বাংলাদেশকে ভালো বার্তা দিল বিনিয়োগ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বাংলাদেশকে ভালো বার্তা দিল বিনিয়োগ সম্মেলন

দেশে অর্থনৈতিক সংকটের সময় বিনিয়োগে ভালো বার্তা দিল বিনিয়োগ সম্মেলন। এই সম্মেলনে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৫০টি দেশের ৫৫০ জন বিনিয়োগকারী অংশ নিয়েছেন। তাঁদের বড় অংশই বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আগামী দিনে এই বিনিয়োগ টানতে এবার একটি পাইপলাইন তৈরি হয়েছে।

এসব প্রতিশ্রুত বিনিয়োগ বাস্তবায়নে রোডম্যাপ (পথনকশা) করবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। বিডার হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান এই পরিকল্পনার কথা জানান।

বিডা আয়োজিত চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫-এর শেষ দিনে সমাপনী সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়। গত সোমবার সকালে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এ সম্মেলন শুরু হয়।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে নাহিয়ান রহমান বলেন, আমরা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখব এবং ভবিষ্যতে তাঁদের প্রতিক্রিয়াও নেওয়া হবে। এ নিয়ে একটি পথনকশা তৈরির কাজ চলছে। তিনি বলেন, নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা এড়িয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা হয়েছে।

এটি সম্মেলনে আসা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়েছে। এই উন্নতিতে বিনিয়োগকারীরা সন্তুষ্ট।

তিনি আরো বলেন, বিনিয়োগের চারটি ধাপের প্রথম ধাপ আগ্রহ প্রকাশ। সম্মেলন থেকে সেটি এসেছে। এখন বিনিয়োগকারীদের তথ্য সংগ্রহ ও নিবন্ধন করা হবে।

এর পর চূড়ান্ত ধাপে বিনিয়োগে আসবে। এসব প্রক্রিয়া করে সাধারণত একটি বিনিয়োগ আলোর মুখ দেখতে ১৮ থেকে ২৪ মাস লাগে। এই সময়ের আলোকে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের নিয়ে একটি সুস্পষ্ট পথনকশা তৈরি করা হবে। সম্মেলনে বিদেশিদের বিনিয়োগের যে আগ্রহ পাওয়া গেছে, একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। তাঁদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না জানতে চাওয়া হবে। এর মাধ্যমে বিনিয়োগের আগ্রহকে প্রকৃত বিনিয়োগে রূপ দেওয়া যাবে।

তিনি আরো জানান, আগের বছরের সম্মেলন ও এবারের সম্মেলনের পার্থক্য হলো, এবার রেজিস্ট্রেশনের পর ফলোআপ করা হবে। বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিনিয়োগকারীদের পরবর্তী সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা বলা হবে। আগে সম্মেলনের পর এমন ফলোআপ করা হয়নি। এবার সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন কম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতিসহ তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সেই তালিকা অনুযায়ী তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ ও প্রতিশ্রুত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে বিনিয়োগ করানো সম্ভব হবে।

বিনিয়োগকারীরা এবার বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে কোনো সমস্যার কথা বলেছেন কি নাজানতে চাইলে নাহিয়ান রহমান বলেন, এবার সে ধরনের সুযোগ ছিল না। আগে ৬০ থেকে ৬৫ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। বিনিয়োগ সম্পর্কিত কাজগুলো সম্পাদন করতে তাঁদের দপ্তরে দীর্ঘ সময় ঘুরতে হতো। এখন সেসব সমস্যা নেই, দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিনিয়োগের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হবে। 

নাহিয়ান রহমান বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি আমরা কী ধরনের বিনিয়োগ প্রত্যাশা করছি সে জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছি সেগুলোই পুরো বিনিয়োগ সম্মেলনে বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।

বিনিয়োগ সম্মেলনের শেষ দিন চারটি ব্রেক আউট সেশন করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছেহেলথকেয়ার, ডিজিটাল ইকোনমি, সেমিকন্ডাক্টর ও টেক্সটাইল। এসব সেশনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের তিনটি বিষয়ে বোঝাতে চেয়েছি। এসব খাতে বিনিয়োগের কী ধরনের সম্ভাবনা আছে সেটি জানানো হয়েছে। এসব খাতের দেশীয় বা স্থানীয় বিনিয়োগ ইকো সিস্টেমে যাঁরা আছেন অর্থাৎ দেশীয় বিনিয়োগকারী যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এসব খাতে বিনিয়োগের জন্য একটি পাইপলাইন তৈরির জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের পরিবর্তন হলেও বিনিয়োগকারীদের কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। আগের অবস্থাই বহাল থাকবে। বিষয়টি  নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবেএমন সম্ভাব্য রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

