সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম দিনে সংলাপে অংশ নিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। এলডিপির পক্ষ থেকে কমিশনের উত্থাপিত ১২০টি প্রস্তাবের সঙ্গে একমত প্রকাশ ও ৪২টিতে অসম্মতি জানিয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সংস্কার প্রস্তাবের ওপর লিখিত মতামত দিয়েছে।
দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শুরু
- আগে গণপরিষদ নির্বাচন চায় না জামায়াত। পিআর পদ্ধতি ও দ্বিকক্ষ সংসদের পক্ষে মত
- সংস্কার সুপারিশের ১২০ প্রস্তাবে একমত, ৪২টিতে না এলডিপির
- রবিবার মতামত দেবে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এলডিপির আনুষ্ঠানিক সংলাপ হয়। দলের সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বে সংলাপে এলডিপি মহাসচিব রেদোয়ান আহমদসহ আটজন উপস্থিত ছিলেন।
সংলাপ শেষে কর্নেল (অব.) অলি আহমদ জানান, রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ১৬৬টি প্রশ্নমালার যে স্প্রেডশিট পাঠিয়েছে তার মধ্যে এলডিপি ১২০টিতে একমত প্রকাশ করেছে। দলটি ৪২টিতে একমত নয় এবং দুটিতে আংশিকভাবে একমত ও দুটি অস্পষ্ট বলে জানিয়েছে। এ ছাড়া সংবিধান সংস্কারসংক্রান্ত ৭০টি প্রস্তাবের মধ্যে ৫১টিতে একমত, ১৬টিতে একমত নয়, একটিতে আংশিকভাবে একমত ও দুটি প্রস্তাবে অস্পষ্ট বলে মনে করে।
সুপারিশগুলোর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সুপারিশ সব থেকে দুর্বল ছিল বলে জানান অলি আহমদ। তিনি বলেন, ‘এর আগে তারা অতীতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে সংলাপ করেছিল তার কাগজ সংগ্রহ করা উচিত ছিল। আপনি যত কিছুই করেন না কেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারবেন না, যদি না দুজন লোক কাজ না করে—একজন ওসি, আরেকজন হলো ইউএনও।
এলডিপির মতামতের কাগজ কাউকে না দিতে ঐকমত্য কমিশনের কাছে প্রস্তাব রাখেন অলি আহমদ। জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা কাউকে দেব না। আগামী শনিবার দুটি ও রবিবার একটি দল সংলাপে অংশ নেবে বলে জানান তিনি।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচন চায় না জামায়াত : গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংসদ ভবনে অবস্থিত নিজ কার্যালয়ে ঐকমত্য কমিশনের কো-চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের কাছে সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদল। দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ।
এ সময় অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছে। আমিরে জামায়াতসহ নেতারা প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে দ্রুত একটি অর্থবহ নির্বাচন দেওয়ার জন্য বারবার বলে আসছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়ের ব্যাপারে একটি ধারণা জাতির সামনে পেশ করা হয়েছে। আমরা তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করিনি। আজকে আমরা পাঁচটি বিষয়ের ওপর আমাদের মতামত তুলে ধরেছি।
মিয়া গোলাম পরওয়ার উল্লেখ করেন, কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা একমত হতে পারিনি; আবার অনেক বিষয়েই একমত হয়েছি। আমরা ব্যাখ্যাসহ আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি। আমরা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছি। আমরা আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই সংস্কার সম্পন্ন করে একটি অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার কাজ শুরু করবে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, ঐকমত্য কমিশনের কাছে দেওয়া জামাতের প্রস্তাবে পিআর বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, পৃথিবীর ৬০টিরও বেশি দেশে এটি চালু রয়েছে। সংবিধানের মূলনীতি প্রসঙ্গে তারা আল্লাহর প্রতি অবিচল ঈমান এবং আস্থার কথা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া সংবিধানে সাম্য, গণতন্ত্র, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচারের ধারণা বজায় রাখতে মতামত দিয়েছেন।
তিনি জানান, জামায়াতে ইসলামী জনপ্রশাসনে বিরাজমান বৈষম্য এবং অসন্তোষের বিষয়েও মতামত দিয়েছে। তাঁরা এমন একটি সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন চান, যা সুষ্ঠু ও কার্যকর হবে এবং প্রশাসনে অস্থিরতা বা বৈষম্য থাকতে পারবে না। বিচারব্যবস্থার বিষয়ে তাঁরা হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ এবং ডিভিশনাল বেঞ্চ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবনায় কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁদের মতে, দেশের বিচারব্যবস্থা অতিরিক্ত মামলার পেছনে দৌড়াচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ দ্রুত বিচার পাচ্ছে না। জামায়াতে ইসলামী চায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। দলটি নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য সময়সীমা নির্ধারণের বিষয়ে মন্তব্য না করে; বরং সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়াই গুরুত্বপূর্ণ বলে মত প্রকাশ করেছে। তারা মনে করে, কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা দেওয়া হলে তা ফলপ্রসূ না হলেও, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করাটা অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, কোনো দেশে গণপরিষদ নির্বাচনের প্রয়োজন হয় নতুন সংবিধানের প্রয়োজন হলে। কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিল গঠন করা হয়। সেই কাজটা কখনো পার্লামেন্টেও হতে পারে, আবার গণপরিষদও হতে পারে। সবটাই সুযোগ সেখানে আছে। আমাদের তো একটা পার্লামেন্ট বিদ্যমান আছে। একেকটা দল নতুন গঠিত হলে তাদের নতুন কিছু কর্মনীতি কর্মসূচি থাকতেই পারে তা দোষণীয় কিছু নয়। সে ব্যাপারেও মতামত দিয়েছি।
তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচন চাই না। ধর্মনিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে আমরা মতামত দিয়েছি। ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দের যে ব্যাখ্যা ও ব্যবহার তা আমরা পছন্দ করি না।
তিনি বলেন, জামায়াত আগে থেকেই নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে যে অবস্থান সেই অবস্থানেই আছে। আমরা সময় কখনো বেঁধে দিইনি। আমাদের কাছে সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া। নির্বাচনটা যদি ১৪, ১৮ বা ২৪-এর মতো হয়, তাহলে তো ছয় মাস, দুই বছর, পাঁচ বছর অপেক্ষা করেও লাভ নেই। ১৫ বছর যদি একটা অবাধ-নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা অপেক্ষা করে থাকি, তাহলে সেই নির্বাচনের জন্যই মিনিমাম সংস্কার করার প্রয়োজন, সে জন্য যৌক্তিক সময় দিতে আমরা প্রস্তুত। দু-এক মাস আগে পিছের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নির্বাচনটা নিরপেক্ষ হওয়া। সে জন্য আমরা কোনো রোডম্যাপ ও ডেডলাইন বলিনি। নির্বাচনের রোডম্যাপ ও ডেডলাইন দেওয়া উচিত সরকারের।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা আসলে সংবিধানের সংস্কারের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছাতে চাই, যেখানে আমরা ফ্যাসিবাদ এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একটি সুষ্ঠু ও জনমুখী প্রশাসন গড়ে তুলতে পারব। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো, সংস্কার কার্যক্রম যাতে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং জনগণের কল্যাণে ঘটে।
গতকাল অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘সংস্কার বা নির্বাচন নিয়ে কমিশনের ওপর কোনো চাপ নেই। আমাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমরা তাই করছি। বিএনপি আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই তাদের মতামত জানাবে। ঈদের পরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে আলোচনা হবে।’ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গতকাল গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, আগামী রবিবার বিএনপি সংস্কার প্রস্তাব দেবে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক : জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কমফোর্ট ইরোর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সংসদ ভবনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ের সভাকক্ষে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের এশীয় কর্মসূচির পরিচালক পিইয়েরে প্রকাশ এবং প্রতিষ্ঠানটির মায়ানমার ও বাংলাদেশি সিনিয়র কন্সালট্যান্ট থমাস কিয়ান উপস্থিত ছিলেন৷
জানা গেছে, বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজের অগ্রগতিসহ বিবিধ বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হচ্ছে। ঈদের আগে চারটি দলের সঙ্গে সংলাপে বসবে কমিশন। ঈদের ছুটি শেষে পর্যায়ক্রমে বাকি দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরো জানান, বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর সুনির্দিষ্ট মতামত জানতে এরই মধ্যে স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত ১৬টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মতামত পাওয়া গেছে।
সম্পর্কিত খবর

রাজধানীজুড়ে বিশেষ নিরাপত্তা চৌকি, সতর্ক অবস্থান যৌথ বাহিনীর
নিজস্ব প্রতিবেদক

সাম্প্রতিক নানা ইসু্য সামনে রেখে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়। সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্তক অবস্থানে ছিল যৌথ বাহিনী। প্রস্তুত ছিল পুলিশের রায়টকারসহ বিশেষ সরঞ্জাম।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র তালেবুর রহমান বলেন, চলমান মিছিল ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে—এমন আশঙ্কায় সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে রাজধানীর নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
বায়তুল মোকাররম ঘিরে সর্তকতা : গতকাল সকাল থেকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনের এলাকায় সেনাবাহিনী, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জলকামান, এপিসি মোতায়েন ছিল আশপাশের এলাকায়।
এ সময় পল্টনে তোপখানা রোডের আশপাশের বিভিন্ন মোড়ে যৌথ বাহিনীকে সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলাসহ বিভিন্ন দেশে মুসলিমদের নিপীড়নের প্রতিবাদে বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠন ঢাকায় বিক্ষোভের ডাক দিয়ে সড়ক অবরোধ করলে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এরই মধ্যে জুমার নামাজের পর মসজিদটির বাইরে লোকজনকে কালো পতাকা হাতে মিছিলসহ ফিলিস্তিনে হামলার বিচার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। কারো কারো হাতে ফিলিস্তিনসহ বিভিন্ন পতাকা ছিল।
খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার বিচার দাবি করেছে। দলটির নেতারা বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমার নামাজের পর মসজিদের উত্তর গেটে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
অন্যদিকে নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররম মসজিদের পূর্ব পাশে সমাবেশ শুরু করে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর শাখা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পল্টন মোড়ে রাখা হয়েছে ডিএমপির জলকামান, এপিসি কার ও দুটি প্রিজন ভ্যান। বায়তুল মোকাররম মসজিদের প্রবেশমুখে অবস্থান নিয়েছেন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
প্রসঙ্গত, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জুমার নামাজের পর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ মিছিল করবে; এ ছাড়া ছাত্রশিবির ও জামায়াতের সদস্যরা মসজিদ এলাকায় উপস্থিত আছেন- এই খবরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়।
বায়তুল মোকাররম মসজিদে প্রবেশের সময় মুসল্লিদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করেন পুলিশ সদস্যরা। এ ছাড়া সাদা পোশাকে ও ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) বিপুলসংখ্যক সদস্যকে জ্যাকেট পরে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কোনো পুলিশ সদস্য মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অন্যান্য এলাকায় সতকর্তা : গতকাল বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট, প্রেস ক্লাব, পল্টন, হাইকোর্ট, সার্ক ফোয়ারার সামনে সর্তক অবস্থানে থাকতে দেখা যায় যৌথ বাহিনীর সদস্যদের। এ সময় মুসল্লি ও পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে তল্লাশি করতেও দেখা গেছে। এ ছাড়া নাইটিঙ্গেল মোড়ে বিজিবি সদস্যরা অবস্থান করছিলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাব ও শাহবাগ মোড়ে ছিল পুলিশের অবস্থান।
এর বাইরে গুলশান, উত্তরা, মিরপুর, রমনা, পুরান ঢাকা ও মতিঝিলের বিভিন্ন এলাকা এবং রামপুরা টিভি স্টেশনসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সামনের নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি দেখা গেছে সকাল থেকেই।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডিএমপির ৫০টি থানা এলাকায় জননিরাপত্তা বিধানে দুই পালায় ডিএমপির ৬৬৭টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করে। এর মধ্যে রাতে ৩৪০টি ও দিনে ৩২৭টি টিম দায়িত্ব পালন করে। টহল টিমগুলোর মধ্যে ছিল মোবাইল পেট্রোল টিম ৪৭৯টি, ফুট পেট্রোল টিম ৭৩টি ও হোন্ডা পেট্রোল টিম ১১৫টি। এ ছাড়া মহানগর এলাকার নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থানে ডিএমপি ৭১টি পুলিশি চেকপোস্ট পরিচালনা করে।

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক

গাজায় নির্যাতিত মুসলমানদের ওপর ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলা ও ভারতে মুসলিমদের ওপর আগ্রাসনের প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার রাজধানীসহ সারা দেশে সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম, খেলাফতে মজলিস, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন, ধর্মপ্রাণ মুসল্লি, সিপিবি ও বাসদ।
গতকাল দুপুরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম। সমাবেশে সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, ‘পৃথিবীর মানচিত্র মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত করা হচ্ছে। ভারত ও ইসরায়েল যৌথভাবে মুসলিম নিধন করছে।
মামুনুল হক বলেন, ‘বিশ্ব সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের প্রতি আমাদের আহ্বান, দ্রুত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হোক। ফিলিস্তিন মুক্ত করতে বিশ্বে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হতে আরব লিগ ও ওআইসিসহ মুসলমানদের সব সংগঠনকে আমরা আহ্বান জানাই।’
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিন ইস্যুর পাশাপাশি ভারতের মুসলমানদের রক্ত দিয়ে হোলি খেলার পাঁয়তারা চলছে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি জুনায়েদ আল হাবিব। এ ছাড়া বক্তব্য দেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, নায়েবে আমির আহমাদুল কাসেমী প্রমুখ।
গণহত্যার বিচার দাবি করেছে সিপিবি ও বাসদ
যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করে সম্প্রতি ফিলিস্তিনের গাজা, খান ইউনিসসহ বিভিন্ন স্থানে জায়নবাদী ইসরায়েলি বাহিনীর দ্বারা পরিচালিত নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ।
গতকাল সকালে সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব হয়ে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এর আগে রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন সিপিবির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সসহ নেতারা।
