মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলে এবার ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’

  • রমনায় ছায়ানটের মুক্তির গান
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলে এবার ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’

পহেলা বৈশাখের সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে বর্ষবরণের যে শোভাযাত্রা বের হতো, এবার তার নাম বদলে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ। তিনি জানান, গোড়ার দিকে এই শোভাযাত্রা যে নামে চালু হয়েছিল আবারও সেই নামে ফিরে যাচ্ছে। এখন থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে পরিচিত আয়োজনটি বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা নামে উদযাপিত হবে।

চারুকলা ১৯৮৯ সাল থেকে পহেলা বৈশাখে শোভাযাত্রা করে আসছে। শুরুতে নাম ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা। নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে অমঙ্গলকে দূর করে মঙ্গলের আহ্বান জানিয়ে শোভাযাত্রার নামকরণ হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো এটিকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

আগামী সোমবার বাংলা ১৪৩২ সনের পহেলা বৈশাখ। দিনটি উদযাপনের বিভিন্ন দিক জানাতে গতকাল সকালে চারুকলা অনুষদের ওসমান জামাল মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান, প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদযাপনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সদস্যসচিব ও চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ, শোভাযাত্রার উপকমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক এ এ এম কাওসার হাসান, প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ এবং কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি ও বিভিন্ন উপকমিটির সদস্যরা।

অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ বলেন, এবারের বৈশাখ হবে সবার।

আমাদের ভূখণ্ডে বসবাসরত সব জাতিগোষ্ঠী এবারের বৈশাখ বরণের অংশীদারত্ব অর্জন করেছে। পাহাড় থেকে সমতল সবাই একসঙ্গে বর্ষবরণ উদযাপন করব। এবারের আয়োজনের মধ্য দিয়ে একপেশে সংস্কৃতিচর্চার সংকীর্ণতা থেকে বের হয়ে আমরা বাংলাদেশের সংস্কৃতির উদার ও শুদ্ধচর্চার দিকে অগ্রসর হতে পারব বলে আশা করছি।

 

বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় যা যা থাকছে

এ বছর শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য করা হয়েছে নববর্ষে ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান। এই প্রতিপাদ্যে চব্বিশের চেতনা ধারণ করে সমকাল, ইতিহাস, ঐতিহ্যকে মাথায় রেখে এবারের পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, ইসরায়েলের বর্বরতার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে তরমুজের ফালি, শান্তির পায়রা, পালকি, মীর মুগ্ধের স্মৃতিবাহী পানির বোতলশোভাযাত্রায় থাকবে এই সাতটি বড় মোটিফ বা শিল্প-অবকাঠামো। এর বাইরে থাকবে মাঝারি আকৃতির ১০টি সুলতানি আমলের মুখোশ, ২০টি রঙিন চরকি, আটটি তালপাতার সেপাই, পাঁচটি তুহিন পাখি, চারটি পাখা, ২০টি ঘোড়া ও ১০০ ফুট লোকজ চিত্রাবলির ক্যানভাস। ছোট মোটিফের মধ্যে থাকবে ৮০টি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, ২০০টি বাঘের মাথা, ১০টি পলো, ছয়টি মাছ ধরার চাঁই, ২০টি মাথাল, পাঁচটি লাঙল, পাঁচটি মাছের ডোলা। চারুকলা অনুষদের সম্মুখভাগের সীমানাপ্রাচীর ইতিমধ্যে হলুদ রঙের ওপর রাজশাহী অঞ্চলের শখের হাঁড়ির মোটিফে আঁকা হয়েছে ফুল-পাখি, লতা-পাতার দৃশ্য।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাবি প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ জানান, এবারের শোভাযাত্রার সম্মুখভাগে অন্যান্য বছরের মতো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন না। তাঁরা থাকবেন শোভাযাত্রার দুই পাশে। এ কারণে দুই পাশ থেকে শোভাযাত্রায় জনসাধারণকে প্রবেশের চেষ্টা না করার অনুরোধ করেন তিনি। তিনি জানান, শোভাযাত্রাটি সকাল ৯টায় বের হবে চারুকলা অনুষদ থেকে শাহবাগ হয়ে সেটি চলে যাবে টিএসসিতে। রাজু ভাস্কর্যকে ডানে রেখে শোভাযাত্রা এগিয়ে যাবে শহীদ মিনারের দিকে। সেখান থেকে দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনে দিয়ে আবার চারুকলায় এসে শেষ হবে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। বিকেল ৫টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হবে। এরপর শুধু বের হওয়ার পথগুলো ব্যবহার করা যাবে।

 

রমনার বটমূলে ছায়ানট গাইবে মুক্তির গান

বরাবরের মতো রমনা উদ্যানে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করবে ছায়ানট। এবার তারা দুই ঘণ্টাব্যাপী গাইবে মুক্তির গান। ভোরের আলো ফুটতে ফুটতে ভৈরবীতে রাগালাপ দিয়ে হবে ছায়ানটের ১৪৩২ বঙ্গাব্দবরণের সূচনা। এবারের অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে নতুন আলো, প্রকৃতি এবং মানুষকে ভালোবাসবার গান, দেশপ্রেম-মানবপ্রেম আর আত্মবোধন-জাগরণের সুরবাণী দিয়ে। সব মিলিয়ে বাঙালি সমাজকে নিয়ে আলোর পথে মুক্তির পথযাত্রী হওয়ার আহ্বান থাকবে অনুষ্ঠানজুড়ে। 