বিডার নির্বাহী সদস্য শাহ মো. মাহবুব জানান, সেমিকন্ডাক্টর খাতে ডিজাইন বা নকশার পর্যায় থেকে টেস্টিং পর্যায়ে যেতে করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় তৈরি পোশাক খাতে আন্ত সীমান্ত বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নত করা ও পোর্ট সুবিধা বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া দেশে এপিআই ও নতুন ভ্যাকসিন তৈরি খাতে বিনিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আমলাতান্ত্রিক যে জটিলতার কথা বলা হয়, এর অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াগুলো আগের তুলনায় সহজ ও কেন্দ্রীভূত হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা সম্মেলন উপলক্ষে দেশে এসে বিষয়টি নিজেরাই দেখছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন জায়গা থেকে কত বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছি, সেটি মুখ্য না। এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের নিয়ে একটি পাইপলাইন (তালিকা) তৈরি করা, যাতে তাঁদের ট্র্যাক করে পরে এসব বিনিয়োগ নিশ্চিত করা যায়। গত বিনিয়োগ সম্মেলনেও আমরা অনেক প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলাম, যা পরে বাস্তবায়ন হয়নি। সুতরাং পাইপলাইন তৈরি করে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার দিকে বেশি মনোযোগী হতে হবে।

জানা যায়, সম্মেলনে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের মিথস্ক্রিয়ার জন্য পৃথক ব্যবস্থা ছিল। এতে করে বিনিয়োগকারীরা এসব সংস্থা ও দলের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের অবস্থান তাত্ক্ষণিকভাবে জানতে পেরেছেন।  সম্মেলনে বিভিন্ন আয়োজনে যোগ দিয়েছেন প্রায় ৫০০ বিদেশি বিনিয়োগকারীর মধ্যে বিডার পক্ষ থেকে প্রায় ২০০ জনের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যাপারে বিডা বদ্ধপরিকর। তাই বাংলাদেশকে ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করার জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিডা। 

বিনিয়োগ পরিকল্পনায় বহুজাতিক কম্পানিসহ বহু প্রতিষ্ঠান :  বাংলাদেশে ২.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে হাসপাতাল বানাচ্ছে মার্কিন কম্পানি বাংলা ইউএস এলএলসি। আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিকমানের এই হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। 

বিনিয়োগ সম্মেলনে বাংলা ইউএস এলএলসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মুমতাজুর রহমান দাউদ এই বিনিয়োগ পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে ২.২ বিলিয়ন ডলারের যুগান্তকারী এই বিনিয়োগ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিকমানের হাসপাতাল, নার্সিং বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিল্প-কারখানা স্থাপন। এর মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে ১.৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে একটি আধুনিক হাসপাতাল কমপ্লেক্ষ এবং বিশেষায়িত নার্সিং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে জানান ড. দাউদ।

চট্টগ্রামে ৬০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে একটি সার কারখানা নির্মাণের কথাও জানান ড. দাউদ। আমেরিকান বিনিয়োগকারী গ্রুপ ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে যৌথভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।

মার্কিন এই বিনিয়োগকারী গ্রুপের চেয়ারম্যান মিস্টার ফ্র্যাংক জাও, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিলিয়নিয়ার উদ্যোক্তা হিসেবে সুপরিচিত। এ ছাড়া দলটিতে আছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. স্যাম বেটেটা, যিনি ফিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক গণিত বিভাগের প্রধান।

বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়ানো ও বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে তিনটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছেস্পেনের খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিটেক্স, সিমেন্ট খাতের কম্পানি লাফার্জহোলসিম ও চীনের অ্যাপারেল কম্পানি হান্ডা ইন্ডাস্ট্রিজ।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা দেখতে আগামী মাসে ২০০ বিনিয়োগকারীসহ বাংলাদেশ সফরে আসার কথা জানিয়েছেন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী।

