একাদশ সংসদ নির্বাচনে (২০১৮ সাল) রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করা সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) বর্তমানে যুগ্ম সচিব—এ রকম ৩৩ কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার তাঁদের ওএসডি করে আলাদা ছয়টি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে পাঁচটি প্রজ্ঞাপনের প্রতিটিতে ছয়জন করে এবং আরেকটিতে তিনজন কর্মকর্তাকে ওএসডি করার কথা জানানো হয়েছে। অবশ্য কী কারণে এসব কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে, তা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়নি।
বলা হয়েছে, জনস্বার্থে এই আদেশ জারি করা হয়েছে। এর আগে একই কারণে আরো ১২ কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মানসুর হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৩৩ কর্মকর্তাকে বদলি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।’ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ‘বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত এসব কর্মকর্তা ২০১৮ সালে উপসচিব ছিলেন।
তাঁরা ওই বছর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় ডিসি হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন।’
ওএসডি হওয়া সাবেক ডিসিরা হলেন অঞ্জন চন্দ্র পাল, সুলতানা পারভীন, সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ হেলাল হোসেন, আকবর আলী, মতিউল ইসলাম চৌধুরী, ড. সাবিনা ইয়াসমিন, ড. আতাউল গনি, আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন, এম কাজী এমদাদুল ইসলাম, এস এম মোস্তফা কামাল, মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম, মাজেদুর রহমান খান, এ জেড এম নূরুল হক, এস এম অজিয়র রহমান, মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, গোপাল চন্দ্র দাশ, কাজী আবু তাহের, মিজানুর রহমান, মোহাম্মদ আবদুল আহাদ, আনার কলি মাহবুব, সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, মাহমুদুল কবীর মুরাদ, আবুল ফজল মীর, মঈনউল ইসলাম, ওয়াহিদুজ্জামান, এ কে এম মামুনুর রশিদ, এস এম আবদুল কাদের, ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম, কবীর মাহমুদ, মাহমুদুল আলম ও হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৪ সালের দশম ও ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি-জামায়াত ও সমমনারা বর্জন করে। তবে ২০১৮ সালে তারা ভোটে এলেও আগের রাতেই সিল মেরে বাক্সভর্তি করে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ী হওয়ার অভিযোগ ওঠে।
সরকারের পালাবদলের প্রেক্ষাপটে গত ৯ ডিসেম্বর দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তিনটি নির্বাচনে নানা অভিযোগের বিষয়ে জানতে ৩০ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ডেকেছিল নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।
তখন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছিলেন, “উনারা (কর্মকর্তারা) ওনাদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেছেন। উনারা বলেছেন উনাদের তেমন কিছু করার ছিল না। ‘কলকাঠি’ অন্য জায়গা থেকে নাড়ানো হয়েছে। এক অর্থে বলতে গেলে উনারা অসহায় ছিলেন।
তবে যাঁরা নিচের কর্মকর্তা, তাঁরা তাঁদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা মূল কথা বলেছেন, আমাদের দেশ একটি ‘পুলিশি রাষ্ট্র’ হয়ে গিয়েছিল।”