গতকাল বিকেলে ধানমণ্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা। ছায়ানট এবার ৫৮তমবার বর্ষবরণের এই আয়োজন করছে। ছায়ানটের এবারের আয়োজনের বার্তা, আমার মুক্তি আলোয় আলোয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী, সহসভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল, সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা, যুগ্ম সম্পাদক পার্থ তানভীর নভেদ ও জয়ন্ত রায়।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ছুটির ঘোষণা

শেয়ার
ছুটির ঘোষণা

আজ ১৪ এপ্রিল সোমবার বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কালের কণ্ঠের সব বিভাগ বন্ধ থাকবে। তাই কাল মঙ্গলবার পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। তবে আমাদের অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়া চালু থাকবে। সম্পাদক

মন্তব্য

আধাপাকা ধান কাটার উৎসব

শেয়ার
আধাপাকা ধান কাটার উৎসব
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন হাওরাঞ্চলে চলছে আধাপাকা ধান কাটার উৎসব। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকরা ছুটছেন মাঠে। দাবদাহ উপেক্ষা করে ধান কাটা, মাড়াই ও ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। গতকাল সরাইল থেকে তোলা। ছবি : ফোকাস বাংলা
মন্তব্য

মডেল মেঘনার আটকাদেশ কেন অবৈধ নয় : হাইকোর্ট

    গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না : আইন উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মডেল মেঘনার আটকাদেশ কেন অবৈধ নয় : হাইকোর্ট
মেঘনা আলম

মিস আর্থ বাংলাদেশ বিজয়ী-২০২০ মডেল মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশ কেন অবৈধ নয়, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল রবিবার এ বিষয়ে এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এই আদেশ দেন। অন্যদিকে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইন উপদেষ্টা বলেছেন, মডেল মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না।

আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলেছেন আদালত।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন ও আইনজীবী জাহেদ ইকবাল।

মেঘনা আলমকে ৩০ দিনের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, কেন তাঁকে মুক্তি দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং কেন তাঁকে গ্রেপ্তার ও আটকের প্রক্রিয়াটি অসাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে নারুলে হাইকোর্ট এসব বিষয় জানতে চেয়েছেন।

আদালত স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, পুলিশের আইজি, ডিএমপি কমিশনার, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলেছেন।

এর আগে গত ১০ এপ্রিল আবেদনের ভিত্তিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহ মডেল মেঘনা আলমকে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন।

আদেশে বলা হয়, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২(এফ) ধারার জননিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী ক্ষতিকর কার্য থেকে নিবৃত্ত করার জন্য এবং আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে আবশ্যক অনুভূত হওয়ায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(১) ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে মেঘনা আলমকে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এই আটকাদেশ স্বাক্ষরের তারিখ থেকে ৩০ দিন কারাগারে আটক রাখার আদেশ প্রদান করা হলো। পরে তাঁকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।

 

গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না : আইন উপদেষ্টা

এদিকে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, মডেল মেঘনা আলমকে রাতে যে প্রক্রিয়ায় বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা সঠিক ছিল না।

তিনি বলেন, আমরা স্বীকার করছি, গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি।

গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি মানে উনার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের আলামত বা অভিযোগ নেই, সেটি নয়। সেটির ব্যাপারে করণীয় কী আছে, সে বিষয়ে অচিরেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

 

 

মন্তব্য

জয়নুল আবদিন ফারুকের বক্তব্যের প্রতিবাদ জামায়াতের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জয়নুল আবদিন ফারুকের বক্তব্যের প্রতিবাদ জামায়াতের

জামায়াত নিয়ে বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুকের বক্তব্যকে অসত্য উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। গতকাল রবিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক গত ১০ এপ্রিল একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে জামায়াতে ইসলামী মসজিদে মসজিদে মহিলাগুলোকে একত্র করে বেহেশতের টিকিট দেওয়া শুরু করেছে মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন, আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তাঁর এই বক্তব্যে সত্যের লেশমাত্রও নেই। তাঁর এ বক্তব্য হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

জামায়াতের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়েই তিনি জামায়াতের বিরুদ্ধে আজগুবি, বানোয়াট ও হাস্যকর বক্তব্য দিয়েছেন।

জয়নুল আবদিন ফারুকের মতো একজন ব্যক্তির মুখে এ ধরনের বক্তব্য মানায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতের সমালোচনা করার মতো কোনো কিছু না পেয়ে জয়নুল আবেদিন ফারুক ইসলামের দাওয়াত সম্পর্কে কটাক্ষপূর্ণ হাস্যকর বক্তব্য দিয়ে নিজের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছেন। এভাবে বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা অত্যন্ত হাস্যকর।

বিবৃতিতে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, নিজের অবস্থান ও মর্যাদার কথা চিন্তা করেই জামায়াত সম্পর্কে বানোয়াট ও হাস্যকর মিথ্যা বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য আমি বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুকের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