তিনি জানান, চীনের তৈরি পোশাক কম্পানি হান্ডা ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছে।

এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ইনডিটেক্স ও হোলসিম গ্রুপের শীর্ষ নির্বাহীরা সাক্ষাৎ করেন। এ সময় ইনডিটেক্সের কর্মকর্তারা তাঁদের জন্য বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ (পণ্য) সরবরাহকারী হিসেবে উল্লেখ করে এখান থেকে পণ্য নেওয়ার পরিমাণ আরো বাড়ানোর কথা জানান। হোলসিমের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কার্বন ক্যাপচার প্রকল্প চালুর কথাও জানান।

এ ছাড়া দুবাইভিত্তিক বৈশ্বিক সরবরাহ ও বন্দর উন্নয়ন কম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ড গ্রুপের চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েম সম্মেলনে অংশ নিয়ে বিনিয়োগের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের সময় ডিপি ওয়ার্ল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এটি সুযোগের ভূমি। আপনারা বাংলাদেশে আসুন। আসুন, আমরা আপনাদের সহযোগিতা করে বিনিয়োগ বাস্তবায়ন করি।

বড় আকারে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীরা। গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এক বৈঠকে বিনিয়োগ পরিকল্পনার ঘোষণা দেয় ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সং-এর নেতৃত্বে কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিদল।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান জানান, বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য দূত ব্যারোনেস রোজি উইন্টারটন দেশের স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা খাতে প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি বিনিময় ও দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

এ ছাড়া টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্নয়নের লক্ষ্যে বিডা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) একটি অভিপত্র সই করেছে।

সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সঙ্গে আর্টেমিস অ্যাকর্ডস চুক্তিতে সই করেছে বাংলাদেশ। এর ফলে শান্তিপূর্ণ ও অসামরিক মহাকাশ অনুসন্ধানের উদ্যোগে ৫৪তম স্বাক্ষরকারী দেশ হলো বাংলাদেশ।

নতুন উদ্যোক্তাদের ৯০০ কোটি টাকার তহবিল : বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিতে ৮০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, বিশেষ এই তহবিলের অর্থ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা হবে এবং শুধু স্টার্টআপ কম্পানিগুলোকে মূলধন জোগান দেওয়া হবে। এ বিষয়ে শিগগিরই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

ইয়াংওয়ান প্রধানকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব : বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের অগ্রদূত এবং ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংকে দেশের অর্থনীতিতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়েছে।

স্টারলিংক পরীক্ষামূলক চালু : যুক্তরাষ্ট্রের টেলিকম জায়ান্ট স্টারলিংক বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে। এখন আবেদনের মাধ্যমে এনজিএসও (নন-জিওস্টেশনারি অরবিট) লাইসেন্স পেলেই বাংলাদেশে স্টারলিংকের কার্যক্রম শুরু হবে।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

শুল্কঝড়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আঞ্চলিক-দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে জোর

    ছায়া সংসদে ফাহমিদা খাতুন
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শুল্কঝড়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আঞ্চলিক-দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে জোর

সারা বিশ্বে এখন শুল্কঝড় বইছে। মার্কিন প্রশাসন শুল্কহার বৃদ্ধিতে কোনো নিয়ম-কানুনের ধার ধারেনি। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্ক আরোপ নিয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশও এই চ্যালেঞ্জের বাইরে নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কের চাপ এবং ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ বাংলাদেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। এটি মোকাবেলায় আঞ্চলিক কয়েকটি দেশের জোট এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ওপর জোর দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। 

গতকাল শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কহারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ সভাপতিত্ব করেন।

 

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ কর আরোপের প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ। তবে ট্রাম্পের উচ্চ শুল্কনীতি আমাদের জন্য ওয়েক-আপ কল। ব্যক্তি সমালোচনা না করে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়াতে হবে। দেশের করকাঠামো শক্তিশালী করতে আয়কর আদায়ে জোর দিতে হবে।