বক্তারা বলেন, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত এই গণহত্যার জন্য মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার আরব সহযোগীদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
এদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাসদ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ।
নেতারা ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ, দেশে দেশে পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্ট সব যুদ্ধ এবং যুদ্ধ উন্মাদনার বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে প্রতিবাদ প্রতিরোধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে গাজায় মানবিক সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানান তাঁরা।
এ ছাড়া চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলাম, সিলেটে বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় হেফাজতে ইসলাম, গাইবান্ধায় ইসলামী ছাত্রশিবির, ঝালকাঠির নলছিটিতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সর্বদলীয় ইসলামী ছাত্রঐক্য পরিষদ, টাঙ্গাইলে ছাত্রশিবির, পঞ্চগড়ে ঈমান আকিদা রক্ষা কমিটি, চাঁদপুরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গোপালগঞ্জে ওলামা পরিষদ, কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে তৌহিদী মুসলিম জনতা, চুয়াডাঙ্গার দামুরহুদায় দর্শনা প্রেস ক্লাব, বগুড়ার ধুনটে সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা, দিনাজপুরের হিলিতে তৌহিদী জনতা, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন, কুমিল্লার মুরাদনগরে হেফাজতে ইসলাম, জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে তৌহিদী জনতা, মাদারীপুরের শিবচরে পৃথকভাবে ইসলামী ছাত্রশিবির ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, রাজবাড়ীতে সাধারণ মুসলিম সমাজ ও শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয় বলে কালের কণ্ঠর সংশ্লিষ্ট নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।

রুহুল কবীর রিজভী
জনগণ আ. লীগকে ক্ষমা করলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু বিচার নিয়ে কোনো কথা হচ্ছে না। ছাত্র-জনতার গণহত্যায় দোষীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিচারপ্রক্রিয়া শেষে আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। যদি জনগণ তাদের ক্ষমা করে তাহলে আমাদের (আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া) কোনো আপত্তি নেই।
গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখানে ফায়দাবাদ মধ্যপাড়া হাজী শুকুর আলী মাদরাসাসংলগ্ন মাঠে দুস্থদের মধ্যে ঈদ সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
জুলাই আন্দোলনে গণহত্যায় জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করে রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এখন যে নেতৃত্বে আসবে, সে যদি ছাত্র হত্যা, অপরাধ, অর্থ লোপাট ও টাকা পাচার না করে থাকে তাহলে সেই আওয়ামী লীগ কেন রাজনীতি করতে পারবে না?’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কি না এমন প্রশ্ন উঠছে। অথচ এই প্রশ্ন উঠছে না, যারা গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের বিচার হবে কি না? কারা এই কাজ করেছে, এটা কি মানুষ দেখেনি? যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার হতেই হবে। আর কোনো ফ্যাসিবাদের উত্থান যেন না হয়, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি শাখার আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একটি গোষ্ঠী ৫ আগস্টের পর সংস্কারের কথা বলছে। কিন্তু গত ছয় মাসে দৃশ্যমান কোনো সংস্কার দেখা যায়নি। দেশের কোথাও স্থিতিশীলতা নেই। এখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
অনুষ্ঠানে মহানগর উত্তর বিএনপি নেতা এস এম জাহাঙ্গীর, কফিল উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আসিফ মাহমুদ
আ. লীগকে ফেরানোর খায়েশ বিপজ্জনক
নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফেরানোর ইচ্ছা বা পরিকল্পনা বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গতকাল শুক্রবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা কবে থেকে জার্মানি, ইতালির চেয়ে বেশি ইনক্লুসিভ ডেমোক্রেটিক হয়ে গেলাম? গণহত্যার বছর না ঘুরতেই আওয়ামী লীগকে ফেরানোর খায়েশ বিপজ্জনক।’
ফেসবুকে আরেক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘নির্বাচন পিছিয়ে যাবে, অনিশ্চয়তা তৈরি হবে—এসব শঙ্কার কথা বলে কেউ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে জনতার ঐক্যে ফাটল ধরাতে আসবেন না।
আসিফ লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্টভাবে বারবার বলছেন ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইলেকশন হবে। আমি নিশ্চয়তা দিতে চাই সরকার এই কথা রাখবে। সুতরাং নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই।’
তিনি লিখেন, ‘গণহত্যাকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ শুধু জাতীয়ভাবে নয়, আন্তর্জাতিকভাবে ইউএন (জাতিসংঘের) রিপোর্টের মাধ্যমে স্বীকৃত।