পাচ্ছে না।
গাজায় বিশুদ্ধ পানির সবচেয়ে বড় উৎসটি ছিল ইসরায়েলি একটি কম্পানির। গত শুক্রবার কম্পানিটি পানির পাইপলাইন বন্ধ করে দিয়েছে।
ইসরায়েল গত সপ্তাহেই গাজার শিজাইয়া এলাকার সব অধিবাসীকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
মিউনিসিপ্যালিটির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘গাজার পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন এবং দিন দিন তা অবনতির দিকেই যাচ্ছে। পানি তো দৈনন্দিন নানা কাজে লাগে। কিন্তু পানি কোথাও মিলছে না। গাজা এখন বিশ্বের এক তৃষ্ণার্ত নগরী। আগামী দিনগুলোতে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা আমরা কেউ জানি না।’
গাজার লোকসংখ্যা ২৩ লাখ। কিন্তু যুদ্ধের কারণে বেশির ভাগ অধিবাসী এখন বাস্তুচ্যুত। প্রত্যন্ত এলাকায় এখনো দু-একটি কূপে পানি রয়েছে। কিন্তু সেই কূপে পানির বিশুদ্ধতার কোনোই গ্যারান্টি নেই।
গত শুক্রবার রেড ক্রসের প্রেসিডেন্ট মিরজানা স্পোলজারিক বলেন, গাজার মানবিক পরিস্থিতি ‘পৃথিবীর দোজখে’ পরিণত হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে অস্থায়ী হাসপাতালগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে। কারণ এরপর গাজাবাসীর রসদ ফুরিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থা রেড ক্রস।
তিনি বলেন, ‘আমরা গাজায় এখন নিজেদের এমন পরিস্থিতিতে দেখছি। যেটিকে আমাকে বলতে হবে পৃথিবীর দোজখ। মানুষ বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ, পানি, খাবার পায় না।’
গত ২ মার্চ গাজায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে দখলদার ইসরায়েল। ওই সময় দখলদারদের সঙ্গে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে। ওই দিন থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইসরাইল চুক্তি ভঙ্গ করে। এর কয়েক দিন পর ১৮ মার্চ রাতে গাজায় হঠাৎ তীব্র বিমান হামলা চালায় তারা। এতে এক রাতে চার শরও বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়।
জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এ ছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ভোরে গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের নেতৃত্বাধীন হামলায় ইসরায়েলে অন্তত এক হাজার ১৩৯ জন নিহত হয় এবং দুই শর বেশি মানুষকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে গাজায় ভয়াবহ হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। সূত্র : এএফপি, রয়টার্স