কারণ মার্কিন শুল্কারোপ ৯০ দিনের জন্য স্থগিত হলেও কাটেনি অনিশ্চয়তা।

তিনি বলেন, শুল্ক ও অশুল্ক বাধা কাটিয়ে বাণিজ্যের সম্প্রসারণে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) গঠিত হয়েছিল। কিন্তু প্রভাবশালী দেশগুলো ডব্লিউটিওর নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেনি। তাই সংস্থাটি এ ক্ষেত্রে সেভাবে প্রভাব রাখতে পারেনি। এর পর থেকেই নিজেদের মধ্যে সমমনা ১৫ থেকে ২০টি দেশ মিলে একাধিক জোট করে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে বাণিজ্য করছে।

আরো আগে আমাদের এই পথে যাওয়া দরকার ছিল।

ড. ফাহমিদা খাতুন আরো বলেন, বাণিজ্য সক্ষমতা বাড়াতে আমরা অনেক দিন ধরেই বেশ কিছু দেশের সঙ্গে এফটিএ করার কথা বলে আসছি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামে যেখানে ৫০ দেশের সঙ্গে এফটি রয়েছে সেখানে আমাদের রয়েছে শুধু ভুটানের সঙ্গে। যত দ্রুত সম্ভব আরো কিছু দেশের সঙ্গে এফটি করতে হবে। একই সঙ্গে নতুন বাজার, পণ্য বহুমুখীকরণ ও উৎপাদনশীলতার ওপর জোর দিতে হবে।

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে ঘোষিত নতুন শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করায় বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে সাময়িক স্বস্তি মিললেও অনিশ্চয়তা কাটেনি। এই ৯০ দিনের মধ্যে নতুন করে এলসি খোলা হলে তার জাহাজীকরণ যদি ৯০ দিনের পরে হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে ওই রপ্তানির বিপরীতে স্থগিত কর সুবিধা প্রযোজ্য হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। যদি এই স্থগিতাদেশের ৯০ দিন পর মার্কিন শুল্ক বিভাগ পণ্য খালাসীকরণের লক্ষ্যে শুল্ক অ্যাসেসমেন্ট করে তাহলে কত শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, তা নিশ্চিত করা না গেলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে শঙ্কা থেকেই যাবে।

 

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ১০ সুপারিশ

বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কহারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি ১০ দফা সুপারিশ করে। এগুলো হচ্ছে এক. শুধু পোশাক খাতকেন্দ্রিক রপ্তানিনির্ভরতা না রেখে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখিতা ও বৈচিত্র্য বাড়ানো এবং বিকল্প বাজার খুঁজে বের করা, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য কূটনীতি জোরদার করে সে দেশের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি অব্যাহত রাখা, ৯০ দিনের স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষে রপ্তানি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছালে বা জাহাজীকরণ হলে রপ্তানির বিপরীতে স্থগিতকৃত শুল্ক সুবিধা প্রযোজ্য হবে কি না তা স্পষ্ট করা অন্যতম।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কহারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সক্ষম হবে শীর্ষক ছায়া সংসদে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সুলতান আহমেদ ভূঁইয়া এফসিএ, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা, ড. এস এম মোর্শেদ এবং টিভি অনুষ্ঠান নির্মাতা কে এম মাহমুদ হাসান।

মন্তব্য
ঢা‌বি সাদা দল

ফ্যাসিবাদের মুখোশে আগুন পরিকল্পিত

ঢাকা বিশ্ব‌বিদ‌্যা‌লয় প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ব‌বিদ‌্যা‌লয় প্রতিনিধি
শেয়ার
ফ্যাসিবাদের মুখোশে আগুন পরিকল্পিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ও শান্তির পায়রা মোটিফে আগুন দেওয়ার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।

একই সঙ্গে অবিলম্বে অগ্নিকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানায় সংগঠনটি।

গতকাল শনিবার ঢাবি সাদা দলের আহবায়ক অধ্যাপক মো. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক আব্দুস সালাম ও অধ্যাপক মো. আবুল কালাম সরকার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, বাঙালি জাতির ঐতিহ্যের স্মরক পহেলা বৈশাখ।

এ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা উদযাপনের আর মাত্র দুই দিন বাকি। আনন্দ শোভাযাত্রা উদযাপনের জন্য ফ্যাসিস্টদের প্রতিকৃতি তৈরিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি যখন প্রায় শেষ দিকে তখন শনিবার ভোরে চারুকলা অনুষদের চার দেয়ালের ভেতরে তৈরি করা এসব প্রতিকৃতিতে আগুন দেওয়া নিছক কোনো রহস্যজনক নয়। এটি একটি পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড। এ ঘটনায় ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার সরকারের দোসর কিংবা ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের হাত থাকার সম্ভাবনা বেশি।

নেতারা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঢাবি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, পহেলা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রা পালনের লক্ষ্যে তৈরি প্রতিকৃতিসহ অন্যান্য জিনিসের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল না। ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর চারুকলার শোভাযাত্রা নিয়ে আগে থেকেই সতর্ক থাকা অত্যাবশ্যক ছিল। অতএব পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করি।

ঢাবি সাদা দলের নেতারা অবিলম্বে চারুকলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

সেই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরো জোরদার করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আহবান জানান।

মন্তব্য

আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট ১৭ ঘণ্টা পর চালু

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট ১৭ ঘণ্টা পর চালু

ভারতের আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় গত শুক্রবার রাতে। এর ১৭ ঘণ্টা পর গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে পুনরায় একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ ছিল ৪৬ মেগাওয়াট। ক্রমান্বয়ে এক ইউনিট থেকে বিদ্যুতের পরিমাণ বাড়বে।

জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে দায়িত্বে থাকা একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কেন্দ্রটির দুটি ইউনিট থেকে গড়ে এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। কারিগরি ত্রুটির কারণে প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়েছে গত মঙ্গলবার। আর দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ হয় গত শুক্রবার রাত ১টার দিকে।

এতে দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ঘাটতি তৈরি হয়। পরে গতকাল সন্ধ্যায় একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে আদানি। 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) মো. জহুরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ত্রুটি দেখা দেওয়ায় আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।  ঘাটতি পূরণে গ্যাস ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বাড়ানো হয়।

জ্বালানির সরবরাহ পেলে চাহিদা মতো উৎপাদন করা যাবে। শনিবার রাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট পুনরায় চালু হয়, আরেকটি ইউনিট ত্রুটি মেরামতের চেষ্টা করছে বলেও তিনি জানান। 

আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম নিয়ে বিরোধ আছে। এটি নিয়ে আদানি ও বিপিডিবির মধ্যে আলোচনা চলছে। বকেয়া শোধ নিয়েও বিভিন্ন সময় তাগাদা দিয়েছে আদানি।

গত বছর একবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করেছিল আদানি। এরপর নিয়মিত চলতি বিল পরিশোধ করায় তারা একটি ইউনিটের উৎপাদন চালু করে। গত ফেব্রুয়ারিতে পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহের অনুরোধ জানায় বিপিডিবি। গত মার্চে শুরু থেকেই দুটি ইউনিটের বিদ্যুৎ সরবরাহ করে তারা।

পিজিসিবি ও বিপিডিবি সূত্র বলছে, গতকাল শনিবার ছুটির দিন থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা অন্য দিনের চেয়ে কিছুটা কম। গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ চাহিদা উঠেছে ১৩ হাজার ৫৫২ মেগাওয়াট। এ সময় ৪২৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ শুরু না হলে আজ রবিবার লোডশেডিং আরো বৃদ্ধি পেত। ঘাটতি মেটাতে পেট্রোবাংলার কাছে বাড়তি গ্যাস সরবরাহও চেয়েছিল বিপিডিবি।

আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার। ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে এই কেন্দ্রে। এতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২৫ বছর ধরে কিনবে বাংলাদেশ। প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় একই বছরের জুনে। ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে বিপিডিবি। আদানির সঙ্গে বিপিডিবির চুক্তি পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত একটি কমিটি কাজ করছে।

মন্তব্য

ইসরায়েল গাজায় এবার পানি-অস্ত্র প্রয়োগ করছে

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
ইসরায়েল গাজায় এবার পানি-অস্ত্র প্রয়োগ করছে

ধরার বুকে নির্মিত জাহান্নাম হিসেবে পরিচিত গাজার মানবিক পরিস্থিতির অবনতি বিশ্বসম্প্রদায়কে ভাবতে বাধ্য করছে। দখলদার ইসরায়েলের বেপরোয়া বিমান হামলা ও ভয়াবহ স্থল হামলায় অবরুদ্ধ গাজাবাসী এখন শুধু খাবারের অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরছে না; অনাহারি গাজাবাসী এক ঢোক সুপেয় জলও এখন পাচ্ছে না।

গাজায় বিশুদ্ধ পানির সবচেয়ে বড় উৎসটি ছিল ইসরায়েলি একটি কম্পানির। গত শুক্রবার কম্পানিটি পানির পাইপলাইন বন্ধ করে দিয়েছে।

ইসরায়েলি নির্বিচার বিমান হামলা ও নির্মম স্থল অভিযানের পর যেসব হতভাগা গাজাবাসী বেঁচে ছিল, তারা এখন এক ফোঁটা সুপেয় পানির জন্য মাইলের পর মাইল চষে বেড়ায়। গাজার এক অবরুদ্ধ নগরীর পৌঢ়া নারী ফাতিন নাসের (৪২) বড়ই আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, সকাল থেকে আমি পানির অপেক্ষায় আছি। কিন্তু সুপের পানির কোনো উৎস বা স্টেশন আর অক্ষত নেই। পানির ট্রাকও চোখে পড়ে না।
কোথাও পানি নেই। এলাকা ত্যাগ করে যে কোথাও যাব, তারও সুযোগ নেই। আল্লাহ যদি যুদ্ধটা থামিয়ে দিতেন। 

ইসরায়েল গত সপ্তাহেই গাজার শিজাইয়া এলাকার সব অধিবাসীকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

কিন্তু তারা কোথায় যাবে, কেমন করে যাবে, সে ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। বাস্তবতা হচ্ছে, এমন কোনো ভূমি বাকি নেই, যেখানে এখন বোমা পড়ছে না। তবে ইসরায়েল বারবার দাবি করছে, তারা কোনো বেসামরিক এলাকায় বোমা ফেলছে না। তারা শুধু সন্ত্রাসীদের অবকাঠামো লক্ষ্য করে বোমা ফেলছে। দখলদার বাহিনী বেছে বেছে উত্তর গাজার সব পানির কূপও ধ্বংস করে ফেলছে।

মিউনিসিপ্যালিটির একজন কর্মকর্তা বলেন, গাজার পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন এবং দিন দিন তা অবনতির দিকেই যাচ্ছে। পানি তো দৈনন্দিন নানা কাজে লাগে। কিন্তু পানি কোথাও মিলছে না। গাজা এখন বিশ্বের এক তৃষ্ণার্ত নগরী। আগামী দিনগুলোতে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা আমরা কেউ জানি না।

গাজার লোকসংখ্যা ২৩ লাখ। কিন্তু যুদ্ধের কারণে বেশির ভাগ অধিবাসী এখন বাস্তুচ্যুত। প্রত্যন্ত এলাকায় এখনো দু-একটি কূপে পানি রয়েছে। কিন্তু সেই কূপে পানির বিশুদ্ধতার কোনোই গ্যারান্টি নেই।

গত শুক্রবার রেড ক্রসের প্রেসিডেন্ট মিরজানা স্পোলজারিক বলেন, গাজার মানবিক পরিস্থিতি পৃথিবীর দোজখে পরিণত হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে অস্থায়ী হাসপাতালগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে। কারণ এরপর গাজাবাসীর রসদ ফুরিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থা রেড ক্রস।

তিনি বলেন, আমরা গাজায় এখন নিজেদের এমন পরিস্থিতিতে দেখছি। যেটিকে আমাকে বলতে হবে পৃথিবীর দোজখ। মানুষ বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ, পানি, খাবার পায় না।

গত ২ মার্চ গাজায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে দখলদার ইসরায়েল। ওই সময় দখলদারদের সঙ্গে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে। ওই দিন থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইসরাইল চুক্তি ভঙ্গ করে। এর কয়েক দিন পর ১৮ মার্চ রাতে গাজায় হঠাৎ তীব্র বিমান হামলা চালায় তারা। এতে এক রাতে চার শরও বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়।

জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এ ছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ভোরে গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের নেতৃত্বাধীন হামলায় ইসরায়েলে অন্তত এক হাজার ১৩৯ জন নিহত হয় এবং দুই শর বেশি মানুষকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে গাজায় ভয়াবহ হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। সূত্র : এএফপি, রয়টার্স

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